এসপির জমি দখল নিয়ে তোলপাড় ॥ ঘটনা বাগেরহাট গোপালগঞ্জ সীমান্তে- গোপালগঞ্জ ডিসি বলেন- এসপি মিজান কাজটি ঠিক করেননি, মিজান বলেন_ ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা রোধেই ব্যবস্থা নেই

 বাগেরহাটের এসপি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জমি দখল চেষ্টার খবরে সর্বত্র তোলপাড় চলছে। বৃহস্পতিবার ঐ এসপি পুলিশ দিয়ে গোপালগঞ্জের চর গোবরা এলাকার এক শ' একর জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে গোপালগঞ্জের জমি মালিকরা বাধা দেয়।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকলে শেষ পর্যনত্ম রণে ভঙ্গ দেন তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর রাতের বেলায় কে বা কারা এসপির লাগানো সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। এলাকা থেকে পুলিশ পাহারাও তুলে নিয়েছে বাগেরহাট পুলিশ। গোপালগঞ্জের ভূমি মালিকদের কি পরিমাণ জমি কেটে নিয়েছে তা সরেজমিনে মেপে এসেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট তার উর্ধতন কর্তপৰকে পাঠাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
বাগেরহাটের এসপির নিজে দাঁড়িয়ে থেকে জমি দখল চেষ্টার ঘটনায় জেলাবাসী অবাক হয়েছেন। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেবে যে পুলিশ, সেই পুলিশই যখন দখলদারের ভূমিকায় নামে তখন সাধারণ মানুষের আর দাঁড়াবার জায়গা কোথায় এমন মনত্মব্য গোপালগঞ্জের অভিজ্ঞমহলের। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলার সীমানত্মবর্তী সদর উপজেলার চর-গোবরা এলাকায় পরিদর্শনকালে লিয়াকত হোসেন সরদার, বিজয় কৃষ্ণ পাইক, রতন কুমার পাইক, রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস, মোক্তার হোসেন সরদার, ফিরোজ আলী সরদারসহ বেশ কয়েকজন জমির মালিক বলেছেন, তিনদিন ধরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশবাহিনী ওই এলাকা ঘিরে রাখে। তার নির্দেশে পুলিশ আমাদের নিজ-জমিতে যেতে দিচ্ছে না। পুলিশের পাহারায় এসব জমির ফসল নষ্ট করে জমির মধ্য থেকে মাটি কেটে বেড়িবাঁধের মতো করে রাসত্মা তৈরি করা হচ্ছে। বুধবার রাতে তাদের ইচ্ছামতো ক্রয়সূত্রে মালিক উলেস্নখ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাম-পদবিসহ বিভিন্ন সাইনবোর্ড এসব জমিতে পুঁতে রাখা হয়। গোবরা ইউপি মেম্বার আবুল হোসেন সরদার জানান, এ জায়গা-জমি চর গোবরা গ্রামের মানুষের। অথচ বাগেরহাট পুলিশ প্রশাসনের লোকজন এসব জমি দখলে নেমেছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান টুটুল জানান, এসব জমির মালিকরা বাপ-দাদার আমল থেকে ভোগ-দখল করে আসছে। এটি এ এলাকার মানুষের পৈত্রিক সম্পত্তি। এ বিষয়টি তিনি বাগেরহাট পুলিশকে বলতে গেলে তাকেও তারা নানা হুমকি দেয়।
ওইসব জমির একটি জমিতে ঘরবাড়ি তুলে তিন বছর ধরে বসবাসকারী নাছিমা বেগম (৩৫) বলেছেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে বিভিন্ন জমিতে অনেক সাইনবোর্ড পুঁতে রাখে। এ সময় একটি সাইনবোর্ড তার জমিতেও পুঁতে ফেললে তিনি পুলিশকে বাধা দেন। কিন্তু পুলিশ তাকে হুমকি দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। চলে না গেলে তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে বলেও তাকে পুলিশ হুমকি দেয় বলে তিনি জানান।
এলাকাবাসী আরও জানিয়েছে, পুলিশ পাহারায় বেশ কিছুসংখ্যক মাটিকাটা-শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরম্ন হলে এলাকাবাসী ও ওইসব জমির মালিকগণ এতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বাকবিত-া হয়। এক পর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসনের প থেকে এএসপি (সার্কেল) হামিদুল হক ঘটনাস্থলে পেঁৗছে ওইসব জমিতে মাটিকাটা বন্ধ করেন এবং বাগেরহাট জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে মাটিকাটা শ্রমিকদের সেখান থেকে বিদায় করে দেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, জায়গাটি বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের সিমানত্মবতর্ী। অথচ গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই মাটি কাটার কাজ করা হয়েছে। শতাধিক মাটি কাটা শ্রমিক মাটি কাটতে থাকলে গোপালগঞ্জের অধিবাসী জমি মালিকরা তাদেরকে বাধা দেয়। এ খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান এবং বাগেরহাটের পুলিশ সুপারকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার এবং দুই জেলার কর্মকর্তাদের সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী পরবতর্ী কাজ করার অনুরোধ জানান। গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল কুদ্দুছ আমিন তাকে বাগেরহাটের এসপি বস্নাকমেইল করেছে এমন মনত্মব্য করে বলেন, বিরোধীয় জমি বাগেরহাটের মধ্যে। সেখানকার এসপি যদি কিছু করে তাহলে আমাদের কিইবা করার আছে বলেন। তবে আমার এলাকার মধ্যে যদি আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি হতে দেখি তাহলে তখন ব্যবস্থা নেব। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারম্ননের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বাগেরহাটের এসপি জোর করেই জমি দখলে নেমেছিলেন। ওখানে বেড়িবাঁধ বা সীমানা পিলারেরও কোন কাজ নেই বা সরকার এখানে কোন প্রকল্প গ্রহণ করেনি। একতরফাভাবে জমি দখল করতে গিয়েছিল বাগেরহাটের এসপি। তিনি বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন এবং জমি দখলে নামেন। বিষয়টি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পৰ থেকে উর্ধতন কর্তৃপৰকে জানানো হবে বলে তিনি জানান। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, তাঁর বাড়িও গোপালগঞ্জে। অতএব দেশী লোকজনের জায়গা তিনি কেন দখল করবেন। সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্যই মূলত মাটি কাটার কাজ শুরম্ন হয়েছিল। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, এসপি যা করেছে তা মোটেই ঠিক করেননি। খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি নিয়ে তারা দুই জেলার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিয়ে বসবেন বলে জানান।

