জিয়ার অধ্যাদেশকে বৈধতা দিলো মহাজোট সরকার-নানা প্রশ্ন ও জটিলতার আশঙ্কা by খোকন বড়ুয়া

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৯১টি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ শাসনামলের ৮১টি অধ্যাদেশকে বৈধতা দিয়ে জারি করা হলো পৃথক দু’টি অধ্যাদেশ।
গত ২২ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকের স্বাক্ষরে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী আইন সুপ্রিম কোর্টে বাতিল ঘোষিত হওয়ায় ওই অধ্যাদেশগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আইন ১৯৭৯ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন। ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৮ সালের ৬ এপিল পর্যন্ত জারি করা ৯২টি অধ্যাদেশ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই রায়ের ফলে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদে আইন পাস করে সরকার। কিন্তু তিন বছর ধরে ওই ৯২টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে এসেছে দেশের শাসনব্যবস্থা। যদিও ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অকার্যকর হয়ে পড়ে ওই ৯২টি অধ্যাদেশ। এসব অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করা কিংবা সাংবিধানিক বৈধতা দেয়ার কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয় নেয়নি।

জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও দেশের বিশাল আইনগত শূন্যতায় রহস্যজনকভাবে তারা ছিলেন নীরব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই বিভাগের দায়িত্ববহির্ভূত কাজে একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকেন বিদেশভ্রমণে।

সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশে ওই অকার্যকর বা অবৈধ অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে দালাল আইন-১৯৭২ রিপিল অধ্যাদেশ ছাড়া বাকি ৯১টিকে এখন বৈধতা দিয়ে জারি করা হয়েছে অধ্যাদেশ। কিন্তু জারি করা অধ্যাদেশের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ জারি করা অধ্যাদেশের তফসিলে উল্লিখিত ৯১টি অধ্যাদেশকে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর দেখানো হয়েছে। ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করে সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন কি না সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। জারি করা অধ্যাদেশের তফসিলে উল্লিখিত ৯১টি অধ্যাদেশের মধ্যে অনেক অধ্যাদেশ আছে যেগুলোতে শাস্তির বিধান রয়েছে। এই শাস্তির বিধান সংবলিত আইনকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বাধা রয়েছে।

সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে। যার ফলে জারি করা অধ্যাদেশটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংবলিত অনুচ্ছেদ ৩৫-এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অবৈধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত অকার্যকর ৯১টি অধ্যাদেশের আওতায় যেসব প্রশাসনিক, বিচারিক বা অন্য যেসব কাজ করা হয়েছে, সেগুলো নিয়েও বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে মামলা হতে পারে।

সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাস্তির বিধান সংবলিত কোনো আইনকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করা যায় না। কিন্তু এ অধ্যাদেশে একাধিক শাস্তি সংবলিত আইনকে ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬, ডিফেন্স সার্ভিসেস (সুপ্রিম কমান্ড) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৯, ফুডগ্রেইন্স সাপ্লাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৯ উল্লেখযোগ্য। একইভাবে এরশাদের শাসনামলে জারি করা ৮১টি অধ্যাদেশকেও বৈধতা দেয়া হয়েছে গত ২২ জানুয়ারি। এই অধ্যাদেশও ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক নয়া দিগন্তকে বলেছেন, সংবিধানের যে অধ্যাদেশ আদালত বাতিল ঘোষণা করেছে তা অবৈধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত ওইসব অধ্যাদেশের অধীনে যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলোকে বৈধ বলে ধরে নিতে হয়। না হয় অবাস্তব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সাবেক জজ ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল হলে উভয় সংশোধনীর দ্বারা ওই সময়ের কৃতকর্মকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। সে বৈধতার বিষয়টি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
       

No comments

Powered by Blogger.