সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুন- শিক্ষকদের আন্দোলন

নতুন শিক্ষাবছরের প্রথম দিনেই সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষকদের আন্দোলনের ব্যাপকতায় বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
শিক্ষকেরা দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকলে পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট, জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ—এই তিনটি সংগঠনের ব্যানারে আলাদাভাবে তাঁরা রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি ও জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন গত বুধবার। সরকার তাঁদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে, এসব সংগঠনের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি জাতীয়করণ করা সম্ভব হলে তা নিশ্চয়ই অত্যন্ত সুখকর বিষয় হতো। কিন্তু আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনায় নিলে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি একযোগে জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। সরকার কিছুদিন আগেই ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছে। অনেক নিবন্ধিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। আর ইতিমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি চাকরি জাতীয়করণের। তাঁরা এ জন্য বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস্তববাদী হয়ে ভেবে দেখা উচিত, তাঁদের এই দাবি পূরণ করা সরকারের পক্ষে এ মুহূর্তে আদৌ সম্ভব কি না।
ইতিমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পুরোটাই দিচ্ছে সরকার, উপরন্তু তাঁদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় তাঁদের আন্দোলন-সংগ্রাম কতটা বাস্তবসম্মত, সরকারের পক্ষে তা মেনে নেওয়া বাস্তবেই কতটা সম্ভব, তা তাঁদের ভেবে দেখার বিষয়। আর শিক্ষামন্ত্রী যেমনটি অভিযোগ করেছেন, এই আন্দোলনের পেছনে যদি দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে থাকে, তবে সেটা হবে নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক।
যা হোক, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেই সমস্যাটির সমাধান করা ভালো। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়, এমন পরিস্থিতির দ্রুত অবসান ঘটানো দরকার।

No comments

Powered by Blogger.