জামায়াতী সন্ত্রাস ॥ ‘হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার- স্বদেশ রায়

২৮ তারিখ থেকে জামায়াত-শিবির আবার রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। থানা আক্রমণের চেষ্টা করছে। গাড়ি ভাংচুর করছে।
গাড়িতে আগুনে দিচ্ছে। তারা যেগুলো করছে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এগুলো রাষ্ট্রদ্রোহ। এছাড়াও তারা সংবিধান ও বিচার বিভাগকে অমান্য করছে। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোন মার্শাল কোর্টে বা কোন অবৈধ কোর্টে হচ্ছে না। সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের অধীনেই তাদের বিচার হচ্ছে। তাই এ বিচার বন্ধ করার দাবির অর্থ বিচার বিভাগ ও সংবিধানকে অমান্য করা, যা সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহ।
জামায়াত শিবির ২৮ জানুয়ারি থেকে এই রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রম শুরু করেনি। তারা মূলত এ কাজ শুরু করেছে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে নতুন করে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পাবার পর থেকে। তবে বর্তমানের এই পর্যায়টি তারা শুরু করেছে গত নবেম্বর থেকে। সরকার ও প্রশাসন কেন এতদিন যাবত এই রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রম সহ্য করছে তার সত্যি কোন সদুত্তর আমাদের জানা নেই। তারা এর আগে আইনমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলা করেছে। ২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর, অর্থমন্ত্রীর ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের গাড়ি বহরে হামলা করেছে। তারা থানা আক্রমণ করেছে। চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর গুলি চালিয়েছে। এর পরে পরে কি আর এই রাষ্ট্রদ্রোহী, জঙ্গীদের কার্যক্রম বা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করতে দেবার কোন সুযোগ আছে? যদি এর পরে তারা এই কাজ এমনি অবাধে করতে থাকে তাহলে তার অর্থ কী দাঁড়াবে? তখন কি মনে হবে দেশে কোন সরকার আছে? বর্তমান সরকার কি দেশকে সেখানে নিয়ে যাবার সুযোগ করে দেবে? দেশের ৭০ ভাগের বেশি লোকের সমর্থন পেয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার সমর্থন করে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ। এ অবস্থায় গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর এই কার্যক্রমে দেশকে এইভাবে অরাজকতার ভেতর, নৈরাজ্যের ভেতর নিয়ে যেতে দেবে বর্তমান সরকার!
এই সরকারের একজন দায়িত্বশীলের সঙ্গে গত নবেম্বর মাসে জামায়াত-শিবিরের এই সহিংসতা নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, আমি যদি এখন গুলি চালাই তাহলে তারা আন্দোলনের সুযোগ পেয়ে যাবে। সেদিন তাঁর সঙ্গে একমত হয়নি। তবে যে অনুষ্ঠানে কথা হচ্ছিল সেখানে বেশি কথা বলার সুযোগ না থাকায় আর কথা বলিনি। শুধু বলেছিলাম, তারা কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করছে।
২৮ নবেম্বর রাজধানীসহ দেশের কিছু জায়গায় জামায়াতের এই সহিংস তা-ব, মন্ত্রীদের গাড়ি বহরে হামলা করার পরে কয়েকটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেমন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেছেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে আসা মাত্রই শিবির দেখলে এখন থেকে গুলি চালানো হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী, জঙ্গী সংগঠনÑসরকার যেন তাদের কঠোর হাতে দমন করে। কারণ তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেশের স্বাভাবিক ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষতি করছে।
