ককটেল ফাটিয়ে শিবির সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইছে ছাত্রদল- ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে পলায়ন by আসিফ ত্বাসীন

শিবিরের রাজনৈতিক কর্মসূচী ও কৌশলের ওপর ভর করে এগোতে চাইছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ক্যাম্পাস দখলের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা।
কিন্তু এক্ষেত্রে শিবিরের কর্মকা- ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে সংগঠনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
টানা তিনদিন ক্যাম্পাসজুড়ে ‘ককটেল আতঙ্ক’ ছড়িয়ে শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে নিজেদের আগমনের ঘোষণা দিতে চাইছে ছাত্রদল। গত তিনদিনে আটক আটজনের মধ্যে অন্তত একজন শিবিরকর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও তিনজনকে শিবিরকর্মী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ছাত্রদলের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসে তাদের আগমনের দিন তারিখ ঠিক করতে শিবিরের রাজনৈতিক কর্মসূচীর ওপর নির্ভর করছে ছাত্রদল। একদিকে জামায়াত-শিবির সারাদেশে হামলা-ভাংচুর চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে ছাত্রদল ককটেল ফাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখলের স্বপ্নে বিভোর। নেতৃবৃন্দের ধারণা, শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সুবাদে তাদের অপকর্ম চোখে পড়ছে না। আবার, শিবিরও তাদের স্বার্থেই ছাত্রদলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার নেই, তাই অন্য সংগঠনের ঘাড়ে চেপে এখানে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর বিদ্রোহী গ্রুপের হামলা হয়। বিদ্রোহী পদবঞ্চিতদের হাতে প্রহৃত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার পর থেকে মূল ছাত্রদল আর কখনও ‘দাপটে’র সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। সে দাপটটাই ফিরে পেতে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইছে ছাত্রদল। ইতোপূর্বে তারা বেশ কয়েকবার ঘোষণা দিলেও কোন লাভ হয়নি। অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় পুলিশ এবং ‘অছাত্রদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়া’র ঘোষণায় ছাত্রলীগ তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেয়। নতুন কমিটি হওয়ার পর দু’বার সাংবাদিক সমিতির আমন্ত্রণে আর একবার জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য ক্যাম্পাসে ঢোকে ছাত্রদল। তাছাড়া, বেশ কয়েকবার ঢুকতে গিয়ে প্রহৃত হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের ধারণা, প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে কারণেই শিবিরের কৌশল ও শক্তির ওপর ভর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রদল। সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কমপক্ষে ৫০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ ব্যাপারে শিবিরের সহায়তা নিতে হয়েছে তাদের। এভাবে ককটেল ফাটিয়ে তারা তাদের আগমনকে ‘জানান’ দিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টমহল।
ককটেল ফাটানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে আটক আটজনের মধ্যে অন্তত চারজনকে শিবির বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বুধবার সকালে ক্যাম্পাসের মল চত্বর থেকে আরবী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও হাদীউজ্জামান নামে দু’জনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে ফারুক গাজীপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবুল বাশারকে আটক করা হয় বুধবার। এর আগের দু’দিনে আটক চারজনের মধ্যে অন্তত দু’জন শিবির বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বোমাবাজি গত কয়েক বছর দেখা যায়নি। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর ছাত্রলীগ কোন অস্ত্র ব্যবহার ছাড়াই হলে ওঠে। অথচ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জয়ী হলে ছাত্রদল সশস্ত্র অবস্থায় ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল দখল করে।
সরকারের শেষ সময়ে হল ও ক্যাম্পাস দখলের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ছাত্রদল পুনরায় অস্ত্র দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। অতীতে সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোতে রীতিমতো ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছিল। অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বের পথেই ফিরে যাচ্ছে ছাত্রদল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা আমাদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের কর্মসূচী সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ছাত্রশিবিরের কর্মসূচী ভিন্ন। তাদের কর্মসূচীর সঙ্গে আমাদের কোন যোগসূত্র থাকতে পারে না।
তাঁর দলের শীর্ষপর্যায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, আমাদের কাছে কোন উত্তর নেই। যারা অভিযোগ করে তাদেরই প্রকাশ করতে বলুন।
ছাত্রদলের কর্মসূচী থেকে আটক বেশ কয়েকজনের শিবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছেÑ এ প্রসঙ্গে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেছি। সে মিছিলে ছাত্রলীগ বোমাবর্ষণ ও গুলি করেছে। কিন্তু এ মিছিল থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর বাইরে অন্য কোন কর্মসূচী থেকে যদি কাউকে গ্রেফতার করে বলা হয়, ছাত্রদলের কর্মসূচী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাহলে তো আমাদের কিছু বলার নেই।

No comments

Powered by Blogger.