নেপালে শি জিনপিং, সতর্ক দিল্লী by বিশ্বাস বড়াল

ভারত একটা জায়গায় আটকে আছে। নিজেদের ‘ব্যাকইয়ার্ড’ নেপালে তারা অন্য কোন পশ্চিমা শক্তির প্রভাব বাড়তে দিতে চায় না। আবার ভারত এটাও ভাবছে যে, তারা এককভাবে নেপালে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবেলা করতে পারবে না। এ কারণেই তারা ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এর অর্থ হলো এশিয়াতে চীনের উত্থানকে থামিয়ে দিতে চায় তারা। কিন্তু পরে উহান সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছি, সেটার কি হবে, যেটা কি না এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে সঙ্ঘাত কমিয়ে আনতে সাহায্য করেছে?
সিনো-ভারত সম্পর্কের অবস্থা যা-ই হোক, এ অঞ্চলে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে তাদেরকে একে-অপরের সহযোগিতা করতে কমই দেখা গেছে। ভারতের আমলা এবং কৌশলগত চিন্তকরা এখনও এই ধারণা থেকে বের হতে পারেননি যে, দক্ষিণ এশিয়াকে ‘গিলে খাচ্ছে’ চীন। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে স্বাগত জানাতে মোদিকে বেগ পেতে হবে।
তাছাড়া, নয়াদিল্লী এমন ভাবছে বলে মনে হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চীনের চেয়ে দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মানিয়ে চলাটা অনেক সহজ যদিও তাদের উপর সবসময় আস্থা রাখার উপায় নেই। এ কারণেই ভারত যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে কখনই পুরোপুরি জায়গা ছেড়ে দেবে না, তবে তাদের মধ্যে চীন-বিরোধী সহযোগিতা আগামীতে আরও তীব্র হতে পারে।
বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট শি মাস তিনেকের মধ্যে নেপালে আসার পর এটাই হবে বাস্তবতা। চীনারা নেপালের রাজনীতিবিদ ও আমলাদের ধীর গতির কারণে অসন্তুষ্ট, যেটা নেপালে চীনা অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর অগ্রগিত ব্যাহত করছে। তাছাড়া কাঠমাণ্ডুতে রিং রোড সম্প্রসারণের সমালোচনার বিষয়টিও ভালোভাবে নেয়নি চীন। চমৎকার একটা সড়ক বানিয়ে দিয়েছে তারা! নেপালীদের ধন্যবাদ জানাতে এত অনীহা কেন?
কিন্তু চীনের জন্য তাদের কর্তৃত্বের শক্তি দেখানোর সময়ও এসেছে। আমেরিকান ও ভারতীয়দের তারা এটা দেখাতে চায় যে, চীন তাদের কোষাগার খুললে নেপালে তাদের পরিকল্পনাগুলো গতি পাবে। এটা কোন কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিককালে বার বার টুইটে চীন ঋণের ফাঁদের প্রচারণাকে একটা প্রতারণা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ঠিক যেন আমেরিকানদের চুপ রাখার জন্য ওলি সরকার বারবার নেপালের সাথে উত্তর কোরিয়ার অবৈধ ব্যবসায়ের অভিযোগ নাকচ করে দিচ্ছে। আমরিকানরা অবশ্য চাইবে যাতে কাঠমাণ্ডুর উত্তর কোরিয় দূতাবাসটাই বন্ধ করে দেয়া হয়।
শির সফরের পরপরই কি কাঠমাণ্ডুতে চীনা রেলওয়ের বিষয়টি বাস্তবে রূপ নেবে? সে সম্ভাবনা কম। যেহেতু ভারতের বাজারই চীনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, তাই ভারতের দিক থেকে নেপালের রেলওয়ে উত্তর প্রদেশ ও বিহার পর্যন্ত সম্প্রসারণের আশ্বাস পাওয়া না গেলে নেপালে রেলওয়ে বিস্তৃত করে চীনের কোন লাভ হবে না। তাই নেপালে পুরোপুরি অনুদান-ভিত্তিক রেলওয়ে নির্মাণের সম্ভাবনা নেই। তবে শি-এর কাঠমাণ্ডু সফরকালে হয়তো বহু বড় ধরনের দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের ঘোষণা আসতে পারে, যেগুলো চীনের জন্য অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত উভয় সুবিধাই নিয়ে আসবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের নেপাল সফর এবং যে সব প্রকল্প তিনি নিয়ে আসবেন, সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে ভারতীয় ও আমেরিকানদের উদ্বিগ্ন করবে। এখানে পাল্টা পদক্ষেপ আসতে বাধ্য। নেপাল হয়তো একইসাথে বিআরআই এবং ইন্দো-প্রশান্ত ক্লাব – এই দুইয়ের সদস্য হওয়ার উত্তাপটা টের পাবে। আমরা শুধু আশা করতে পারি যে, নেপাল সরকারের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা যেন বোঝেন যে তারা কি করতে যাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.