শেখ হাসিনার সরকার বা বর্তমান সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের সমর্থন দিন দিন বাড়ছে। এবং এটা কোন বায়বীয় সমর্থন নয়। শেখ হাসিনার কাজই তাদের সমর্থন করতে উদ্বুদ্ধ করছে। যেমন বর্তমান সরকার বিদ্যুত দিয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন ও ব্যবসা করতে পারছেন। যে কারণে দেশের প্রথম সারির এবং দলনিরপেক্ষ শিল্পপতি মঞ্জুর ই এলাহী এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছেন, বিদ্যুত কালো কি সাদা তা আমি জানি না। আমি বিদ্যুত পাচ্ছি, আমার কারখানা চলছে। উৎপাদন হচ্ছে। এটাই সত্য। পাশাপাশি গত চার বছর শেখ হাসিনা দেশকে প্রায় হরতালমুক্ত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। আজকে অনেকে বলেন, শেখ হাসিনা অগণতান্ত্রিক কাজ করেছেন। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোন দলের মহাসচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথমত এটা তথ্যগত ভুল। যাঁরা এ কথা বলেন তাঁদের কাছে প্রশ্ন করি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বাকশালের সেক্রেটারিদের কি জেলের বাইরে রাখা হয়েছিল? অনেকে বলতে পারেন তখন সামরিক শাসন ছিল। এখন গণতন্ত্র। ভাল কথা। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের সম্পত্তি গাড়ি ভাঙ্গার উৎসব করার, গাড়িতে আগুন দেবার উৎসব করার কোন অধিকার নেই। ৯ তারিখ রাজপথ অবরোধের নামে ওইদিন যত গাড়ি ভাঙ্গা হয়েছিল ও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছিল এই ভূখ-ের ইতিহাসে তা কখনও ঘটেনি। এবং ১৯৪৭ সাল থেকে যাঁরা রাজপথের আন্দোলন দেখে আসছেন তেমন সাংবাদিক এখনও দু’একজন বেঁচে আছেন। একজন এবিএম মূসা। এবিএম মূসা হয়ত এখন কোন দিকে বলবেন তা নিয়ে সকলে চিন্তিত। কারণ তাঁর হংকং অধ্যায় আওয়ামী লীগ বলে ফেলেছে। আবার যদি আওয়ামী লীগ প্রশ্ন করে বসে কলকাতায় কেন তাঁর বাসা ভারতীয় পুলিশ সার্চ করেছিল? এ সব প্রশ্নের উত্তর তাঁর জন্য এখন একটি সমস্যা। তবে প্রবীণ সাংবাদিককে যে কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন, জানতে পারবেন এত সংখ্যক গাড়ি কোন দিন কোন আন্দোলনের নামে ভাঙ্গা ও পোড়ানো হয়নি। দেশের সংবাদপত্রের পাতা, টেলিভিশন ফুটেজ ও অনলাইন নিউজের আর্কাইভ দেখলে সকলে দেখতে পাবেন কে এই গাড়ি ভাঙ্গার ও আগুন দেবার মূল হুকুমদাতা। ৮ তারিখ মির্জা ফখরুল ইসলাম হুমকি দেন ৯ তারিখ কেউ রাস্তায় গাড়ি নামাবেন না। তাঁর এই হুমকির ফলেই কিন্তু ৯ তারিখ জামায়াত ও বিএনপিকর্মীরা শত শত গাড়িতে আগুন দেয় ও ভাঙ্গে। তাই আন্দোলনের নামে এর আগে কোন দলের কোন মহাসচিব এইভাবে সাধারণ মানুষের সম্পদ নষ্ট করার নেতৃত্ব দেননি। শেখ হাসিনার সরকার বা বর্তমান সরকার এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীকে বিচারের অধীনে নিয়েছে। এবং কঠোর হাতে হরতাল ও নৈরাজ্য দমনের জন্য নেমেছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট। তারা বুঝতে পারছেন, বর্তমান সরকারের পক্ষে দেশকে ব্যবসাবান্ধব রাখা সম্ভব হবে। দেশকে নৈরাজ্যমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কোথাও লেখা নেই গণতন্ত্র মানে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেও তাদের বাধা দেয়া যাবে না। তাদের দিকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতে হবে। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের প্রতি নত হলে, তাদের প্রতি হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইলে কী হয় তার প্রমাণ তো আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গে আমরা দেখতে পেয়েছি। যতদিন জ্যোতি বসুর শাসন ছিল, দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন বর্তমান ছিল, ততদিন মমতা ব্যানার্জী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। তিন পয়সা মূল্য ছিল না তার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন তার নৈরাজ্যকে ভয় পেলেন, তার প্রতি গান গাইতে শুরু করলেন, তখন কি হলো? পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দখলে চলে গেল। যার পরিণামে আজ পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে একদিন ভারতীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল সেখানে মমতা ব্যানার্জীর মতো এক উদ্ভট নেতৃত্ব ক্ষমতায়। শুধু তাই নয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য়ের ওই মেরেছিস কলসির কানা তাই বলে কি প্রেম দেব না নীতির কারণে টাটাসহ বিভিন্ন শিল্পপতি পশ্চিমবঙ্গ ছাড়তে বাধ্য হলেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি গত চার বছরে ২৫.