এমপিসহ ১০ নেতা গা ঢাকা, রিমাণ্ডে ৮৬

চবির মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন ওরফে মাসুম হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার জামায়াত-শিবিরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা সফল হয়নি। চট্টগ্রাম মহানগর পরিস্থিতি বর্তমানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের আসামিদের ধরিয়ে দিতে সিএমপির প থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ৮৬ জনকে দু'দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত জামায়াতের এমপিসহ ১০ নেতা গা-ঢাকা দিয়েছে। অপরদিকে চবির ৫টি কটেজে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৪ শিবির ক্যাডারকে। মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডে চবি প্রশাসন একটি তদনত্ম কমিটি করেছে। এছাড়া চবি ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পৃথক পৃথকভাবে ক্যাম্পাস ও নগরীতে বিােভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
মহিউদ্দিন হত্যা ঘটনা পরবতর্ী সময়ে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বিশেষ মতা আইনে গ্রেফতারকৃত ৮৬ জনকে দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শনিবার কোতোয়ালি থানা পুলিশ দুপুরে জামায়াত শিবিরের এ ৮৬ নেতাকর্মীকে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হকের আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড মঞ্জুর হবার পর কোতোয়ালি পুলিশ জানিয়েছে, আদালত থেকে এদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার গ্রেফতারকৃতদের ২০ জনকে প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকিদের জেলহাজত থেকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে এ মামলায় গত শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮৬ জনকে গ্রেফতার করলেও মামলা দায়ের হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার জনের বিরম্নদ্ধে।
শুক্রবারের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের মধ্যে জামায়াতের এমপিসহ শীর্ষস্থানীয় ১০ জন গা-ঢাকা দিয়েছে। এরা হলো_ সাতকানিয়ার এমপি জামায়াত নেতা শামসুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনির চৌধুরী, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) সভাপতি কলিম উলস্নাহ, চট্টগ্রাম মহানগর (দণি) সভাপতি আবদুল জব্বার, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর সেক্রেটারি নজরম্নল ইসলাম, চন্দনপুরা দারম্নল উলুম মাদ্রাসার সভাপতি হাফেজ জিয়াউল হক, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র শিবির সভাপতি আ ন ম হারম্নন, সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি আ ম ম মশরম্নর হোসাইন এবং ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ শাখার সভাপতি এসএম আলিমুল ইসলাম। পুলিশ এদের গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।
শনিবার দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে প্রিজনভ্যানযোগে গ্রেফতারকৃত ৮৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়। বিকেলে তাদের উঠানো হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুল হকের আদালতে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে। রাষ্ট্রপরে কেঁৗসুলি চট্টগ্রাম মহানগর পিপি এ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং এডিশনাল পিপি এ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশসহ আইনজীবীরা মাসুম হত্যার নেপথ্য কারণ উদ্ঘাটন এবং মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ ৮৬ জনকে জিজ্ঞাসবাদ করতে রিমান্ড মঞ্জুরের জোরালো আবেদন জানান। একই আদালতে আসামিপরে কেঁৗসুলিরা তাদের জামিন প্রার্থনা করেন। বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আগামী ২৮ ফেব্রম্নয়ারি মামলার পরবতর্ী তারিখ নির্ধারণ করে।
মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু ॥ মহিউদ্দিন হত্যাকাষ্ডের ঘটনায় চট্টগ্রামের জিআরপি থানায় দায়েরকৃত মামলার পর এর তদন্ত শুরু হয়েছে। জিআরপি থানার ওসি শহীদুল হক এ হত্যাকা-ের কু উদ্ঘাটন ও সন্দেহজনকদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে। শনিবার রাত পর্যনত্ম কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। উলেস্নখ্য, নিহত মহিউদ্দিনের পিতা ফজলুল কাদের ঘটনার রাতেই অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরম্নদ্ধে জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করেন।
