ভাড়াটে মানুষের দেশ

কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ‘ভাড়া খাটছে ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাঁ টাকার বিনিময়ে অপহরণ করে মানুষকে বন্দী রাখছেন খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর মানুষ হত্যার কাজে ভাড়া খাটেন র‌্যাবের কোনো কোনো সদস্য, এমন সাক্ষ্য-আলামত পাওয়া গেছে। অভিযোগমতে, এসব হীন অপরাধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সরকারি গাড়ি, কার‌্যালয়, নৌকা এমনকি সরকারি রশি! ছাত্রসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ, ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জ্বলন্ত মশাল।
র‌্যাব অপরাধ দমনে গঠিত বিশেষায়িত বাহিনী। এদের কেউ কেউ যদি অপরাধ করার কাজে ভাড়া খাটে, তাঁহলে আমাদের খুব বিচলিত হওয়া উচিত। কিন্তু আসলেই কি খুব বিচলিত আমরা সবাই? নারায়ণগঞ্জে সাতটি লাশ একসঙ্গে ভেসে উঠে আমাদের চেতনায় আছড়ে না পড়লে কিংবা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিহত নজরুলের শ্বশুর মুখ না খুললে র‌্যাবের ভাড়া খাটা নিয়ে এতটা বিচলিত কি হতাঁম আমরা? এ ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ ভাড়ায় অপহরণ না করলে আদৌ কি এভাবে আলোচিত হতো বিষয়টি?আমার ধারণা, এসব কিছুই হতো না। হতো না যে তাঁর একটা কারণ সম্ভবত কোনো না কোনোভাবে ভাড়া খাটতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা অনেকে। অপহরণ, খুন বা গুম সরাসরি করি না আমরা অনেকেই, দুর্নীতিতেই সরাসরি অংশগ্রহণ নেই অনেকের। কিন্তু এসব অপরাধ এবং আরও অনেক অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে, ধামাচাপা দিয়ে, লঘু করে দেখিয়ে কিংবা নানাভাবে তাঁকে উৎসাহিত করে থাকি আমরা অনেকেই। আর তাঁ যদি হয় কোনো পদ-পদবি, খেতাঁব, ব্যবসা, লাইসেন্স, প্রভাব-প্রতিপত্তির লোভে; তাঁহলে আমরাও কি অনেকে ভাড়া খাটি না ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে! ভাড়াটে লোকের সংখ্যা বাড়ছে দেশে।
বিবেক-বুদ্ধি-নৈতিকতাঁ বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে ভাড়া খাটা লোক আমাদের চারপাশে অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে বলে নারায়ণগঞ্জের মতো ঘটনা ঘটছে। নারায়ণগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটার পর তাঁর বিচার হবে কি না, তাঁর বিচার করার মতো সদিচ্ছা বা সামর্থ্য এই রাষ্ট্রের আছে কি না, তাঁ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের অনেকের বিবেক প্রজ্বলিত হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়েও তাঁ-ই হয়েছিল। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন যে সাংবাদিক নেতাঁ, তিনি পরে উচ্চপদ আর নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। তাঁর উচ্চকণ্ঠ থেমে গেছে। তাঁর প্রজাতির আরও অনেকের কণ্ঠের তেজ কমেছে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে। আগের আমল খুঁজলে ঠিক এমন না হলেও কাছাকাছি ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড যদি ধামাচাপা দেওয়া যায়, সাত খুনের মামলাকেও একদিন ধামাচাপা দেওয়া যাবে। অন্তত অনেকের আশঙ্কা এমনই। এই ধামাচাপা দেওয়ার কাজে ভাড়া খাটা লোকের অভাব হবে না। এ কাজে যে ভাড়াটেরা প্রকাশ্যে বা গোপনে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তিনি বা তাঁরা পুরস্কৃত হবেন। নতুন অঘটন, নতুন চাঞ্চল্য, নতুন উত্তেজনা, নতুন বিতর্কে

No comments

Powered by Blogger.