মমতা আমার দেখা নিকৃষ্টতম রাজনীতিকঃ কবীর সুমন by হাসান শাহরিয়ার হৃদয়

কবীর সুমন। শিল্পী থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া এক মানুষ। ৬৪ চলছে, বয়স এখনও কোনো ছাপ ফেলেনি তার ওপর। সম্প্রতি দ্য উইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অবলীলায় বলে গেলেন সমকালীন রাজনীতি,
পশ্চিমঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিয়ে তার মনোভাব। কলকাতার যাদবপুরের তৃণমূল কংগ্রেস এমপি সুমন আরও জানালেন, দীর্ঘ ২২ বছরের ক্যারিয়ারের পর এবার স্টেজ থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।
সে সাক্ষাৎকারেরই একটি আকর্ষণীয় অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: আপনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েই দ্রুত একটি নির্বাচনে জয়ী হলেন। কেমন যাচ্ছে এখন রাজনৈতিক জীবন?

কবীর সুমন: আমার আর কোনো রাজনৈতিক উচ্চাশা নেই। সম্ভবত আমার রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়েছে।

প্রশ্ন: রাজনীতি নিয়ে আপনার এই হতাশার কারণ?

কবীর সুমন: রাজনীতিতে এসে আমি সব আশা হারিয়েছি। আজকের রাজনীতি মানুষের মঙ্গলের জন্য নয়। আমি আর কখনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না।

প্রশ্ন: মমতা ব্যানার্জি একসময় আপনাকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আপনিই তার কাছ থেকে দূরে সরে এসেছেন।

কবীর সুমন: তিনি আমার দেখা নিকৃষ্টতম রাজনীতিক। তিনি মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন। মানুষকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর ওয়াদা পূরণ তো দূরের কথা, মমতা মানুষের জন্য কাজ করার কোনো চেষ্টাই করেননি। তার শাসনকে বাংলার মানুষের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন বলা যায়।

প্রশ্ন: এর আগে তো আপনি বলেছিলেন, তিনি আপনার দেখা সেরা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন।

কবীর সুমন: সেটা ছিল আমার সবচেয়ে ভুল ধারণা। আমি কখনও কল্পনাও করিনি তিনি আজকের অবস্থায় আসতে পারেন।

প্রশ্ন: সিপিএম নেতা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লাকে যখন মারধোর করা হলো, তখন আপনি তাকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন। এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছিল কি?

কবীর সুমন: এখানে রাজনীতির কিছু নেই। আমি দেখতে গিয়েছি কারণ তাকে আমার নির্বাচনী এলাকায় মারধোর করা হয়েছিল। আর, রাজ্জাকদাকেও আমি অনেক শ্রদ্ধা করি। তিনি এখন খাঁটি মানুষ, জনগণের কাছাকাছি থাকেন। আজকের দিনে তার মতো রাজনীতিক পাওয়া দুর্লভ।

প্রশ্ন: কবীর সুমনের কি অদূর ভবিষ্যতে বামে সমর্থন করার সম্ভাবনা আছে?

কবীর সুমন: যদি তাদের ভালো পরিকল্পনা থাকে, কেন নয়? তরুণ বয়সে আমিও বামমনা ছিলাম। আমি সিপিএমের বিরোধীতা করে তখনই মমতার সঙ্গে যোগ দিলাম, যখন তারা (সিপিএম) মানুষের ওপর নির্যাতন শুরু করলো। অথচ আজকে আমি দেখতে পাই, মমতার সরকারই ব্যর্থতার দিক দিয়ে আগের সব সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্রশ্ন: আপনার সংগীত জীবনের কি অবস্থা? এখন তো আগের চেয়ে অনেক কম স্টেজ শো করছেন।

কবীর সুমন: হ্যাঁ। খুব শিগগিরই স্টেজ শো-ও বন্ধ করে দেবো। স্টেজ আর আমাকে আকর্ষণ করে না, কারণ সেখানে আর কোনো বুঝদার শ্রোতা নেই। এছাড়া পুরনো গান গাইতে আর ভালোও লাগে না। শরীরও তেমন ভালো নেই।

প্রশ্ন: তাহলে বাংলার মানুষ কবীর সুমনের গান থেকে চিরজীবনের মতো বঞ্চিত হচ্ছে?

কবীর সুমন: না। তারা অনলাইনে আমার গান পাবেন। গান ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমার মনে হয়,রাজনীতির চেয়ে সংগীতে সময় দেওয়াই বেশি ভালো। আমার মূল্যবান রাজনীতিকে দিয়ে নষ্ট করতে চাই না।

প্রশ্ন: কেন বলছেন যে স্টেজ আপনাকে আর আকৃষ্ট করেন না? বাঙালীর গানের রুচিতে কি কোনো বড় পরিবর্তন এসেছে?

কবীর সুমন: আমি সবাইকে এক কাতারে ফেলবো না। কিন্তু গান বোঝে, এমন সংগীতপ্রেমীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। স্টেজ শিল্পীরা সবসময় মেধাবী ও বুঝদার সত্যিকারের সংগীতপ্রেমী খোঁজেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন শ্রোতা এখন আর নেই বললেই চলে। তাছাড়া, আমারও বয়স হয়েছে। এখন তো ৬৪ চলছে।

প্রশ্ন: আপনি কি তাহলে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিদায় জানাচ্ছেন?

কবীর সুমন: হ্যাঁ, অন্তত স্টেজ থেকে। কিন্তু ক্ল্যাসিকাল মিউজিক আমি চালিয়ে যাবো, যা শৈশবেই শিখেছি। যদি মানুষ চায় আমি ক্ল্যাসিক্যাল ও খেয়াল চালিয়ে যাবো, আমি তাদের নিরাশ করবো না। তবে হ্যাঁ, আমি ধীরে ধীরে আধুনিক বাংলা সংগীত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবো।

No comments

Powered by Blogger.