সারাদেশে অভিযান ॥ ৬৯ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আটক

 দেশব্যাপী চলমান চিরুনী অভিযানে ঢাকা থেকে ৮৮ শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার গভীর রাতে ৫৭ জনকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার বাকিদের গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে। এছাড়া ঢাকার বাইরে। সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ৬৯ জন জামায়াত-শিবির নেতাকমর্ীকে আটক করা হয়েছে। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে ২৯ জনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যনত্ম ১১ নেতাকমর্ীকে আটক করে। বগুড়ায় শুক্রবার রাতে পুলিশ শিবির পরিচালিত কয়েকটি মেসে অভিযান চালিয়ে ৭ শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করে। আটোয়ারি থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৭ যুবককে শিবির কমর্ী সন্দেহে গ্রেফতার করে। পঞ্চগড়ে জামায়াত পরিচালিত মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলার দৌলতখানে শিবির সন্দেহে দিনাজপুরের দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। নওগাঁয় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক শিবির ক্যাডারকে আটক করে। ঝিনাইদহে শুক্রবার রাতভর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়া থেকে পুলিশ এক শিবির নেতাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ নোয়াখালীতে জামায়াত-শিবিরের তিন নেতাকমর্ীকে আটক করেছে। এদিকে সিলেটে জামায়াত-শিবিরের তা-ব এখনও থামেনি। সেখানে বিৰোভ ও সমাবেশ করে। সিলেটে জামায়াত-শিবিরের দু'শ' জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ পটুয়াখালীতে জিহাদী বই, সিমকার্ড, মেমরিকার্ড ও শিবিরের পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের।
যশোর কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জন শিবির কর্মীকে আটক করেছে। এদের কাছ থেকে লোহার রড ও ৪টি বোমা উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে শুক্রবার রাতে ২৯ জনকে আটক করা হয়। রাতে আটককৃতদের শনিবার আদালতে সোপর্দের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক শিবির কর্মীরা হচ্ছে, ইমদাদুল হক, নুরম্নজ্জামান, আরিফ মাহমুদ, তানভীর হোসাইন, তৌহিদুর রহমান, আবু সাইদ, শাহারিয়ার, ইসরাইল, মফিজুর, দেলোয়ার, বাদশা, রশিদ, জাহিদ, মাহবুব, রজিবুল, রফিকুল, তারিকুল, রহমান, আশিকুর, ইয়াসির, মনোয়ার, রাজু, ইমরান, জিলস্নুর, জুলফিকার, আজিজুল, আবু হাসান, আল মামুন ও জসিম উদ্দিন। শুক্রবার রাতে পুলিশ এদের শহরের খড়কি এলাকার দু'টি ছাত্রাবাস ও ঢাকা রোডের জামায়াত কার্যালয়ের পাশে একটি অফিস থেকে আটক করে। আটককৃতরা অধিকাংশই যশোর এম এম কলেজের ছাত্র। এদের যশোর এম এম কলেজে সংঘটিত ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গাইবান্ধায় জামায়াত-শিবির বিরোধী অভিযানে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যনত্ম ব্যাপক ধরপাকড় শুরম্ন করা হয়। এসময় পলাশবাড়ী থেকে জামায়াত-শিবিরের ৪ জন এবং গাইবান্ধায় ৭ শিবির কমর্ীকে আটক করেছে পুলিশ।
উলেস্নখ্য, পলাশবাড়ীতে ছাত্রলীগের প্রতিবাদ মিছিলে হামলা করার অভিযোগে পলাশবাড়ী উপজেলার জামায়াত নেতা ইউনুছ আলী, সাবেক সভাপতি মুসা মিয়া, সাবেক সভাপতি আদম আলী ওরফে আজাদুল, সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানকে আটক করা হয়। এছাড়া গাইবান্ধা জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার গোপন ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামায়াত-শিবির কমর্ীদের মধ্যে থেকে মাহমুদুল কবির, মোঃ রাসেল, শাহজাহান মিয়া, নুরম্নজ্জামান, সামিউল হক, আলমগীর কবির ও জাকির হোসেনকে আটক করা হয়। এরাও পলাশবাড়ীতে ছাত্রলীগের প্রতিবাদ মিছিলে হামলা করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার আসামি।
শুক্রবার রাতে বগুড়ায় পুলিশ শিবির পরিচালিত কয়েকটি ছাত্রবাসে অভিযান চালিয়ে ৭ শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলো-নুরম্নন্নবী, সোহেল রানা, গোলাম মোসত্মফা, মেহেদী হাসান, জুয়েল হোসেন, লিমন মিয়া ও তাজুল ইসলাম। বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর দিকে জামায়াত শনিবার বিকালে মিছিল বের করার চেষ্টা করলেও পুলিশের কড়া অবস্থানের কারণে তারা মিছিল বের করতে পারেনি। তবে সংপ্তি সমাবেশ করেছ।
পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃতরা ২০ ডিসেম্বর বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজে হামলা ও সশন্ত্র তান্ডবের ঘটনায় জড়িত। শিবিরের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত জামিল নগর এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি মেস (ছাত্রাবাস) থেকে ক্যাডারদের গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে আটোয়ারী থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে শিবির কমর্ী সন্দেহে ৭ যুবককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-ছালেহউদ্দিন সুলতান, খায়রম্নল হাছান তুহিন, মাছুম, মাহামুদুল হাছান, শাহজাহান কবির মিলন, নওরোজ পারভেজ মেনন এবং মাইক্রো চালক মোসত্মাফিজুর রহমান রাজু। এদের সকলের উপজেলা রানী শংকৈল, ঠাকুরগাঁও। এদের মধ্যে ছালেহ উদ্দিন সুলতান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র ছিল এবং শিবির ক্যাডার বলে জানা গেছে।
