সম্পর্ক এগিয়ে নিতে উদ্যোগী বাংলাদেশ-মোদি ও রাজনাথকে শেখ হাসিনার চিঠি by রাহীদ এজাজ

গত শুক্রবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল বিজয়ের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেলে দুপুরেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি ও দলের সভাপতি রাজনাথ সিংকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠান শেখ হাসিনা। দুই চিঠির মূল বক্তব্য ছিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করা। ঢাকার উচ্চপর্যায়ের সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরেই ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। একই দিন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংকেও চিঠি পাঠান। দুই চিঠিতেই নির্বাচনে জয়লাভের জন্য বিজেপি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। তিনি তাঁদের দুজনকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানান, ভারতের চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২১ মে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি সম্প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
হাসিনার চিঠি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রার্থী ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। বিজেপির বিজয়ে মোদিকে লেখা চিঠিতে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিষয়টি উল্লেখ করে ভবিষ্যতে সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আসার পর আপনার মনে হবে নিজের দ্বিতীয় বাড়িতে এসেছেন।’ বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বিদেশ সফর শুরুর জন্য নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা।
রাজনাথ সিংয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে শেখ হাসিনা দুই দেশের কয়েক যুগের সম্পর্ক এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। বিজেপি পরিচালনায় রাজনাথের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করেন তিনি। শেখ হাসিনার মতে, নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দুই দলের সামনে সুযোগ এসেছে। গত পাঁচ বছরের মতো আগামী দিনগুলোতেও এ সুযোগ কাজে লাগাতে দুই পক্ষ সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি সুবিধাজনক সময়ে বিজেপি সভাপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
গুরুত্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের: ঢাকা ও দিল্লির কূটনীতিকেরা জানান, বিদ্যমান সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তাঁরা কাজ করছেন। দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এগিয়ে নিতে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের সম্পর্কটা কখনো কখনো আনুষ্ঠানিকতাও ছাড়িয়ে গেছে। অতীতে এ দুই দল ক্ষমতায় থাকাকালীন সম্পর্ক বিশেষ পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। তাই ভারতের নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে, তা নিয়ে এখানে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়কে বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজেপির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদির প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সরকারের নির্দেশে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম গত বছরের জুলাইয়ে গুজরাটে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
দিল্লির একটি কূটনৈতিক সূত্র গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে পরামর্শ রেখে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রস্তাব রেখে যাচ্ছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে দূরত্ব বা অস্বস্তি তৈরি করবে—এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে আগামী সরকারের কাছে বিদায়ী সরকারের প্রস্তাব থাকবে। রীতি অনুযায়ী, ভারতের বিদায়ী সরকার এ ধরনের কাজটি করে থাকে বলে মন্তব্য করেন দিল্লির ওই কূটনীতিক।
ঢাকায় ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক সম্প্রতি বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছে বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লির এ মনোভাবের কথা জানান। ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপচারিতার উল্লেখ করে ওই সরকারি কর্মকর্তা গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান, বিশেষ করে নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঢাকার সঙ্গে বর্তমান উষ্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী থাকবে দিল্লি। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বিষয়েও ভারতের আগ্রহ অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর মত।

No comments

Powered by Blogger.