জনগণের সঙ্গে চলুন, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান- মিরপুরে স্টাফ কলেজ গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আনত্মরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর সেনানিবাসের মিরপুর হলে ২০০৯-১০ স্টাফ কোর্স শিৰা সমাপনী গ্র্যাজুয়েশন উত্তীর্ণদের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সশস্ত্রবাহিনী সততা, সাহস ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান থেকে যাঁরা পিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, পেশাদারিত্ব বাড়াতে প্রশিৰণের কোন বিকল্প নেই। খবর বাসসর।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী কলেজ গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আস্হাব উদ্দিন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
আনত্মর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বের প্রধান নিরাপত্তা সমস্যা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ৰেত্রে সবাইকে একত্রে লড়াই করতে হবে। অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকির বিষয়গুলোর দিকে চোখ বন্ধ করে রাখা আজকের বিশ্বে সম্ভব নয়। সে ৰেত্রে নিজের দেশের নিরাপত্তাই বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
'জাতির প্রয়োজনে যে কোন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আনত্মরিকতা দেখাবে'-আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'গত মাসে সেনাবাহিনীর প্রশিৰণ পরিদর্শনের সময় দরিদ্র জনগণকে চিকিৎসা দেয়া ও রাসত্মা মেরামতের মতো ঘটনাগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শানত্মিপ্রিয় জাতি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়_ এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল মন্ত্র। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রৰায় আমাদের প্রয়োজন একটি প্রশিৰিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সফলতা আসবে তখনই, যখন আপনারা দেশের জনগণের সঙ্গে চলবেন এবং আপনাদের কর্মকা-ে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবেন। এর থেকে বড় দেশসেবা আর কিছু হতে পারে না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা করার মতো সাহস ও দৰতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেনা কর্মকর্তারা সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করবেন। তাদের সমস্যা বা পেশাগত অসুবিধার কথা ধৈর্যের সঙ্গে শুনবেন এবং সমাধান করবেন। কোন সমস্যাকেই অবহেলা বা ছোট করে দেখা বা চাপা দিয়ে রাখা উচিত নয় বলে তিনি উলেস্নখ করেন।
শেখ হাসিনা জুনিয়র অফিসার ও অন্যান্য সেনা সদস্যের ভুল-ভ্রানত্মির ব্যাপারে সহনশীল হওয়ার এবং প্রয়োজনে অপরাধভেদে কঠিন শাসত্মির বিধান অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীবান্ধব দল। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই অন্য যে কোন সরকারের তুলনায় যুগানত্মকারী অগ্রগতি হয়েছে। দেশের যে কোন সেনানিবাসে বর্তমান সরকারের বিগত সময়ের উন্নয়ন কর্মকা-ের নিদর্শন চোখে পড়বে।
তিনি বলেন, 'এবারও দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব বাড়াতে ও কল্যাণে বিভিন্ন পদৰেপ নিয়েছি। আমরা তিন বাহিনীর খাবারে ভারসাম্য এনেছি, যাতে করে সৈনিক ভাইয়েরা দুই বেলা মাছ অথবা মাংস খেতে পারে। নতুন পে-স্কেল দিয়ে বেতন বাড়ানো হয়েছে। জাতিসংঘ মিশন এলাকা থেকে স্বল্পমূল্যে ও কিছু ৰেত্রে বিনামূল্যে টেলিফোনে দেশে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সৈনিকদের অবসর ছুটি বা ছুটির অর্থের পরিমাণ ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাসের সমপরিমাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সকল অফিসারের জন্য পস্নটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন থেকে জুনিয়র অফিসারগণ মাসে মাসে বেতনের স্বল্প অংশ জমিয়ে চাকরি শেষে পস্নটের মালিক হতে পারবেন।
তিনি বলেন, সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জাতির জনক হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া পিলখানা হত্যাকা-ের বিচার শুরম্ন করা হয়েছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরম্ন হতে যাচ্ছে।
তিনি গ্রাজুয়েট অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের কর্মময় জীবনের সফলতা কামনা করেন।
স্বাগত ভাষণে কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এই গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের সংৰিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
আইএসপিআর জানায়, এই কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯০ জন, নৌবাহিনীর ১৬ জন এবং বিমান বাহিনীর ২১ জন ছাত্র-অফিসার এবং বন্ধুপ্রতীম ১৬ দেশের ৩৪ জন বিদেশী ছাত্র-অফিসারসহ ১৬১ জন অংশগ্রহণ করেন। দেশগুলো হচ্ছে_ ব্রম্ননাই দারম্নসসালাম, চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্দান, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজিরিয়া, পাকিসত্মান, ফিলিসত্মিন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুদান এবং তুরস্ক ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগীয় প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সচিববৃন্দ, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের (বিইউপি) উপাচার্য এবং উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.