লোকে লোকারণ্য- বাংলা একাডেমী পুরস্কার ঘোষণা, নতুন ২০৬ বইমেলা ॥ প্রতিদিন

 বাঙালীর অসত্মিত্বেরই একটি অংশ অমর একুশে বইমেলা, যা এখন আর বলার অপেৰা রাখে না। ১৯৫২ সালের এই দিনে (২০ ফেব্রম্নয়ারি) সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধানত্ম পাস_ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিৰার্থীরা পরের দিন (একুশে ফেব্রম্নয়ারি) ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধানত্ম নেয়।
বাঙালীর এই রক্তাক্ত বেদনার ও গৌরবের ইতিহাস এখন সবারই জানা। যার হাত ধরে জন্ম হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। বাংলা ভাষার সেই বীর শহীদদের স্মরণেই এ মাসে বাংলা একাডেমী আয়োজন করে থাকে এই মেলার। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালীদেরও এ মেলাকে ঘিরে রয়েছে অনেক স্বপ্ন। প্রবাসী বাঙালীরা তো এর জন্য অপেৰা করে সারা বছর। তাঁদের কাছে এই মেলা সারা বছরের অক্সিজেন। আর এই মেলারই এখন পরিসর এত বেড়েছে যে মেলা প্রাঙ্গণের স্থান ছোট হয়ে গেছে। দিন দিন মেলায় লোকসংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর ছুটির দিনের ভিড়, তা কোন বিশেষণ দিয়েই বোঝানো সম্ভব না। এদিন যে তিল পরিমাণের জায়গা খালি থাকে না, তা আর বলার অপেৰা রাখে না। বিকেল চারটায় মেলা প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় দেখা গেছে পাঠকদের মেলায় ঢোকার দুইটি করে লাইন টিএসসি ও দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে গেছে। আর সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টায় মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম, সেই লাইনগুলো সাপের মতো পেঁচিয়ে গেছে। এগুতে পারছে না লাইলগুলো, ৰণে ৰণেই থেমে যাচ্ছে। লাইনগুলো যদি সাপের মতো না পেঁচাত, তাহলে এ লাইন যে এদিকে চারম্নকলা এবং সেদিকে সোজা শহীদ মিনার চলে যেত, তা লাইনে অপেৰমাণ পাঠক-দর্শনার্থীরাই জানালেন। তাই মেলা প্রাঙ্গণের স্থান বাড়ানো যে এখন সময়ের দাবি, তা কর্তৃপৰের গোচরে নেয়া উচিত। এদিন এত লোক সমাগম হয়েছিল যে, সারা মেলার আকাশেই ভাসছিল ধুলাবালি। অনেকে ধুলাবালি সহ্য করতে না পেরে দ্রম্নত মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেছে। এদিন বাংলা একাডেমী ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার। কবিতা, উপন্যাস, গবেষণা ও শিশুসাহিত্যে মোট ছ'জনকে এবার পুরস্কার দিচ্ছে একাডেমী। এদিকে পনের্াগ্রাফির সাপস্নায়ার যৌবনযাত্রার স্টলটিতে শুক্রবার কাউকে দেখা যায়নি। কবে স্টলের ব্যানারটি ঝুলছিল। এ প্রসঙ্গে এখনও একাডেমী কোন সিদ্ধানত্ম নেয়নি বলে জানালেন মেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহিদা বেগম। টানা তিন দিনের ছুটি শুরম্ন হয়ে যাওয়ায় মানুষের ঢল তো ছিলই, কবি, সাহিত্যিকদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে অনেক। এদিন মেলায় দেখা গেছে লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আয়াত আলী পাটোয়ারী, নাসরীন জাহান, কবি আসাদ চৌধুরীসহ অনেককে।

বাংলা একাডেমী পুরস্কার
বাংলা একাডেমী এদিন ২০০৯ সালের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এবার কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন দু'জন। তাঁরা হলেন কবি অরম্ননাভ সরকার ও কবি রবিউল হুসাইন। উপন্যাসেও দু'জন পেয়েছেন। তাঁরা হলেন- আনোয়ারা সৈয়দ হক ও সুশাসত্ম মজুমদার। গবেষণায় পেয়েছেন ড. আবুল আহসান চৌধুরী এবং শিশুসাহিত্যে ছড়াকার রফিকুল হক দাদু ভাই। বাংলা একাডেমীর এবারের এই পুরস্কার প্রসঙ্গে কবি হালিম আজাদ বলেন, বাংলা একাডেমীর পুরস্কারের জন্য এবার ব্যক্তি নির্বাচন সঠিক হয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের হাতেই এবার পুরস্কার তুলে দিতে পারছে একাডেমী। এদের আরও আগেই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের সঙ্গে এবারের তালিকার তুলনা করলেই বোঝা যায়, সমস্যা কোথায় ছিল?

