নারী নির্যাতন-মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষিত

ঢাকা-আরিচা সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গার্মেন্টকর্মী। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বাসের চালক দিপু মিয়া ও হেলপার কাশেমকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের শিকার ওই গার্মেন্টকর্মীকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার তরুণীর উদ্ধৃতি দিয়ে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের এএসপি কামরুল ইসলাম জানান, ওই তরুণী সাভারে একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি পাটুরিয়া যাওয়ার উদ্দেশে নবীনগর থেকে শুভযাত্রা পরিবহন নামে একটি বাসে ওঠেন। শুভযাত্রা পরিবহন মূলত ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত করে। কিন্তু ওই তরুণী পাটুরিয়া যাওয়ার জন্য ভুল করে ওই বাসে উঠে পড়েন। এক পর্যায়ে বাসটি মানিকগঞ্জ পৌঁছালে সব যাত্রী বাস থেকে নেমে পড়ে; কিন্তু বাসের হেলপার কাশেম ওই তরুণীকে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পাটুরিয়ার দিকে রওনা দেয়। পথিমধ্যে চলন্ত গাড়িতে হেলপার কাশেম তাঁকে ধর্ষণ করে। পর্যায়ক্রমে ড্রাইভারও ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে ওই তরুণী জানান। এক পর্যায়ে তাঁকে ঢাকা-আরিচা সড়কের মানরা ব্রিজের কাছে নামিয়ে দেয়। তাঁর কান্নাকাটি দেখে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে। তাঁর কাছে এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় বাস শ্রমিকরা ওই বাসের ড্রাইভার দিপু মিয়াকে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে বাসের হকার হান্নান মিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি ঢাকা-আরিচা সড়কের পল্লীবিদ্যুৎ স্পিডব্রেকারের কাছে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাস গতি কমিয়ে স্পিডব্রেকার অতিক্রমের চেষ্টা করে। তখন তিনি দেখতে পান, বাসের ভেতর ওই তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলছে। তবে তাঁকে দেখে গাড়ির ড্রাইভার দ্রুতগতিতে ঢাকা-আরিচা সড়কের তরা ব্রিজের দিকে চলে যায়।
হান্নান মিয়া আরো জানান, পেছনের একটি বাসে উঠে তিনি যখন তরা ব্রিজের কাছে পৌঁছেন, তখন ওই বাসটিকে আবার ফিরে আসতে দেখেন। এরপর তিনি আবারও ফিরতি বাসে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসতে থাকেন। মানরা ব্রিজের কাছে তিনি ওই তরুণীকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে আরো কয়েকজন মিলে তাঁকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড বাস মালিক সমিতির অফিসে পৌঁছে দেন।
মানিকগঞ্জ শুভযাত্রা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মতিন মোল্লা বলেন, 'ওই তরুণীর বর্ণনা অনুযায়ী আমরা সঙ্গে সঙ্গে দিপু মিয়াকে গাড়িসহ ধরে আনি। পরে পুলিশের হাতে তুলে দিই। এ বিষয়ে গাড়ির মালিক আবদুল মান্নানকেও খবর দেওয়া হয়েছে।'
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, মহিলা পুলিশকে দিয়ে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ওই তরুণীকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবদুল মালেক জানান, তরুণীটির মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সোসাল অ্যাডভান্স কমিটির (স্যাক) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট দীপক বলেন, 'এ ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি জানাই। মেয়েটিকে আইনগত সব সহযোগিতা আমার সংস্থা থেকে করা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.