বহরমপুর-ভেড়ামারা সরবরাহ লাইনে বিদ্যুত আনা হচ্ছে- স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শুরু হচ্ছে আজ

 ভারত থেকে বিদু্রত আমদানি এবং অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করতে আজ শুক্রবার ঢাকায় দুই দেশের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শুরু হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বিদু্যত সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ এবং ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের বিদু্যত সচিব এইচএস শমর্া।
বৈঠকে আড়াই শ' মেগাওয়াট বিদু্যত আমদানির অবকাঠামো নিমর্াণ, বাংলাদেশে বন্ধ বিদু্যত কেন্দ্রগুলোর চালু করা এবং বিদু্যত খাতের দতা বৃদ্ধিতে কারিগরি সহায়তার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। বিদু্যত সচিব আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, স্টিয়ারিং কমিটির এই বেঠকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ২৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ লাইন নিমর্াণ নিয়ে আলাপআলোচনা হবে। সরবরাহ লাইন নিমর্াণের জন্য আগামী মাসে দরপত্র আহ্বান করা হবে। যাচাইবাছাই শেষে জুলাইয়ের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হবে। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত নিমর্াণ কাজ শেষে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে প্রতিশ্রম্নত বিদু্যত পাব বলে আমরা আশা করছি।
বৈঠকে যোগ দিতে এইচএস শমর্ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসে পেঁৗছেছে। সকালে দুই দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা বৈঠক করেছেন। তারা গ্রিড নিমর্াণ এবং বিদু্যত খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সূত্র জানায়, স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে পর দুই দেশের প্রতিনিধিরা একটি বিদু্যত কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন। তারা দীর্ঘদিনের পুরনো বিদু্যত কেন্দ্রগুলোর সমতা বাড়ানোর উপায় খতিয়ে দেখবেন।
সূত্র জানায়, জানুয়ারির শুরম্নতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে স্বারিত যৌথ ঘোষণার ৩১ নম্বর ধারায় বাংলাদেশকে প্রায় আড়াই শ' মেগাওয়াট বিদু্যত দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে ভারত। আমদানি করা এই বিদু্যতের জন্য উপকেন্দ্র নিমর্াণ করা হবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। এর পরপরই বাংলাদেশ ও ভারতের একটি বিশেষজ্ঞ দল উপকেন্দ্র নিমর্াণের প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে বলে সূত্র জানায়। দলটি ভেড়ামারায় ৬০ মেগাওয়াটের বিদু্যত কেন্দ্র, পদ্মা নদী ও রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমি পরিদর্শন করেন। তারা রামকৃষ্ণপুর এলাকায় রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমি উপকেন্ত্র নির্মাণের উপযোগী বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে। জমিটির পাশেই রয়েছে পদ্মা নদী এবং ২৩০ কেভি বিদু্যত সঞ্চালন লাইন। অবস্থানগত সুবিধার কারণে এই লাইন দিয়ে সহজে এবং কম খরচে ভারত থেকে আমদানি করা ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত জাতীয় গ্রিডে সংযোজন করা সম্ভব বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রায় ১শ' একর জমির ওপর উপকেন্দ্রটি নিমর্াণ করা হবে এবং ২৩০ কেভির সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে এই উপকেন্দ্রে বিদু্যত আনা হবে। পরে তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
অব্যাহত বিদু্যত সঙ্কটের সমাধানে গত সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারত সফরের সময় নয়াদিলস্নীর কাছ থেকে বিদু্যত কেনার প্রসত্মাব দেয় ঢাকা। বাংলাদেশের প্রসত্মাবে সম্মতি দিয়ে ভারত প্রথম দফায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১শ' মেগাওয়াট বিদু্যত দিতে রাজি হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে তা বাড়িয়ে আড়াই শ' মেগাওয়াট করার প্রতিশ্রম্নতি দেয় ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত থেকে আমদানি করা বিদু্যত কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ঈশ্বরদী সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হবে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বহরমপুর লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদু্যত রফতানি করবে ভারত। তবে বিদু্যত আনার জন্য দুইদেশের সীমানত্মে প্রায় ৬০ কিলোমিটারের একটি গ্রিড নিমর্াণ করতে হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সরবরাহ লাইনগুলো ২৩০ কেভি ভোল্টের হলেও ভারতের সরবরাহ লাইন ৪০০ কেভি ভোল্টের। উভয় লাইনের সমন্বয়ের জন্য গ্রিড ছাড়াও মাঝামাঝি দূরত্বে একটি সাব-স্টেশন নিমর্াণ করতে হবে। বিদু্যত খাতের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে নবেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বিদু্যত সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে যায়। প্রতিনিধি দলটি ভারতের কয়েকটি বিদু্যত কেন্দ্র পরিদর্শনের পাশাপাশি দেশটির বিদু্যত বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে দু'দেশের মধ্যে বিদু্যত সরবরাহ লাইনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে ভারতের বিদু্যত মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশ সফর করে। সূত্র জানায়, ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদু্যত আমদানির চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভুটান সফরের সময় এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প থেকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রসত্মাব দেয়া হয়। সূত্র জানায়, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদু্যত আমদানি করতে ভারতের গ্রিড ব্যবহার করতে হবে। ভুটান থেকে বিদু্যত আনতে প্রায় ১শ' কিলোমিটারের গ্রিড নির্মাণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.