গ্রামীণ জনপদ আলোকিত সৌরবিদ্যুতে- বৃদ্ধি পাচ্ছে চাহিদা, ঘটছে নীরব বিপ্লব by শাহীন রহমান

 দেশে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সৌর বিদ্যুতের চাহিদা। সৌর বিদ্যুত ব্যবহারের ৰেত্রে ঘটছে নীরব বিপস্নব। গ্রামীণ জনপদের অনেকটাই এখন আলোকিত হচ্ছে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে।
বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সাধারণ মানুষের কাছে সৌর বিদ্যুতের অধিক দাম যেন গৌণ হয়ে পড়ছে। ডাউন পেমেন্ট সুবিধা থাকার কারণে কিসত্মি পরিশোধের মাধ্যমে সহজেই গ্রাহক হওয়া সম্ভব হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। ইডকল সূত্রে জানা গেছে শুধু গত বছরেই সৌর বিদ্যুতের গ্রাহক বেড়েছে দেড় লাখের বেশি। সারাদেশে এখন সাড়ে চার লাখ পরিবার সৌর বিদু্যতের সুবিধা ভোগ করছে। এর মাধ্যমে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২০ মেগাওয়াট বিদু্যত। প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনা করা সম্ভব হচ্ছে। এ হিসাব শুধু সোলার হোম সিস্টেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরেও সেল ফোনের টাওয়ার পরিচালনা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ৰেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সৌর বিদু্যত। তবে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সুবিধা ঘোষণা দেয়ার পরও শহর অঞ্চলে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।
দেশের প্রত্যনত্ম অঞ্চল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও উপকূলীয় এলাকায় ১৯৯৭ সাল থেকে শুরম্ন হয় সৌর বিদু্যতের ব্যবহার। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকলের) সহায়তায় সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। প্রথম দিকে ইডকলের সহায়তায় গ্রামীণ শক্তি প্যানেল স্থাপনের কাজ শুরম্ন করলেও চাহিদা বৃদ্ধির পর অনেক প্রতিষ্ঠান এ কাজে এগিয়ে এসেছে। এখনও দেশের ৭৫ ভাগ প্যানেল বসানোর কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতের ২ মাসে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম। গ্রামীণ শক্তি সূত্রে জানা গেছে প্রথম বছরে তারা ২৮৮ টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে পেরেছিল। কিন্তু গ্রাহক সংখ্যা হাজার পার করতে সময় লাগে আর ২ বছর। ১৯৯৯ সালে দেশে সৌর বিদু্যতের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়ায় ১৮শ' ৩৪ জনে। মূলত সচেতনতার অভাব এবং এ বিষয়ে কোন জ্ঞান না থাকার কারণে তখন আশানুরূপ ব্যবহারকারী পাওয়া যায়নি। ১০ হাজার গ্রাহক পেতে ২০০২ সাল পর্যনত্ম অপেৰা করতে হয়। ২০০৫ সালে পূর্ণ হয় ৫০ হাজার গ্রাহক। ২০০৮ সালের পর থেকে দেশে সৌর বিদু্যতের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। এ বছর শেষে সৌর বিদু্যতের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫ জনে। ২০০৯ সাল শেষে গ্রামীণ শক্তির গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজারে। বর্তমানে তা সাড়ে ৩ লাখে পেঁৗছেছে বলে জানা গেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে এ সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামীণ শক্তির বছর ওয়াইজ হিসেবে দেখায় যায় শুধু ২০০৯ সালে সৌর বিদু্যতের গ্রাহক বেড়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭শ'। ২০০৮ সালে বৃদ্ধি পেয়েছিল ৭৫ হাজার ৮শ' জন গ্রাহক এবং ২০০৭ সালে বেড়েছিল ৪৮ হাজার ৩শ' গ্রাহক। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় সৌর বিদু্যতের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গ্রামীণ শক্তিই প্রতিমাসে ১৩ হাজার করে সোলার সিস্টেম স্থাপন করছে। ২০০৯ সালের স্থাপিত প্যানেলের মধ্যে মার্চ মাসে স্থাপন করা হয় ৭ হাজার, এপ্রিলে ৮ হাজার ৫শ' মে মাসে ৯ হাজার ২শ', জুন মাসে ৯ হাজার ৫শ', জুলাইতে ৯ হাজার ৮শ', আগস্টে ১২ হাজার ১শ', সেপ্টেম্বরে ১৩ হাজার ১শ', অক্টোবরে ১২ হাজার ১শ', নভেম্বরে ১২ হাজার ২ শ' এবং ডিসেম্বরে ১০ হাজার ৯শ'টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়। অথচ ২০০৮ সালে প্রতিমাসে সৌর বিদু্যতের ব্যবহার ছিল ৪ হাজারের নিচে। গ্রামীণ শক্তির সহকারী মহাব্যবস্থাপক ওয়াশিম রেজা জানান, ২০১০ সালের মধ্যে আরও ২ লাখ ২০ হাজার সোলার সিস্টেম স্থাপনের টার্গেট রয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এখন অধিকহারে সৌর বিদু্যতের ব্যবহার বাড়ছে। তবে শীতে ২ মাস গ্রাহক চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সারাদেশে গ্রামীণ শক্তির স্থাপিত সোলার সিস্টেমের উৎপাদন ৰমতা রয়েছে ১৬.৫ মেগাওয়াট। প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে হিসেব করলে ৬৬ মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ শক্তি পরীৰামূলকভাবে ৪টি মোবাইল টাওয়ার সৌরবিদু্যতের মাধ্যমে চালু রেখেছে। যার প্রতিটির উৎপাদন ৰমতা রয়েছে ৬.৫ কিলোওয়াট বিদু্যত। ২০১২ সালের মধ্যে ১০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌর বিদু্যত থেকে উৎপাদিত বিদু্যত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের মাধ্যমে বিদু্যতের ঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারী সহায়তা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.