শিশুসন্তানের সামনে মাকে হত্যা

শিশুসন্তানের সামনে নিজ বাসায় গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার ওরফে জেসমিনকে (৩৮) শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর রায়েরবাজারে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, তাসলিমা সাত বছর বয়সী ছেলে ও দুই গৃহকর্মীকে নিয়ে ২৯১ রায়েরবাজারে (টালি অফিসের গলি) দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তাঁর স্বামী এনামুল হক ব্রাজিলপ্রবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হাজারীবাগ থানার পুলিশ ওই বাসার খাটের ওপর থেকে কাপড় দিয়ে দুই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাসলিমার লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন ও মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। ওই বাড়ির নিচতলার এক বাসিন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, গতকাল সকাল আটটার দিকে তিনি দুই নারীকে দ্বিতীয় তলা থেকে বের হতে দেখেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাকারীরা ওই বাসা থেকে নগদ দুই লাখ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। তিনি জানান, হত্যাকারীরা দ্বিতীয় তলার সিঁড়িঘরের গ্রিল ভেঙে বের হয় এবং দ্বিতীয় তলার টিনের চালায় উঠে পালিয়েছে।
তাসলিমার ছেলের বরাত দিয়ে তাঁর বোন শামীমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতে পূর্বপরিচিত এক নারী তাসলিমার বাসায় আসেন। পরে দুই যুবক ও আরও এক নারী আসেন এবং খাওয়ার পর তাঁরা অন্য দুই ঘরে ঘুমান। অপর এক ঘরে ছেলেকে নিয়ে ছিলেন তাসলিমা। বাসার অন্য ঘরে ছিলেন দুই গৃহকর্মী রনি আক্তার (২২) ও কাজল (২৫)। তাসলিমার ছেলে তাঁকে (শামীমা) জানায়, ভোররাতে ওই চার ‘অতিথি’ তাদের ঘরে ঢোকে এবং তার গলায় চাপাতি ধরে চিৎকার করতে নিষেধ করে। এরপর তার সামনে তার মায়ের পা বেঁধে গলা চেপে ও মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে হত্যা করে। তখন সে লেপের নিচে মুখ ঢেকে রাখার ভান করেছিল। শামীমা বলেন, ওই চারজন চলে যাওয়ার পর সকালে তাসলিমার ছেলে দুই গৃহকর্মীকে জাগিয়ে ঘটনা জানায়। গৃহকর্মীরা ফোনে ঘটনাটি তাসলিমার মেয়ে রোমানার স্বামী সুমনকে জানান। সুমন বাসায় এসে থানায় খবর দেন। সুমনরা লালবাগে থাকেন।
গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকার্ত স্বজনদের মাতম। তাসলিমার শোবার ঘরে কাপড়চোপড় লণ্ডভণ্ড, আলমারি ও ওয়ার্ডরোব ভাঙা। প্রত্যক্ষদর্শী শিশুর চোখে-মুখে আতঙ্ক। স্বজনেরা জানান, তাসলিমা বুটিকের ব্যবসা করতেন। এ কারণে বিভিন্ন নারী তাঁর কাছে আসতেন।
উপকমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, শিশুটি বলেছে, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার মায়ের সঙ্গে আগন্তুকদের কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে তার মাকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, পূর্বশত্রুতা, না টাকা-অলংকার লুট করতে খুন করা হয়েছে—তদন্তের পর তা নিশ্চিত করে বলা যাবে। সন্দেহভাজন একজনের নাম আশা ছাড়া অন্যদের নাম জানা যায়নি। হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনা তদন্তকারী হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইফতেখারুল আলম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক কথা-কাটাকাটির জের ধরে বুধবার রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
তাসলিমার মেয়ে রোমানা বাদী হয়ে এ ব্যাপারে হত্যা মামলা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.