কৃষি- পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে চা চাষ বাড়ছে by মোহা: আসাদুজ্জামান আসাদ

দেশে যে হারে চা পানের চাহিদা বাড়ছে, সে হারে বাড়ছে না চায়ের উৎপাদন। চায়ের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র এক শতাংশ, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে চার শতাংশ।
তবে এই সঙ্কটের মধ্যেও পঞ্চগড়সহ দেশের উত্তরাঞ্চল কয়েক বছরে চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে। দেশে গত অর্থবছরে প্রায় ৬০ লাখ কেজি চা আমদানি করা হয়েছে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন করে ২০০ হেক্টর জমিতে চায়ের আবাদ বাড়ানোর ল্যমাত্রা নিয়ে ও চাষিদের বিভিন্ন রকম সহায়তা দেয়ার জন্য চা বোর্ড ২০১০ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ ছাড়াও ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ফর টি ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে সুদৃষ্টির অভাবে সেটিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল চাপা পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করলে চা শিল্পের এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট জেলায় চা চাষের উপযোগী জমি রয়েছে প্রায় ৭২ হাজার একর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৭০০ একর জমিতে। এখনো প্রায় ৭০ হাজার একর জমি পতিত রয়েছে। পঞ্চগড়ে ২০০০ সাল থেকে পতিত সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। এরপর ২০০৬ সালে ঠাকুরগাঁও এবং পরে লালমনিরহাটেও স্বল্প পরিসরে চাষ শুরু হয়।

উত্তরাঞ্চলে পাঁচ জেলায় চা বোর্ডের চার সদস্যের জরিপদলের প্রতিনিধি ও তেঁতুলিয়া টি কোম্পানির চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, জরিপ মতে পঞ্চগড় জেলায় চা চাষের উপযোগী জমি রয়েছে ৪০ হাজার একর, ঠাকুরগাঁও জেলায় রয়েছে ২৫ হাজার একর ও লালমনিরহাট জেলায় রয়েছে সাত হাজার একরের বেশি। এসব জমিতে উন্নত জাতের চা চাষ করা সম্ভব। এ ছাড়াও দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় কিছু জমিতে চা চাষের উপযোগী জমি রয়েছে।

১৯৯৯ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ চা বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল পঞ্চগড়সহ উত্তরের বেশ কিছু অংশে পরীা নিরীা শেষে জানায়, এ অঞ্চলের জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। তাই এসব জমিতে চা চাষ করা সম্ভব। চা বোর্ডের জরিপ শেষে ২০০০ সালে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি ও কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চা চাষ শুরু করে। পঞ্চগড়ে অবস্থিত চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন বলেন, লালমনিরহাট জেলার জরিপ পঞ্চগড় অফিসে নেই। তবে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ৪০ হাজার একর জমি চা চাষের উপযোগী। এর মধ্যে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত পঞ্চগড়ে চা চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ একর জমিতে। ২৯৮ জন স্মল গ্রোয়ার্স (৫ একরে নিচে) ৫৯৬.২৬ একর জমিতে ১৫ জন স্মল হোল্ডার্স (৫ থেকে ২০ একরের মধ্যে), প্রায় ১৩২ একর এবং ২০টি টি এস্টেট (২০ একরের ওপরে) ১৯২৪.২৩ একর জমিতে চা আবাদ করছেন। এই ২০টি টি এস্টেটের মধ্যে মার্চ থেকে চা-পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। মে মাস পর্যন্ত মোট এক লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে স্থানীয় চা বোর্ড।

পঞ্চগড়ের সাফল্য দেখে ২০০৬ সালে এপ্রিল-মে মাসে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার পারিয়া ইউনিয়নের নিটোরডুবা গ্রামে এমিনেন্ট টি এস্টেট নামে একটি চা বাগান মাত্র ২০ একর জমিতে চাষ শুরু করে। পরে গ্রিনফিল্ড নামে একটি টি এস্টেট সেটি ক্রয় করে নেয়। গত বছর ঠাকুরগাঁও থেকে ৪৩ হাজার ৩৩৩ কেজি চা পাতা পঞ্চগড়ের করতোয়া টি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এ বছর তারা আরো ১০ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ করেছে। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে এসব জমিতে যারা এত দিন মুগডাল, ধান ও ভুট্টার আবাদ করে এসেছেন, চা চাষে তাদের উৎসাহিত করতে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট স্থানীয় ুদ্র চাষিদের সহজশর্তে ও বিনাসুদে ঋণসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। এতে নিটোলডুবা গ্রামের ৫৫ জন কৃষক ৫০ একর জমিতে ুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু করেছেন। পঞ্চগড় ুদ্র চা চাষি মতিয়ার রহমান জানান, দেশে চায়ের আবাদ বাড়ানোর একমাত্র উপায় ুদ্র চাষিদের চা চাষে উৎসাহিত করা। কৃষকদের ঋণ সহযোগিতা, প্রয়োজনীয় কীটনাশক, সার, ওষুধ, কৃষি উপকরণ সহজ শর্তে দেয়া হলে চা চাষের পরিধি অনেক বাড়বে।

পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ইকবাল কায়সার মিন্টু বলেন, এই তিন জেলার চা চাষ একটু ভিন্ন প্রকৃতির। শ্রীমঙ্গল, সিলেট ও চট্টগ্রামের মতো খাসজমি এ অঞ্চলে নেই। তাই প্রান্তিক চাষিরা যার যতটুকু চাষের জমি আছে সেটুকু জমিতে অন্যান্য ফসলের মতো চা চাষ করলে আমাদের রফতানি বাড়বে। তাই সবার আগে ুদ্র চা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
প্রতিবেদকঃ মোহা: আসাদুজ্জামান আসাদ

No comments

Powered by Blogger.