২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে জিডিপি বৃদ্ধির হারের হিসেবে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে পঞ্চম অর্থনীতি। এ বছর দেশের জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ। এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৩০ শতাংশের ওপরে চলে যাবে। এ দেশের অতীতের রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, এটা সম্ভব হবে না কারণ এ বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অনেক বেশি থাকবে। তাঁরা একটি সত্য বুঝতে পারছেন না, ওই অতীত কিন্তু এখন আর এ দেশের সঙ্গী নয়। শেখ হাসিনা নিজে তাঁর সরকারের দিকে তাকালে তিনিই বুঝতে পারবেন তিনি ওই অতীতকে বদলে দিয়েছেন। কারণ, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০০৯ অবধি যতটুকু বিদ্যুত উৎপাদন এ দেশে হয়েছে তার থেকে বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করেছে শেখ হাসিনার সরকার গত চার বছরে। রফতানি বেড়েছ কয়েকগুণ। শিক্ষা খাত বদলে দিয়েছেন। এমনকি ঢাকার একটি ডোবা পচা আবর্জনার ভাগাড় হাতিরঝিলকে তিনি ইউরোপ বা পূর্ব এশিয়ার অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থানের সম পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। মাত্র ৪০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাচ্ছে। তাই এ সময় বদলে যাওয়া সময়। এই সময়ই ধরে রাখা ও এগিয়ে চলাই বর্তমান সরকারের মূল কর্তব্য। তাতে মহাসচিব না মহামানব বা মহামানবী জেলে থাকল এটা বড় কথা নয়। শেখ হাসিনাকে এ বছর এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশে হরতাল হবে না। কঠোর হাতে তিনি সেটা দমন করবেন। এবং শিল্পপতিরা নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন করবেন। ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করবেন। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। দেশের মানুষ এটারই পক্ষে।
সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখন বললেন, আর পুলিশের ওপর হামলা করতে এলে এখন জামায়াত-শিবির দেখামাত্র গুলি করা হবে। কিন্তু আগে সরকারের অনেকে বলেছিলেন সরকার কঠোর পথে গেলে, গুলি চালালে আন্দোলন বাড়বে। সরকার গুলি চালালে আন্দোলন বাড়ে কখন যখন সরকারের প্রতি জনসমর্থন থাকে না। কিন্তু এখন দেশের সকল মানুষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে। সকলেই ভাল জীবন চায়। নিরাপদে পথে চলতে চায়। শিল্পপতিরা নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন করতে চান। ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে চান। তার ওপর দেশের শতকরা ৮০ ভাগের ওপর লোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চায়। এখানে জামায়াতের প্রতি, শিবিরের প্রতি কঠোর হলে তাদের আন্দোলন করার কোন ক্ষমতা নেই। বিএনপি যদি এখন জামায়াতের পক্ষে আসে তাহলে বিএনপি যেটুকু আছে সেটুকু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কারণ, এমনি বিএনপির বলার কিছু নেই। বর্তমান সরকার বলতে পারে, আমরা বিদ্যুত উৎপাদন করেছি, দেশকে প্রধান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূূর্ণ করেছি। দেশের যাবতীয় প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেছি। ছাত্রদের সময়মতো বই দিয়েছি। মাত্র ৪০ হাজার টাকায় বিদেশে লোক পাঠাচ্ছি। সর্বোপরি দেশকে বিশ্ব অর্থনীতির পঞ্চম স্থানে নিয়ে গিয়েছি। এর বিপরীতে বিএনপি কী বলবে? তারা বলবে আমাদের হাওয়া ভবনের দুর্নীতি বিশ্বের একটি অনন্য ইতিহাস, আর তারেকের মানে মি. ১০% এবং কোকোর পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আসা ছাড়া তাদের কী বলার আছে? যে কোন বিএনপি সমর্থক বুকে হাত দিয়ে বলুক না গত বিএনপি আমলে তাদের এই অর্জনটা আছে? তাই এখন ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে বলার মতো বিএনপির কিছুই নেই। এই অবস্থায় তারা যদি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য জামায়াত যে দেশোদ্রোহী কাজে নেমেছে তাকে সমর্থন করে রাজপথে নামে তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিএনপি নামটি এখানেই থেমে যাবে। আর এগুবে না। অচিরেই এর অবস্থান কেবল ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়ে নেবে।
