মোহাম্মদ রফিকের কবিতা

আজকাল বারবার ফিরে যাই শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম দিনগুলোতে। সে সময়ের স্মৃতি, কর্মোদ্দীপনা তাড়া করে ফেরে নিয়তই। কিন্তু খরস্রোতা নদীর প্রবহমানতাও অবশেষে রূপান্তরিত হয় মরা সুতায়। তবে স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকে জল ঘিরে জেগে থাকা কুয়াশায়।
কবিতা একসময় প্রবলভাবে তাড়িয়ে ফিরত—অনেকটা ভরা জোয়ারের মতো। এখনো ঘুমের ঘোরে জাগরণের শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়, উঠে বসি, আশ্রয় মাগী কবিতার কাছে। যত দিন সম্ভব যেন বেঁচে উঠতে পারি কবিতার ছন্দ-লয়-দ্যোতনায়।

পিছু-যাত্রা
সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে এবার বেরিয়ে পড়া যায়

রিকশা থেকে রিকশায় কোনোই চেষ্টা ছাড়া
এই যাত্রা, রাস্তা ঘুরে ঢুকে যায় অন্যান্য রাস্তায়,
নদী এসে হঠাৎ দাঁড়ায় রাস্তাজুড়ে—নৌকো থেকে
আরেক নৌকোয়, লঞ্চ থেকে লঞ্চে, স্টিমারের
খোল বেয়ে অন্য এক স্টিমারের বেঢপ কেবিনে;
বদলে যায় অনন্য পথের নদীনালা-খালবিল

পেরিয়ে হারিয়ে খুঁজি রয়েছ কোথায় কোন তুমি?
দেখা হলে কথা হবে—এত দিন পরে বিনিময়;
শৈশবের ভাঙা খেলনাগুলি হাঁটি হাঁটি পা পা
ফের ফিরে আসবে চোখে চোখ—হঠাৎ বিদ্যুৎ
যেন হাট-ফেরা হাটুরের পায়ে পায়ে ক্রমশই
দীর্ঘতর হয়ে পড়বে মাঘী সন্ধ্যা পড়ন্ত মেলায়;

এই সব আয়োজন, ছায়ার অপর নাম, তুই

মৃদুমন্দ ঘ্রাণ
যেকোনো সময় এসে সম্মুখে দাঁড়াতে পারো তুমি;
তোমার শরীর থেকে লোবানের মৃদুমন্দ ঘ্রাণ
ছুঁয়ে যেতে পারে তাপ-অনুতাপ; সকল ভ্রমের
কলকণ্ঠ ছুুঁয়ে বলে, চলো যায় যেখানে শৈশবে
তুমি-আমি জড়াজড়ি ধরে ছেনে মাটির সংলাপ,
কাটিয়েছি প্রভাত-সন্ধ্যার আদিঅন্ত বেলা; তারপর
কেটে গেছে বহু কাল, ক্রমে শরীরের আবরণ ছেড়ে
নেমে গেছে চামড়ার প্রলেপ, মানুষের কোল ছুঁয়ে দূরে
ডুগডুগি বাজায় ধীর বেশরম মাংসের আয়েশ;
ধূম উঠছে ধূম—নির্গলিত বন্দনার হুহুস্বর

তোমাকে যাচনা করি মুক্তিদাতা কাফনের গিঁট
খুলে ফেলে যদি স্পর্শ করো, দেখি অপরূপ
রূপগন্ধি সমীহ জাগাতে পারে কতটুকু
কত দূর শোনা যায় প্রতারিত বাঁশির ক্রন্দন

No comments

Powered by Blogger.