এসপি মিজান যা বলেন_
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের সীমানায় মধুমতী নদীর চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রা করতে গিয়ে পুলিশও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ বিরোধের শানত্মিপূর্ণ সমাধানের জন্য সীমানা-আইল নির্ধারণ করতে সীমানত্মবতর্ী এ চরের মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দুই জেলার সীমানত্মবতর্ী মধুমতীর ভরাটী চর দখলকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলে আসছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এসপি মীজানুর রহমান বলেন, কথিত ভূমিদসু্য রাজু গং পুনরায় ঐ চরে দখল প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর হলে বড় ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবার উপক্রম হলে মোলস্নাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোলস্না মোতাহার হোসেন, গাড়ফা ইউপি চেয়ারম্যান গাউসুল হক ও উদয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারসহ স্থানীয় বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি ঐ চরের সমস্যা সমাধানের জন্য আমার নিকট আবেদন করেন। এরই ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রা ও দীর্ঘ বিরোধের শানত্মিপূর্ণ সমাধানের ল্যে আমি বিষয়টি গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারকে জানাই।
সে প্রেেিত গত ১৭ ফেব্রম্নয়ারি বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যনত্ম আমি গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নিয়ে সরেজমিন বাগেরহাট জেলার মোলস্নাহাট থানাধীন গিরিশনগর ও গাড়ফা মৌজা এবং গোপালগঞ্জ জেলাধীন চর গোবরা মৌজার মধ্যবর্তী স্থানে এক বৈঠক করি এবং শানত্মিপূর্ণভাবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জেলার পূর্বনির্ধারিত সীমানা চিহ্ন উভয় জেলার আমিনের উপস্থিতিতে আইল দেয়া হয়। ঐ সময় গোপালগঞ্জের চর গোবরা ইউনিয়ন ও বাগেরহাটের মোলস্নাহাট উপজেলার বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি উপস্থিল ছিলেন। এর পরদিন ১৮ ফেব্রম্নয়ারি সকালে ঐ স্থানে কথিত ভূমিদসু্য রাজু গংয়ের লোকেরা গোলমাল সৃষ্টির ল্যে মাইকিং করে শানত্মিপ্রিয় জনগণকে উত্তেজিত করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে। এ সময় চরম উত্তেজনা দেখা দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা অন্য কারও ব্যক্তিগতভাবে ক্রয়কৃত সম্পত্তির সঙ্গে চরের দখলকৃত জমির কোন সম্পর্ক নেই।

No comments

Powered by Blogger.