তাই এ মুহূর্তে বর্তমান সরকারের উচিত হবে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে অবিলম্বে জামায়াত ও শিবিরকে কঠোর হাতে দমন করা এবং তার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সময় নষ্ট করার মতো কোন সময় নেই। আমাদের পুলিশ স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তে স্নান করে জন্ম নিয়েছে। তাই তারা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ওই দেশদ্রোহী জঙ্গী শিবির জামায়াতকে অবশ্যই মোকাবিলা করবে। জঙ্গী মোকাবিলায় র‌্যাবের সুনাম আছে। তবে সরকারকে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রশাসনের সব জায়াগায় কিছু কিছু জামায়াত-শিবির এখনও বসে আছে। পুলিশেও দু’ চার জন আছে। তারা ওপরে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে নিজেদের জাহির করে। সরকারের পক্ষে কোন সমস্যা না তাদের চিহ্নিত করা। সরকারের সে মানুষ আছে। তাদের কাছে জেনে নিয়ে অবিলম্বে এগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সরকার অবশ্য ইতোমধ্যেই কিছু পরিবর্তন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশের বাইরে নানান জায়গায় দিয়ে রাখা হয়েছে প্রয়োজনে তাদেরকে অবিলম্বে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি এমপি এবং দলের নেতা ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ দিতে হবে তারা যেন অবিলম্বে জনগণকে জামায়াত-শিবির মোকাবিলা করতে সংগঠিত করে। এই কলামে এর আগেও লিখেছি, প্রশাসন থেকে আমাকে বলেছে বগুড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি গোপনে জামায়াতকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। গতকাল একটি পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে, আওয়ামী সুপারিশে জামায়াত ছাড়া পাচ্ছে। এই রকম যে সব জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ কাজ করছে তাদের অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এবং রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিটি এমপি ও দলের নেতারা যেন পাড়ায় পাড়ায়, বিভিন্ন সড়কভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধ করার জন্য। তারা যেন অবিলম্বে চিহ্নিত করে ফেলে ওই পাড়ায় বা মহল্লায় জামায়াত-শিবির কোথায় থাকছে। এবং সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করে। তারা যেন নানান জায়গা থেকে এসে মূল সড়কে জড়ো হতে না পারে। জামায়াত-শিবির ২৮ জানুয়ারি মতিঝিলে তা-ব চালিয়েছে। শুধু যদি মতিঝিলের ফুটপাথের হকাররা ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত ওরা কিন্তু পালাবার পথ পেত না। ওরা যে বাসে হামলা করতে যাচ্ছে ওই বাসের লোকজন ওদের প্রতিরোধ করলে ওরা কিন্তু পালাবার পথ পাবে না। তাই আওয়ামী লীগের প্রতিটি এমপি, প্রতিটি নেতার দায়িত্ব এখন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, সংগঠিত করা, ওদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নামা। ফুটপাথের হকার, বাসের যাত্রী, মহল্লার নারী পুরুষ সকলকে ওই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে হবে। মানুষের মাঝে শুধু এই শক্তি জাগিয়ে তোলা যে, অন্যায় তোমার থেকে অনেক ভীরু। তুমি শুধু সাহস করে একবার রুখে দাঁড়াও দেখবে সে পালাবার পথ পাবে না।
জামায়াত-শিবির গত নবেম্বর থেকে এই অবধি যে কাজ করেছে তাতে তারা এখন দেশদ্রোহী। তাই রাজধানীর প্রতিটি মহল্লাতে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে, তরুণ সমাজকে সংগঠিত হতে হবে জামায়াত-শিবিরকে ধরিয়ে দেবার জন্য। তারা যেখানে আশ্রয় নিক না কেন, সেটা পুলিশকে জানিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। অন্যদিকে যারা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করছে, পুলিশের ওপর হামলা করছে, পুলিশ হত্যা করার চেষ্টা করছে, তাদের শুধু গ্রেফতারের খবর পাচ্ছে মানুষ। কেন দ্রুত বিচার আদালতে তাদের বিচার