ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও শিবিরের প্রচার সম্পাদককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ সংঘর্ষ

সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
এ দিকে শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহইয়াকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা  দেশে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আরামবাগে শিবিরের মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে টিয়ার শেল  ছোড়ে। এতে অনেকে আহত হন এবং ১০ জনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে শিবির।

উল্লেখ্য, শিবিরের প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহইয়া গত বুধবার রাতে সিলেট যাওয়ার পথে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে বথাস থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে শিবির দাবি করেছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

শিবির নেতা ইয়াহইয়াকে চলন্ত গাড়ি থেকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় পল্টন মোড়ে একটি বিােভ মিছিল করে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠন সূত্র জানায়, মিছিলটি পল্টন মোড় হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত যায়। এ সময় কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। জানা গেছে, মিছিলে নেতথৃত্ব দেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা।

এর আগে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রাজধানীর আরামবাগসহ সারা দেশের ২৬টি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রশিবির।

রাজধানীর মতিঝিলে সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিবির। মিছিলটি মতিঝিল মোড় থেকে শুরু হয়ে আরামবাগ মোড়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিবির নেতা কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত। আরো অংশ নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিতর্ক সম্পাদক মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি শাহিন খাঁন, পূর্বের সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা প্রমুখ। মিছিল শেষে পুলিশ ব্যাপক গ্যাস গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

অপর দিকে একই দাবিতে শ্যামলীতে সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। শিবির কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক মো: আতিকুর  রহমানের নেতৃত্বে মিছিলটি শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে কলেজ গেট মোড়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী সরকার এই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ছাত্রলীগ দেশের প্রত্যেক ক্যাম্পাস দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত তারা ২৪ জন ছাত্র হত্যা করেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কিছু দিন আগেই ছাত্রলীগ রংপুরে দুই শিক্ষকের চোখ এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। ইবিতে শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। রংপুর ও বরিশালে তারা ছাত্রীদের শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টা চালিয়েছে। এখানেও সরকারের আসকারা আমাদের হতবাক করেছে।

শিবির নেতৃবৃন্দ শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষকদের রক্ষায় দেশব্যাপী যেকোনো বৃহত্তর কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকতে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

মাগুরা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় ছাত্রশিবিরের মিছিল থেকে জেলা সেক্রেটারি শরিফুল ইসলাম এবং সাহিত্য সম্পাদক হাসমত আলীসহ ৯ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

গতকাল দুপুরে শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলটি পারনান্দুয়ালী ব্রিজের ওপর পৌঁছলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। আটককৃতরা হচ্ছেনÑ শিবিরের জেলা সেক্রেটারি শরিফুল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক হাসমত আলী, আবু তাহের, রইচ উদ্দিন, ইমদাদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, সাইফুল্লাহ, সুমন মল্লিক ও বোরহান উদ্দিন। তারা মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং আলিয়া মাদরাসার ছাত্র।

গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, শিাঙ্গানসহ সারা দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের প্রতিবাদ ও গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের আমিরসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে শহরে ছাত্রশিবির একটি বিােভ মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও জামায়াত অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শিবির কর্মী, ছাত্রলীগ ও পথচারীসহ অত্যন্ত ২৫ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ ছাত্রশিবিরের একজন কর্মীকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ ও প্রত্যদর্শী জানায়, বেলা ১১টায় শহরের হকার্স মার্কেট এলাকা থেকে ছাত্রশিবির কর্মীরা একটি বিােভ মিছিল বের করে। মিছিলটি দাস বেকারি মোড় হয়ে স্টেশন রোডে পৌঁছলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শিবির কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ পুলিশের সাথে যোগ দেয়। বিুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জামায়াত অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও শিক্ষক লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির কুষ্টিয়া শহর শাখার উদ্যোগে গতকাল এক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি বড়বাজার রেলগেটে গিয়ে শেষ হয়। শহর সভাপতি সোহেল রানার সভাপতিত্বে ও শহর সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান পলাশ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।

ময়মনসিংহ অফিস জানায়, দেশব্যাপী শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল ময়মনসিংহ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির ময়মনসিংহ শহর শাখা। মিছিলটি শহর সেক্রেটারি হোসাইন মুহাম্মদ সজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চরপাড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ছাতক ডিগ্রি কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১টায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের বেশির ভাগই শিবিরের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নেতা সজিব জানান, কলেজ ক্যাম্পাসের একটি কক্ষে শিবির মিটিং করার সময় এক ছাত্রলীগ সমর্থককে জোরপূর্বক তাদের মিটিংয়ে নেয়ায় উভয় পক্ষের মথ্যে বাগি¦ত া হয় এবং এ নিয়ে একপর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

এ ব্যাপারে ছাতক উপজেলা শিবিরের সদ্য বিদায়ী সভাপতি জাকির হোসেন জানান, কলেজের কাস শেষে শিবিরের নেতাকর্মীরা ছাতক ডিগ্রি কলেজ শাখার কমিটি গঠন নিয়ে একটি সভায় মিলিত হন। এ সময় শাহনেওয়াজ নামে এক শিবির সমর্থককে ছাত্রলীগ তাদের সমর্থক বলে দাবি করে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে তাদের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় শিবিরের ১০ নেতাকর্মী আহত হন।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দেশব্যাপী ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা ও গুম খুনের দায়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে লোহাগাড়ায় বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম দণি জেলা শিবির। গতকাল বেলা ১টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বটতলী মোটর স্টেশনে কাঁচাবাজার থেকে শিবির কর্মীরা মিছিল শুরু করে। মিছিলটি মহাসড়ক প্রদণি করে বেস্ট চৌধুরী প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা শিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ তারেক হোসাইন ও সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসাইন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, সারা দেশে ছাত্রলীগের হত্যা, খুন, টেন্ডারবাজি, ছাত্রছাত্রী নির্যাতন ও শিাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে গতকাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ছাত্রলীগের মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

নগর উত্তর সেক্রেটারি নুরুল আমিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর উত্তর শিবিরের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য মসরুর হোসাইন।

সমাবেশ শেষে এক বিােভ মিছিল নগরীর বহদ্দারহাট মোড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদণি করে।
       

No comments

Powered by Blogger.