তিন কর্মসূচিতে প্রায় অচল রাজধানীর জীবনযাত্রা

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বেসরকারি শিক্ষকদের কর্মসূচি থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। বিকেল থেকে এই অবস্থা অসহনীয় হয়ে পড়ে।
গতকাল সকাল থেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের শিক্ষকেরা অবস্থান নেন প্রেসক্লাবের সামনে। বিকেলে আওয়ামী লীগ গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। প্রায় একই সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত আনন্দ শোভাযাত্রা করে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।
তিনটি কর্মসূচির কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো কখনো পুরোপুরি, আবার কখনো আংশিক বন্ধ থেকেছে। এমনিতেই নগরে যানজট লেগে থাকে। তবে প্রধান সড়ক দখল করে কর্মসূচির কারণে তা নগরবাসীর কাছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেয়।
গাবতলী থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত আসতে একটি ৮ নম্বর গাড়ির সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার বেশি। গাড়ির চালক মো. জসিম বলেন, যে অবস্থা তাতে সায়েদাবাদ যেতে আরও দুই ঘণ্টার মতো লাগবে। ওই গাড়িতে টিকাটুলী পর্যন্ত যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী রকিবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত চলে আসতে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। আর গাবতলী থেকে টিকাটুলী যেতেও একই সময় লাগছে। এভাবে চললে মানুষ কাজ করবে কীভাবে।’
সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশ। প্রথমে সড়কের ডান পাশে বসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়কের একটি লেন দিয়ে যান চলাচল করছিল। কিন্তু এরপর ডান পাশের সড়ক আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষকেরা। ফলে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সচিবালয়ের সামনের সড়ক ও পল্টন মোড়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। প্রেসক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত এটুকু সড়ক পার হতে গাড়িগুলোকে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। একইভাবে মতিঝিল থেকে শাহবাগের দিকে আসা গাড়িগুলোকে সমান দুর্ভোগে পড়তে হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কদম ফোয়ারা, পল্টন মোড় ও সচিবালয়ের আশপাশের প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ির সারি দীর্ঘ হতে থাকে।
প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপিপন্থী একটি সংগঠনের মানববন্ধন ওই এলাকায় ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা ও বিএনপি-জামায়াতের ‘দেশবিরোধী’ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত মানববন্ধন করে আওয়ামী লীগ। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে তা শুরু হয়ে তা শ্যামলী, আসাদগেট, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, বসুন্ধরা সিটি, সোনারগাঁও হোটেল, শাহবাগ, হাইকোর্ট, পুরানা পল্টন মোড়, শহীদ নূর হোসেন চত্বর, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী সুপার মার্কেট হয়ে সায়েদাবাদে গিয়ে শেষ হয়। সাড়ে তিনটায় কর্মসূচি থাকলেও বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নির্ধারিত স্থানে আসতে থাকেন। তাই দুপুরের পর থেকে এ কর্মসূচির কারণে যানজট শুরু হয়। গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কখনো চলা শুরু করলেও গতি ছিল খুবই কম।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি যখন চলছিল, সেই সময় নয়াপল্টন থেকে শুরু হয় স্বেচ্ছাসেবক দলের শোভাযাত্রা। প্রায় এক ঘণ্টা পর এটি মগবাজারে এসে শেষ হয়। এর আগে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দুপুর থেকেই ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

No comments

Powered by Blogger.