ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ব্যর্থ

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দশকের পর দশক ধরে যে সংঘাত চলতে সেটি অবসানের লক্ষ্যে দুই বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। সে পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় প্রকাশ করা হচ্ছে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনের মাধ্যমে। এ পরিকল্পনার নাম দেয়া হয়েছে ' শান্তি থেকে সমৃদ্ধি'। ৪০ পৃষ্ঠার এ দলিলটি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউজ।
ফিলিস্তিনী ভূমি এবং প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে পশ্চিম তীর এবং গাজায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এর মূলভিত্তি হবে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সম্মান।
পরিকল্পনার প্রথম অংশে ফিলিস্তিনের অর্থনীতির দিকে নজর দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর চেয়ে জটিল বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জেরার্ড কুশনার এই পরিকল্পনার স্বপ্নদ্রষ্টা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, এ পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনীদের জন্য 'শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সুযোগ' হতে পারে।
হোয়াইট হাউজ যে দলিল প্রকাশ করেছে সেখানে ১৭৯টি প্রজেক্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম তীর এবং গাজা সংযোগকারী মহাসড়ক ও রেলপথ। এ প্রকল্পগুলোর কথা আগেও বলা হয়েছিল।
প্রথম পরিকল্পনায় যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলোর তুলনায় এবারের পরিকল্পনার ভাষা কিছুটা অস্পষ্ট। এ পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দিকটি উপেক্ষা করা হয়েছে।
'দখলদারিত্বের মধ্যে ব্যবসা'
এ পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনদের জন্য আলাদা কোন রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ নেই, যেটি আগের পরিকল্পনায় ছিল। এছাড়া পূর্ব জেরুসালেমে কোন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের কথাও বলা হয়নি। ফিলিস্তিনীরা যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে সেটির ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে তারা পূর্ব জেরুসালেমকে মনে করে।
দখলকৃত এলাকায় ইসরায়েলি জনবসতির কী হবে, ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের ভবিষ্যৎ, উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ এবং নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েলের উদ্বেগের মতো বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
ফলে এ পরিকল্পনা নিয়ে বহু ফিলিস্তিনীদের মনে সন্দেহ আছে।
ফিলিস্তিনী এক ফল বিক্রেতা ইসাম রাবিয়া বলেন, " ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তখন থেকে আমরা দেখছি যে তিনি ফিলিস্তিনের অর্থনীতির জন্য কিছুই করেননি।"
তিনি অভিযোগ করেন যে একদিকে পানির স্বল্পতা এবং অন্যদিকে বসতি বৃদ্ধির কারণে তার পক্ষে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা বেশ কঠিন হয়ে গেছে।
ইসাম রাবিয়া বলেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনীদের দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিবর্তন আনবে না।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ফিলিস্তিনীদের ভূমিতে ইহুদি বসতি নির্মাণ অবৈধ। কিন্তু এ বিষয়টির সাথে একমত নয় ইসরায়েল।
রামাল্লার একজন ব্যবসায়ী বলেন, " এখানে ব্যবসা করা পৃথিবীর অন্য জায়গার মতো নয়। আমরা দখলদারিত্বের মধ্যে বসবাস করে ব্যবসা করছি।"
তিনি মনে করেন, বাহির থেকে সাহায্য কিংবা বিনিয়োগ না করেও অনেক কিছু করা যেত। ফিলিস্তিনীদের উপর ইসরায়েল যেভাবে অবরোধ দিয়েছে সেটি শিথিল করা গেলে অনেক উপকার হতো।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে পণ্য আমদানি করেতে দেরি হয় রামাল্লার ফিলিস্তিনী ব্যবসায়ীদের।
ফিলিস্তিনীদের বয়কট
ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ফিলিস্তিনী নেতারা এ পরিকল্পনাকে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তাঁর রামাল্লা সদরদপ্তরে বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সেখানে তিনে বলেন, " ঠিকা আছে, আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য দরকার, টাকা এবং সহায়তা দরকার। কিন্তু সবকিছুর আগে আমাদের প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সমাধানের।"
বাহরাইনে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বহু আরব দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে। কিন্তু সেখানে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলে কেউ উপস্থিত থাকবে না। ফিলিস্তিনীরা এ সম্মেলন বয়কট করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েলকে আমন্ত্রণ না জানানোর। যেহেতু ফিলিস্তিনীরা যোগ দিচ্ছে না সেজন্য ইসরায়েলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ফিলিস্তিনীরা বলছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি থেকে তারা কখনোই সরে আসবে না।

No comments

Powered by Blogger.