শিশুরাই পরিচালক-বিচারক by পাভেল মহিতুল আলম

উৎসব প্রাঙ্গণে ঢুকতেই অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন সবাই। গেটের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি গরু! কিন্তু শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে গরু কেন? ভুল করে গরুর হাটে চলে এল না তো সবাই? প্রত্যেকেই যখন গরুটার একটু কাছে যেতে লাগল, তখনই দেখতে পেল গরুর গায়ে রঙিন পোস্টার।
পোস্টারে বড় করে লেখা, ‘হাম্বা—এ ফিল্ম বাই আবু সাঈদ নিশান’। গরুকে ঘিরে তখন দর্শক, সাংবাদিক, অভিভাবকদের ব্যাপক ভিড়। গরুটিই তখন তারকা! আর গরুটিও ‘হাম্বা হাম্বা’ ডেকে যেন স্বাগত জানাচ্ছিল উৎসবে আসা সবাইকে। কিন্তু এ গরু এখানে এল কোথা থেকে? গরুর গায়ে লেখা নাম যার, সেই আবু সাঈদ নিশান জানাল, এটি তার বানানো চলচ্চিত্র হাম্বার প্রচারণার অংশ।
ঘটনাটি ঘটে ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী দিনে। পরদিন প্রদর্শিত হয় নিশানের হাম্বা ছবিটি।
শুধু নিশানই নয়, তার মতো মোট ৬০ জন শিশু এবারের উৎসবে এসেছে ছবি বানিয়ে। বিশ্বের ৪২টি দেশের দুই শতাধিক ছবির সঙ্গে সেই ছবিগুলোও প্রদর্শিত হচ্ছে উৎসবে। প্রতিযোগিতা বিভাগের এই ছবিগুলোর মধ্যে সেরা পাঁচটি পাবে পুরস্কার। সেরা ছবিগুলো নির্ধারণ করার জন্য আছে পাঁচ সদস্যের একটি জুরিবোর্ড। জুরিবোর্ডে থাকা এই বিচারকদের বয়সও ১৮ বছরের কম।
এত বড় একটি উৎসবে বড় পর্দায় বানানো নিজের ছবি দেখতে পেয়ে শিশুরা খুবই আনন্দিত। রাজবাড়ী থেকে আসা সজীব জানায়, শুধু ভালো লাগাই না, উৎসব থেকে সে শিখতেও পারছে অনেক কিছু। বিশেষ করে কানাডীয় নির্মাতা ন্যান্সি ট্রিটস বটকিন ও মার্ক শেকটারের ‘চলচ্চিত্রে গল্প বলা’ শীর্ষক কর্মশালাটি ছিল অসাধারণ। আরেক শিশু নির্মাতা আবরার জানায়, নিজের ছবি প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি বড় বড় পরিচালক, লেখক ও অভিনয়শিল্পীর সান্নিধ্যে আসতে পারাটা সে খুব উপভোগ করছে।
শিশুদের বানানো ছবিগুলো দেখে বেশ প্রশংসা করছেন আমন্ত্রিত দেশ ও বিদেশের অতিথি, দর্শক ও শিশুরা। কানাডা থেকে আগত দুই প্রতিনিধি ন্যান্সি ও শেকটার শিশুদের নির্মিত ছবিগুলো দেখে রীতিমতো বিস্মিত। তারা বলে, কানাডাতে যদি কোনো শিশুকে জিজ্ঞেস করা হয়, সে দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত কি না, তাহলে তারা বেশির ভাগ সময়ই তা হেসে উড়িয়ে দেবে। কিন্তু বাংলাদেশি শিশুদের বানানো অনেক ছবিতেই দেশপ্রেমটা মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া তাদের ছবিতে পেশাদারির ছোঁয়াও রয়েছে। আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তারা খুব সৃজনশীল চিন্তাধারার এবং তাদের ছবি অনেক বেশি জীবনমুখী। ন্যান্সি ও শেকটারের সঙ্গে একমত শিশু বিচারকেরাও। তাদের একজন শময়িতা শিশুদের বানানো ছবিগুলো সম্পর্কে জানায়, প্রথমবারের মতো বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সে খুবই উল্লসিত। তবে সেরা ছবি বিচারের জন্য তাদের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে। আর এই সতর্কতা আরও বেড়ে গেছে। কারণ, ছবিগুলোর কোনোটিই একটি অন্যটির চেয়ে কোনো অংশে কম ভালো নয়।
আজ উৎসবের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে সেরা পাঁচ ছবিসহ দর্শকভোটে নির্বাচিত সেরা ছবির পুরস্কারও ঘোষণা করা হবে। এর আগে দুপুরে প্রখ্যাত লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিশুদের সঙ্গে আড্ডা দেবেন। এ ছাড়া বেলা ১১টা ও দুপুর দুইটায় প্রদর্শিত হবে জার্মানির প্রিঁ জুঁনেস স্যুটকেস এবং রাশিয়ান চলচ্চিত্র অ্যামবিশাস ও বেলজিয়ামের দ্য কিড উইদ এ বাইক।

No comments

Powered by Blogger.