মহাযুদ্ধের অপেক্ষায় বার্মিংহাম by ইশতিয়াক পারভেজ

ইংল্যান্ডের মধ্যভূমি অনেকটাই ব্যতিক্রম। এখানে নেই সমুদ্র, নেই কোনো পাহাড়। প্রকৃতিও অনেকটাই যেন রুক্ষ। এই এলাকার দখল অনেকটাই এশিয়ানদের হাতে। চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ এখানে পায়ে পায়ে দেখা হয়। ঐতিহ্যের দিক থেকেও ইংল্যান্ডের অন্য শহরের সঙ্গে এটিকে মেলানো যাবেনা। তবে, মধ্যভূমির গর্ব একটি ফুটবল ও অন্যটি ক্রিকেট মাঠ। হ্যাঁ, ‘এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড’ নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের আলাদা টান, আলাদা অনুভূতির জায়গা।
বিশেষ করে ইংলিশরা ছাড়াও আরো দুটি দেশের মানুষ এখন প্রস্তুত এই মাঠে মহাযুদ্ধের জন্য। কাল এখানেই ভারতের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। বলার অপেক্ষা রাখেনা ইংলিশদের টিকে থাকার এই ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সাত ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকলেও তাদের এক পয়েন্ট কম নিয়ে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
শেষ দুই ম্যাচে জিততে না পারলে হয়তো নিজেদের দেশের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে দর্শক হয়েই থাকতে হবে মরগান-বাটলারদের। তবে, এই ম্যাচ জিতলেই ভারত নিশ্চিত করে ফেলবে শেষ চার। এরপরই তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। যদি তার আগে তারা ইংলিশদের হারিয়ে দেয় তাহলে টাইগারদের বিপক্ষে থাকবে হালকা মেজাজে। তা না হলে আরো একটি কঠিন লড়াই। তবে বাংলাদেশের জন্য কিন্তু ভারত মানেই যুদ্ধ। জিতলেই টিকে থাকবে টাইগারদের স্বপ্ন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এজবাস্টন এখন প্রস্তুত এই তিন দলের মহাযুদ্ধের জন্য।
যদি এক কথায় বলা হয়, তাহলে এজবাস্টনেই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ভাগ্য। প্রথম ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নেয়া ইংলিশদের হাতে বাকি মাত্র ২টি ম্যাচ। তাই ভারতের বিপক্ষে তাদের জয়ের বিকল্প নেই। শুধু তাই নয়, শেষ ম্যাচে তাদের কঠিন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড । তাদের প্রতিপক্ষ দুই দলই ১১ পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে পা দিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ জিতে  সেমির পথে এগিয়ে যেতে মরিয়া। দুই দলেরই সংগ্রহ ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট। এই এজবাস্টনেই নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে, বাংলাদেশ দলের জন্য শেষ দুই ম্যাচ জেতার কোনো বিকল্প নেই। এই মাঠে ভারতকে হারাতে পারলেই  বেঁচে থাকবে স্বপ্ন।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই মাঠেই সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। সেবার এখানেই স্বপ্ন শেষ করে দেশে ফিরতে হয়েছিল টাইগারদের। এরপর দুবাইয়ে এশিয়া কাপেও বাংলাদেশকে হতাশ করে ট্রফি জিতে নিয়েছে ভারত। সেই ফাইনালে লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে ভালো অবস্থানে ছিল দল। তবে ১২০ রানের ওপেনিং জুটির পরও ২২২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। যদিও ছোট লক্ষ্য তাড়া করে সেই ম্যাচে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছিল ভারত। শেষ  পর্যন্ত ফাইনালে জিতেছিল মাত্র ৩ উইকেটে। অন্যদিকে, ইল্যান্ডের মাটিতে এই বার্মিংহাম স্টেডিয়ামেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির  সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৬৪ রান করলেও ৯ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় ভারত। দুটি ম্যাচ নিয়ে মাশরাফির আফসোসের শেষ নেই। ভালো অবস্থান থেকে দলের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের দায়িত্বহীনতাই এক পর্যায়ে ডুবিয়েছে দলকে। বার্মিংহামের আড্ডাতে শেষ দুই ম্যাচ নিয়ে টাইগার অধিনায়কের কন্ঠে শুধু আক্ষেপই ঝরেছে।
২রা জুলাই ভারতের বিপক্ষে এই মাঠে নামার আগে তাই টাইগার অধিনায়ক দলের কাছে অন্যরকম আশাই করছেন। এই ম্যাচ জিততে না পারলে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এগিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধই হয়ে যাবে। তাই শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে কেমন উইকেট হবে তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। এখানে ধারণা করা হচ্ছে ব্যবহৃত উইকেটেই খেলা হবে। কারণ এই বিশ্বকাপে এখানে একটি উইকেটে মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড।
কাল আরেকটিতে মুখোমুখি হবে ভারত-ইংল্যান্ড। যদি এখানে তৃতীয় ম্যাচে নতুন কোনো উইকেট ব্যবহার না করে তাহলে আগের দুটির একটি জুটবে বাংলাদেশের জন্য। মাশরাফির ধারণা এখানে রান হয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে এখানে শেষ ম্যাচে যুদ্ধই করতে দেখা গেছে রান তোলার জন্য। এখন দেখার বিষয় ভারত এখানে কী করে। তবে ইতিহাস বলছে এই মাঠে ওয়ানডেতে ৪’শ রানও হয়েছে। তা করেছে ইংলিশরাই। ৩’শ ছাড়ানো ইনিংস আছে ৫টি। এর একটি ভারতের। এই মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১০-এ ইংল্যান্ড করেছিল ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৪৭ রান। জবাবে ২০৩ রানে থেমেছিল বাংলাদেশের ইনিংস।
এজবাস্টনে ২০০৪-এ প্রথমবার খেলে বাংলাদেশ দল। এরপর ২০১৭ পর্যন্ত সবমিলিয়ে  খেলেছে ৩ ম্যাচ। এবার ইতিহাস বদলের অপেক্ষা। মাশরাফির বিশ্বাস, হবে। না, হলে যে তাদের স্বপ্নই মিলিয়ে যাবে মাটিতে! তার জন্য সত্যিই যুদ্ধই করতে হবে ব্যাট-বল হাতে। সেই যুদ্ধের অপেক্ষাতেই এখন বার্মিংহাম থেকে বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.