পঞ্চগড় জেলা জামায়াত অফিস ও শিবিরের দুটি মেসে শনিবার দুপুরে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের বিুব্ধ কর্মীরা। তারা জামায়াত অফিসের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র ও দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। বিুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা শহর শাখার জামায়াত সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আবুল বাশার বসুনিয়া, শহিদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মখলেছার রহমান এবং জামাল হোসেনকে বেধরক পেটায়। পুলিশ জামায়াত পরিচালিত মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ্যাডভোকেট আজিজুলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে উচ্ছৃংখলতার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
ভোলার দৌলতখানে শনিবার শিবির ক্যাডার সন্দেহে দিনাজপুরের ২ যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ওই দুই যুবক হচ্ছে দিনাজপুরের কাদের বক্স ম্যামোরিয়াল কলেজের বিবিএ ২য় সেমিস্টারের ছাত্র মোঃ সুজাউর রহমান এবং দিনাজপুর সরকারী কলেজের বিএসএস ২য় বর্ষের ছাত্র মোঃ মাহমুদুল হাসান বিপস্নব।
শুক্রবার রাতে নওগাঁর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিশেষ দল সদর উপজেলার শৈলগাছী গ্রাম থেকে আব্দুলস্নাহ আল মারম্নফ নামে এক শিবির ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছে। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এদিকে জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের গ্রেফতারের লৰ্যে পুলিশ জেলা জুড়ে চিরম্ননি অভিযান শুরম্ন করেছে। এদিকে জেলা শহর ছাড়াও গ্রামগঞ্জের যুবক ছেলেরা বিভিন্ন সেলুনে দাঁড়ি কাটতে ব্যসত্ম হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইদহে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গী মিছিলের ব্যাপক প্রস্তুতি পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। শনিবার সকাল থেকেই শহরে মিছিল করার প্রস্তুতি নেয় জামায়াত-শিবির। তারা জেলা জামায়াত অফিসে সকাল সাড়ে ৭টার সময় এক রম্নদ্ধদ্বার বৈঠক করে শহরে বিােভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়। পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে আয়ুব হোসেন নামে এক জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করে।
শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন মেস থেকে মাসুদুর রহমান নামের এক ছাত্রশিবির নেতাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ওই শিবির নেতা আলিয়া মাদ্রাসার কামিল শেষ বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া পুলিশ ওই মেসের বিভিন্ন রম্নমে তলস্নাশি চালিয়ে বেশ কিছু ধর্মীয় বই জব্দ করেছে।
নোয়াখালীতে মিছিল শেষে ফেরার পথে শহরের মাইজদী বাজারে জামায়াত ও শিবির কর্মীদের ছাত্র ও যুবলীগের পিটুনীর পর আহত তিন জামায়াত-শিবির কমর্ীকে আটক করেছে সুধারাম থানা পুলিশ। শনিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে দলীয় কর্মী হত্যা ও দেশব্যাপী ধরপাকড়ের প্রতিবাদে বিােভ মিছিল শেষে ফেরার পথে জেলা শহরের মাইজদী বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
সিলেটে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব এখনও থামেনি। শনিবার দুপুরে তারা আবারও জঙ্গী মিছিল বের করে। নগরীর দরগাহ এলাকা থেকে বের হওয়া মিছিল নগরীর বিভিন্ন রাসত্মা প্রদণি করে আম্বরখানা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। পুলিশী বাধা ছাড়াই সেখানে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করে শিবির ক্যাডাররা। অপরদিকে, শুক্রবার র্যাব-পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর জামায়াত-শিবিরের নগ্ন হামলার ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট জেলা দণি জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব যুবায়েরসহ ৫৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করে ২শ' জনের বিরম্নদ্ধে এ মামলা হয়। কোতোয়ালি থানার এসআই মোফাজ্জল বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
পটুয়াখালীর পলিটেকনিক্যাল সড়ক ও আরামবাগে শিবিরের মেস থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কট্থক্তি করে লেখা বই, লাঠি-সোট রড, স্টিলের পাইপ, জিহাদী বই, সিমকার্ড, মেমোরিকার্ড, শিবিরের পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বেলা ১১টায় শিবিরের পলিটেকনিক্যাল রোডের নিয়াজ-নিলয় মেসে শহরে বিােভ মিছিলের প্রস্তুতির গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে ঐ মেস ঘিরে ফেলে ছাত্রলীগ কমর্ীরা। পরে পুলিশ এসে এ সব মালামাল উদ্ধার করে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এ ঘটনায় সদর থানা পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

No comments

Powered by Blogger.