যে কারণে দ্রুত বিয়ে করলেন তাসকিন

বিয়েবাড়ি বলতে যা বোঝায়, সেটির কমই টের পাওয়া গেল মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে তাসকিন আহমেদের বাড়িতে। তবে পরিবারে নতুন এক সদস্য যে যোগ হয়েছেন, সেটি কাল বিকেলে বাড়ির দরজার চৌকাঠে পা রাখতেই বোঝা গেল। তাসকিনের বাবা আবদুর রশিদ ও মা সাবিনা ইয়াসমিনের মাঝে লক্ষ্মীমন্ত হয়ে যিনি বসে আছেন, তিনি রাবেয়া নাঈমা। যাঁর সঙ্গে পরশু রাতে গাঁটছড়া বেঁধেছেন তাসকিন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে পরশু সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন তাসকিন। বাসায় ফিরেই একটা লম্বা ঘুম। ‘ওঠ বাবা, কাজটা শেষ করে আসি’—আবদুর রশিদের ডাকে ঘুম ভাঙে বিকেলে। তারপর? তাসকিন মজা করে বলেন, বাকিটা ইতিহাস! গায়েহলুদ, আংটি বদল, বিয়ে—আকস্মিকভাবেই ঘটে গেছে সবকিছু। ঝটপট করতে হচ্ছে বলেই মোহাম্মদপুরের হোয়াইট প্যালেস কনভেনশন হলে আয়োজনটাও হয়েছে ছোট পরিসরে। জাতীয় দলের সতীর্থদের মধ্যে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। বিয়েতে মাশরাফি হয়েছেন তাসকিনের উকিল বাবা!
খবরটা শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দ্রুত সেটি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। হুট করে কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেটির কিছু যুক্তি দিলেন আবদুর রশিদ, ‘তাসকিনকে যারা কাছ থেকে চেনে, তাদের কাছে কিন্তু বিয়েটা মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। আর আমরা কিন্তু বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা এখনো শেষ করিনি। মাত্র কাবিন হয়েছে, যেটা সারতে চেয়েছিলাম গত আগস্টেই। কিন্তু ওর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তখন সেটি হয়নি। এ মাসেই আমরা ইকবাল রোডের নতুন ফ্ল্যাটে উঠব। সেখানে ওঠার আগেই চেয়েছি আয়োজনটা সেরে ফেলতে।’
সাত বছরের প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি পেল এ বিয়েতে। কিন্তু শত তরুণীর হৃদয় যে ভেঙে গেল, সেটির কী হবে? তাসকিন কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সলাজ হাসিতে নাঈমার রসিকতা, ‘একটা বন্ধন গড়তে হলে কিছু হৃদয় তো ভাঙবেই! নিয়তি এই বাঁধন যাঁর সঙ্গে লিখে রেখেছে, সেটিই হবে।’
দুজনের বেড়ে ওঠা একই এলাকায়। প্রথম পরিচয় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে। তাসকিনই প্রথমে প্রেমে পড়েছিলেন নাঈমার। তবে শুরুতে বাংলাদেশ দলের সুদর্শন পেসার নাকি পাত্তাই পাননি নাঈমার কাছে! দুই মেরুর দুটি মানুষ কীভাবে এক বিন্দুতে মিলেছেন, হেমন্তের বিকেলে গল্পটা শোনালেন নাঈমা, ‘চারিত্রিক দিক দিয়ে দুজন দুই রকম ছিলাম। একবার ওর ছোট বোন প্রিয়ন্তির জন্মদিন বেশ ঘটা করে পালন করা হলো। জন্মদিনের অনুষ্ঠানেই আসলে আমাদের দুজনের রাস্তাটা এক হয়ে গেল। প্রেম করতে গেলে সাধারণত নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে যেতে হয়। আমাদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। দুই পরিবারই সব জানত। আমরা অনেক সৌভাগ্যবান বলতে পারেন।’
জীবনের নতুন পর্বে পা রেখে তাসকিনের অনুভূতি কী, সেটি তাঁর হাসিমাখা মুখাবয়বই বলে দেয়। কিন্তু এই আনন্দক্ষণেও তাঁর ভাবনায় চলে আসে দুঃস্বপ্নের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, ‘আমরা যখন ভালো করি, তখন মানুষ আমাদের মাথায় তুলে নেয়। আবার খারাপ করলেই গালমন্দ করে। কিন্তু খেলাই তো জীবন নয়। জীবনের অংশ মাত্র। ব্যর্থতা ভুলে মানসিক প্রশান্তি পেতে, নিজেকে নতুন করে এগিয়ে নেওয়ার প্রেরণা খুঁজতে, জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে এই সিদ্ধান্ত।’
আপাতত বিপিএল নিয়ে তাসকিনের ব্যস্ততা থাকায় মধুচন্দ্রিমায় যাওয়া হচ্ছে না নবদম্পতির। তবে পরিবার নিয়ে আগামী মাসে মালদ্বীপে ঘুরে আসার পরিকল্পনা আছে দুজনের।

No comments

Powered by Blogger.