পর্নোগ্রাফির স্টল
বাংলা একাডেমীর গর্ব ও অহঙ্কারকে ধুলায় মিশিয়ে দিল যে পর্নোগ্রাফির স্টল, তা নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধানত্মে আসতে পারেনি একাডেমী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই_ বাঙালীর এই সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের সংগঠন যৌবনযাত্রার স্টলে শুক্রবার কাউকে দেখা না গেলেও স্টলে যৌবনযাত্রার ব্যানারটি লাগানো ছিল। এতেই সেই সংগঠনের পারপাস সার্ভ হতে দেখা গেছে শুক্রবার। কারণ শুক্রবারের প্রতিটি পত্রিকায় পর্নোগ্রাফির এই স্টলের খবর ছাপা হওয়ায় এদিন টিনএজারদের দেখা গেছে সেই ব্যানার থেকে যৌবনযাত্রার ওয়েব সাইটের নম্বরটি টুকে নিচ্ছে। এদিন এ স্টলে যৌবনযাত্রার কাউকে দেখা যায়নি, অন্যপ্রকাশের বই বিক্রি করতে দেখা গেছে এই স্টলে। যে বই বিক্রি করছিল, সে অন্যপ্রকাশের কেউ কিনা জানা যায়নি, তবে সব বই-ই ছিল অন্যপ্রকাশের। পর্নোগ্রাফির এই স্টলটি প্রসঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য সচিব সাহিদা বেগম বলেন, যৌবনযাত্রা ফোরাম দাবি করেছে ,এটা সাবোটাজ। তাঁদের ওয়েব সাইটে কেউ পর্নোগ্রাফির এসব স্টিল ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের পৰের একটি সংগঠন বলেও দাবি করছে। তাদের দাবি নয়, আপনাদের বক্তব্য বলুন? এর জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই- এর পৰে জনমত গঠন করবে বলেই আমরা তাদের স্টল দিয়েছি। যৌবনযাত্রা নামটি কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই অনুভূতির সঙ্গে যায়? এর জবাবে তিনি বলেন, তা যায় না । তবে আমরা এই স্টল যে ফোরামের তাদের সঙ্গে আজকালের মধ্যেই বসব, তখন সিদ্ধানত্ম নেব। তিনি আবারও বলেন, তারা বলেছে , তারা সাবোটাজের শিকার। শীঘ্রই তারা তাদের ওয়েব সাইট আপডেট করবে। এ বিষয়ে যৌবনযাত্রা একটি প্রতিবাদও পাঠিয়েছে । কিন্তু প্রতিবাদলিপিতে কোথাও লেখেনি যে , তাদের ওয়েব সাইটে কোন নগ্ন ছবি ছিল না। এখন সহজেই বোঝা যাচ্ছে, যৌবনযাত্রা তাদের কার্যসিদ্ধির জন্য ওয়েব সাইট আপডেট করে বাংলা একাডেমীর সঙ্গে আলোচনায় বসবে।

নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২০৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতার বই, ৫৭টি। উপন্যাস ২৭টি, প্রবন্ধ ১৯টি, গল্প ১৩টি, ছড়া ও মুক্তিযুদ্ধের বই ১১টি করে। আর বাকি অন্যান্য বই। এদিনের উলেস্নখযোগ্য বই হলো মৃত্যুঞ্জয় রায়ের বাঙলার ঐতিহ্য এনেছে ঐতিহ্য, মোলস্না নাসিরম্নদ্দিনের ১০০ গল্প এনেছে বিভাস, সুমন কুমার দাশের শাহ আব্দুল করিম এনেছে অন্বেষা, নজরম্নল হক খানের বাংলার চুটকি এনেছে মেরিট, বিদু্যত রঞ্জন দেবনাথের বাংলাদেশের ছবি এনেছে উৎস, ড. আবুল আজাদের যুদ্ধকন্যা এনেছে গেস্নাব, মোসলে উদ্দিন রিফাতের ইতিহাসের রূপরেখায় লালমোহন এনেছে মাম্মী ও আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের মূর্তিপঁূজার গোড়ার কথা এনেছে জ্ঞান।

No comments

Powered by Blogger.