খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার- রাঙ্গামাটি গুজবের শহর

বাঘাইছড়ির ঘটনার পর রাঙ্গামাটি শহরে এখনও নানাভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আর এ নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। নানিয়াচরে উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘর ভাংচুর হয়েছে।
অপরদিকে খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৬ দিন পর ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। সর্বত্র আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
রাঙ্গামাটি এখন গুজবের শহরে পরিণত হয়ে আছে। ভূমি বিরোধ নিয়ে বাঘাইহাটে সংঘটিত সহিংসতার ৮ দিন পর শহরে শানত্মি ফিরে এলেও শুধু গুজবের কারণে রাঙ্গামাটি ও নানিয়াচর উপজেলায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
নানিয়াচর সদরের পাশে ২টি পটকা ফোটানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৬ ফেব্রম্নয়ারি রাতে নতুন করে পাহাড়ি-বাঙালী উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে বাঙালীরা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমার বাসা আক্রমণ ও ভাংচুর করে। পরে সেনা ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শানত্ম করে এবং চেয়ারম্যানের পরিবারবর্গকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
পরের দিন শনিবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবতর্ী ও পুলিশ সুপার মাসুদ-উল-হাসান ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় সমপ্রদায়ের লোক নিয়ে সভা করে সর্বদলীয় একটি কমিটি গঠন করে দেন। এরপর থেকে নানিয়াচরের পরিস্থিতি শানত্ম রয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে রাঙ্গামাটি শহরের রাজবাড়ি শ্মশানে একটি লাশ সৎকার করার সময় আগুনে বাঁশের গিরা ফোটার শব্দ ও একটি নৌকা নিয়ে কয়েকজন লোক আসতে দেখে শহরের ইসলামপুর ও শরিয়তপুরে পাহাড়ীরা আক্রমণ করেছে এবং আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে সেখানে মাইকিং হলে সর্বত্র গুজব ছড়িয়ে য়ায়। রাত ১০টায় শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সেনাবাহিনীসহ শহরের গণ্যমান্য লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে লাশ পোড়ার খবর পেয়ে সকলেই শানত্ম হয়ে ফিরে যায়। এভাবে কিছু লোক গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। অপরদিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি ও বাঘাইহাটে পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্য থেকে ধীরে ধীরে আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। রবিবারও বাঘাইহাটে বাঘাইছড়ির নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে তিগ্রসত্ম পাহাড়ী-বাঙালীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ২০ কেজি চাল ও ১ হাজার নগদ টাকা। তবে সেখানে ত্রাণের ঢেউটিন বিতরণ না হওয়ায় এখনও কেউ ঘর তৈরি করেনি। অনেকেই এখনও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
খাগড়াছড়িতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় এবং জনমনে আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় টানা ৬ দিন পর রবিবার দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ি শহর ও আশপাশ এলাকা থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ আদেশ জারি করেন। এদিকে রবিবার সকাল থেকে খাগড়াছড়িতে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। অফিস-আদালত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ফিরে এসেছে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য। শহরের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় র্যাব সদস্যদের খাগড়াছড়ি থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী-বিডিআর ও আনসার বাহিনী পুলিশের পাশাপাশি টহল অব্যাহত রাখবে।
অপরদিকে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে দ্রম্নত উত্তরণ ও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অভ্যনত্মরীণ উদ্বাস্তু চিহ্নিতকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া এলাকায় শানত্মি সমাবেশ ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। জেলার অপর ৮টি থানায়ও পাহাড়ী-বাঙালীর সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত শানত্মি মিছিলে হাজার-হাজার পাহাড়ী-বাঙালী অংশ নেয়।

No comments

Powered by Blogger.