ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ছে সুন্দরবন! by জনি হক

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ২০১৯ সালের মনোনীত স্থানগুলোর নাম ঘোষণা করা হলো। পাশাপাশি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত কয়েকটি বিপদাপন্ন জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই আছে বাংলাদেশের সুন্দরবন। এ কারণে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনটি বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এ সপ্তাহে একটি কমিটি ১১ দিনের আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা যেসব জায়গা বিপদাপন্ন সেগুলোর সংরক্ষণের চিত্র ঘেঁটে দেখা হবে। সুন্দরবনকে এখন বন্যপ্রাণীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া এর কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া, বন উজাড়সহ পরিবেশবিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বাদ দিতে পারে।
তবে সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারের কার্যকরি উদ্যোগ থাকলে ও উন্নতি দেখা গেলে ইউনেস্কো বিপদাপন্ন তালিকা থেকে ম্যানগ্রোভ বনটির নাম প্রত্যাহার করতে পারে। তখন তাদের কমিটির ভোটে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় ভালো অবস্থানে ফিরে আসবে।
গত বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর বেলিজ ব্যারিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেমকে বিপদাপন্ন তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজের সরকার প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণে বেসরকারি দলের সঙ্গে কাজ করেছে।
এ বছর ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে যীশুর জন্মস্থান ও তীর্থভূমির গির্জা আর চিলির হাম্বারস্টোন অ্যান্ড সান্তা লরা সল্টপিটার ওয়ার্কস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বিপদাপন্ন তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
সুন্দরবনসহ ২০১৯ সালে বিপদাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা অন্য জায়গাগুলো হলো— বুলগেরিয়ার প্রাচীন শহর নেসেবার, নর্থ মেসেডোনিয়া/আলবেনিয়ার অকরিড অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মেক্সিকোর ক্যালিফোর্নিয়া উপসাগরবর্তী দ্বীপ ও সংরক্ষিত এলাকা, নেপালের কাঠমান্ডু ভ্যালি ও ইরাকের ব্যাবিলন।
তবে নতুন মনোনয়ন তালিকাকে চূড়ান্ত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়া দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। কারণ বিশেষজ্ঞরা এসব জায়গায় সরেজমিন গিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন দেবেন। দর্শনীয় এসব স্থান সংরক্ষণের জন্য কী পদক্ষেপ রয়েছে তা নিরীক্ষা করে দেখবেন তারা। এরপর ইউনেস্কো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছালে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক আইরিনা বোকোভা জানান, ১৯৭৮ সাল থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা তৈরি শুরু করেছে ইউনেস্কো। শুরুর দিকে এতে স্থান পায় যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের তাজমহল, জর্ডানের পেত্রা ও ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপের মতো গন্তব্য। এখন পর্যন্ত ১৬৭টি দেশের ১ হাজার ৯২টি স্থান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ায় এ বছরের জানুয়ারিতে ইউনেস্কো ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী স্থান এই স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের দাবি, ইউনেস্কো ইসরায়েলবিরোধী। এসব কারণে ইসরায়েলও ইউনেস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
সুন্দরবন (ছবি: কাজী আসাদুল্লাহ আল ইমরান)

No comments

Powered by Blogger.