ইডেনে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল জামায়াতের ছাত্রী ক্যাডারর by শংকর কুমার দে

 জামায়াত-শিবিরের ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নেতৃত্বে ইডেন কলেজে গড়ে তোলা হয়েছে মহিলা জঙ্গী ঘাঁটি। ছাত্রী হোস্টেলে পড়াশোনার নামে ধর্মের নামে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার আর জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে জঙ্গী হওয়ার বয়ান করা হতো।
বয়ানে বেহেশত লাভ করা যাবে এমন প্রলোভন দিয়ে ছাত্রীদের মগজ ধোলাই হচ্ছিল। পুলিশী অভিযানে জামায়াতের নিজামী-সাঈদীর বই থেকে তরজমা ও বয়ানে সরকারের বিরম্নদ্ধে জিহাদ ও জঙ্গী তৎপরতার জন্য উস্কানি, সাধারণ ছাত্রীদের ওপর হামলা ও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা অাঁটছিল ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। জামায়াত-শিবিরের ছাত্রী ক্যাডারদের এই তৎপরতার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার পুলিশী অভিযান চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা ও পুলিশী তদনত্ম ও শুরম্ন করেছে।
জোট সরকারের আমল থেকেই জামায়াত-শিবিরের দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছে ইডেন কলেজে। ইডেন কলেজের ৫ ছাত্রীবাস থেকে উদ্ধার করা ৬ বসত্মা জিহাদী বইয়ের মধ্যে আছে জামায়াতের নিজামী-সাঈদীর লেখা বই। ইডেন ছাত্রাবাসে প্রচার করা হতো মওদুদীবাদ। জামায়াত_শিবিরের ছাত্রী ক্যাডার কারা তা রহস্যজনক কারণে চেপে যাওয়া হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে কিভাবে মওদুদীবাদ প্রচার করার পরও তা গোপন রয়ে গেছে, তার কারণও অজ্ঞাত।
ইডেন কলেজে ধর্মের নামে জামায়াত-শিবিরের দুর্গ গড়ে তোলার সন্দেহে ৬ ছাত্রীকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আটক ছাত্রীদের মধ্যে ছিল ৪ সহোদর বোন। তাদের পিতাকে খবর দেয়া হয়। পিতা ইডেন কলেজে আসার পর তাদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তাদের পিতা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মসজিদের মোয়াজ্জেম। পিতার কাছে ৪ সহোদর বোনকে ছেড়ে দেয়া হয়। এই ৪ সহোদর বোনের মধ্যে দুই বোন ইডেন কলেজের ছাত্রী। অপর দুই বোন এসেছিল দুই বোনের কাছে বেড়াতে। পরে পিতার জিম্মায় চলে গেছে ৪ বোন।
খোদেজা খাতুন হোস্টেল, রাজিয়া বেগম হোস্টেল, জেবুন্নেসা হোস্টেল, হাসনা বেগম হোস্টেল, আয়শা সিদ্দিকা হোস্টেল_ ইডেন কলেজের ৫ ছাত্রী হোস্টেলে অভিযান চালিয়ে ৬ বসত্মা জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা বইয়ের সিজার লিস্টে দেখা গেছে, উদ্ধারকৃত বই হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের মওদুদীবাদী মতাদর্শের। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর লেখা বই রয়েছে। উদ্ধারকৃত বইয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার উলেস্নখ আছে। এসব বইয়ের লেখায় দেখা গেছে, ২০০১ সালের পর থেকে ইডেন কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের মসজিদ রম্নমে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ক্যাডাররা তরজমা, জিহাদে উস্কানি দিত।
বছরের পর বছর ধরে ইডেন কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে জামায়াত-শিবিরের দুর্গ গড়ে তোলার তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও ইডেন কলেজ কর্তৃপৰ ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত টেলিফোনে কলেজ কর্তৃপৰকে খবর দেয়া হয় যে, ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ক্যাডাররা সাধারণ ছাত্রীদের ওপর হামলা ও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় টেলিফোনে। লালবাগ থানার পুলিশকে খবর দেয়া হলে ইডেন কলেজের ৫ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, পুলিশ ও গোয়েন্দা তদনত্মে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে ইডেন কলেজের ৫ ছাত্রী হোস্টেলে ধর্মের নামে জিহাদ ও সরকারের বিরম্নদ্ধে উস্কানির তৎপরতা চালানো হচ্ছে। অথচ বৃহস্পতিবার অভিযানে কোন ছাত্রী ক্যাডারকে শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি। ইডেন কলেজ কর্তৃপৰের মধ্যেই জামায়াত-শিবির লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণেই কোন ছাত্রী বা শিৰিকাকে শনাক্ত না করে ঘটনাটি অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মোঃ মনিরম্নল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইডেন কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে জিহাদী বই উদ্ধার, জিহাদী তৎপরতা, সরকারের বিরম্নদ্ধে উস্কানিসহ অপ্রীতিকর ঘটনা কারা ঘটাতে চেয়েছে সেই ব্যাপারে তদনত্ম করে দেখা হচ্ছে।
লালবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, শুক্রবার পর্যনত্ম ইডেন কলেজের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার কিংবা শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি। ইডেন কলেজের উদ্ধারকৃত জিহাদী বইয়ের সিজারলিস্টে দেখা গেছে, জামায়াতের নিজামী, সাঈদীর লেখা বইও আছে। মওদুদী মতাদর্শের জিহাদী বই ছাড়াও জিহাদী বইগুলো উদ্ধার করার পর দেখা গেছে, জোট সরকারের আমলে এসব বই ইডেন কলেজ ছাত্রী হোস্টেল আনা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.