হচ্ছে না? প্রয়োজনে এই দেশদ্রোহীদের বিচারের জন্য সংসদে আরও দ্রুত বিচার আইন পাস করতে হবে। যাতে ১৫ দিন এক মাসের ভিতর তাদের বিচার সম্পন্ন হয়। সাজা হয়। কারণ, এই লেখা যখন লিখছি তখন একটি দৈনিকের পেছনের পাতায় একটি ফিচার দেখতে পাচ্ছি যে, ১৯৭১-এর এক যুদ্ধশিশু বাংলাদেশে এসে তার মাকে খুঁজছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের এই রক্তাক্ত ক্ষতের জন্য কারা দায়ী? ওই যে যুদ্ধশিশু তার মা হিসেবে যাকে খুঁজছে নয় মাস কিভাবে ওই নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছিল- শুধু একবার দু’ চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুন, তার পরে বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে যারা রাস্তায় নামছে তাদের কী করা উচিত এই জাতির? মানুষ ভোট দিয়ে সংসদ তৈরি করেছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদ কাজ করবে। তাই দেশদ্রোহীর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে যদি আরও দ্রুত বিচারের কোন আইন তৈরি করতে হয় তাও অবিলম্বে তৈরি করা হোক। আর সেই আইনে এই দেশদ্রোহীদের বিচার করা হোক। শুধু গ্রেফতারে কাজ হবে না।
১/১১-এর পরে দেখা গেছে শেখ হাসিনা আপোস করতে জানেন না এবং তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন এখানে তাঁর আপোস করার কোন সুযোগ নেই। পিছিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। এমনকি নমনীয় হবারও কোন সুযোগ নেই। আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বজ্র কঠোর হওয়াই কিন্তু মানুষের সৎ ধর্ম। শেখ হাসিনাকে এখন সর্বোচ্চ বজ্র কঠোরতার ভেতর দিয়েই এই পাকিস্তানী বীজকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। ইতিহাস তার কাঁধেই সে দায়িত্ব দিয়েছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে এ দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের কাঁধে তিনটি দায়িত্ব পড়ে- এক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার করে শাস্তি দেয়া। দুই, পাকিস্তানী বীজ ও যুদ্ধাপরাধী নিশ্চিহ্ন করা। তিন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া। আমাদের সকল জাতীয় নেতা সে দায়িত্ব কাঁধে নিতে ব্যর্থ হন। অবশেষে দেখা যায়, কোমরে আঁচল জড়িয়ে, পাথর চাপা শোক বুকে চেপে নিয়ে, এই তিন গুরুভার পালনের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যাই কাঁধে তুলে নেন। তিনি ইতোমধ্যে তিন দায়িত্ব অনেকখানি পালন করে ফেলেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার করেছেন। দেশের অর্থনীতিতে তীব্র গতি দিয়েছেন। এভাবে দেশ এগিয়ে চললে অচিরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা মানুষ পাবে। আর পাকিস্তানী বীজ যুদ্ধাপরাধী নিশ্চিহ্ন করার যুদ্ধে তিনি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। চূড়ান্ত পরাজয়ের শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানী বীজে জন্ম নেয়া কুলাঙ্গাররা মরণকামড় দিচ্ছে। বিজয়ী সেনাপতির মতোই শেখ হাসিনাকে কঠোর তরবারির ঝলকানিতে এদের পরাজিত করে এ বিজয়ও দেশের মানুষকে উপহার দিতে হবে। তাঁকে এ যুদ্ধে মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথের ওই উক্তি, ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা, হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে।
আর সর্বোপরি দেশের মানুষকে মনে রাখতে হবে, ১৯৭১-এ জীবনপণ করে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করার পরে ১৯৭৫-এ আবার এক শ্রেণীর দেশী পাকিস্তানী ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছে। এখন দেশের সামনে আবার সুযোগ এসেছে ওই দেশীয় পাকিস্তানীদের নিশ্চিহ্ন করে দেশকে সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বপ্নের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। আর এটা বাংলাদেশের শেষ যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জীবন দেবার খুব বেশি দরকার নেই শুধু সাহসী হলে, সংগঠিত হলেই ওরা পরাজিত হবে।
swadeshroy@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.