সিএমপির পুরস্কার ঘোষণা ॥ শুক্রবার রাতে ষোলশহর রেলস্টেশনে চবির মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সহযোগিতায় শনিবার ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সিএমপি কমিশনার মনিরম্নজ্জামান। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, পুলিশ বা সাধারণ পাবলিকের প েযারাই হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সহযোগিতা দিতে পারবেন তিনি বা তাদের এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এদিকে শনিবার ভোরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন কটেজে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিবির ক্যাডার বলে জানা গেছে। পুলিশ এ সময় বিভিন্ন ধরনের জিহাদী বই উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ চবি ক্যাম্পাসের পাশর্্ববর্তী বিভিন্ন কটেজে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ এ সময় শিবির নিয়ন্ত্রিত পদ্মা, সুরমা, জি. রহমান, খতিব মঞ্জিল ও উত্তরা কটেজে থেকে ২৪ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে দুই জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বলে জানা গেছে। এদের শনিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেনের আদালত এসএম শাহরিয়ার নামের একজনের জামিন মঞ্জুর করেছে। বাকি ২৩ জনের জামিন আবেদনের শুনানি আজ রবিবার ধার্য করা হয়েছে। হাটহাজারী থানার ওসি মোঃ ঈসমাইল জনকণ্ঠকে জানান, আটককৃতদের চবি এলাকার বিভিন্ন কটেজ থেকে সন্দেহজনক কারণে আটক করা হয়েছে। এদের বিরম্নদ্ধে থানায় ৫৪ ধারায় মামলা হয়েছে।
ছাত্র হত্যায় তদনত্ম কমিটি গঠন ॥ বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে অজ্ঞাতনামা ৭/৮ সন্ত্রাসী হত্যা করে চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ সমর্থক এএএম মহিউদ্দিনকে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাত দশটার দিকে অনুষ্ঠিত জরম্নরী সিন্ডিকেট সভায় তিন সদস্যর তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ইমাম আলীকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন অর্থনীতির শিক অধ্যাপক আলী আশরাফ ও ফরেস্ট্রির মহিউদ্দিন আহমেদ। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন। তদনত্ম কমিটি ইতোমধ্যে প্রথম দফায় বৈঠকে মিলিত হয়ে তাদের তদনত্ম কাজ শুরম্ন করেছে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
পরিবারকে তিপূরণ ॥ এদিকে সিন্ডিকেটের একই সভায় নিহত ছাত্রের পরিবারকে এক লাখ টাকা ৰতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে প্রশাসন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ তিপূরণ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে চবিতে থমথমে পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থা হলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। হল ছেড়ে যাওয়া ছাত্রদের কগুলো প্রশাসন সিলগালা করে দিয়েছে। এসব করে ছাত্রদের পরবর্তীতে পরিচয়পত্র দেখিয়ে উঠতে হবে। আবাসিক হলগুলো বহিরাগতমুক্ত করতে এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের প থেকে জানানো হয়েছে।
চবি ছাত্রলীগের ৭ দফা ॥ মেধাবী ছাত্র ও নিজেদের কর্মী এএএম মহিউদ্দিনের হত্যাকারী শিবির খুনীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারসহ সাত দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে চবি ছাত্রলীগ। শনিবার দুপুর বারটার দিকে উপাচার্যকে এ স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। ছাত্রলীগের অন্যান্য উলেস্নখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে সারাদেশ ও চবি ক্যাম্পাসে রগ কাটা-সন্ত্রাস-খুনের রাজনীতির জন্মদাতা শিবিরের কর্মকা- নিষিদ্ধ করতে হবে, চবি ফাঁড়িতে পোস্টিং পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসের গুরম্নত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার, প্রক্টর অফিসে অবিলম্বে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি স্থাপন এবং বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যের ওপর হামলার চেষ্টাকারী ও গাড়ি ভাংচুরকারী শিবির ক্যাডারদের বিচার করতে হবে। ছাত্রলীগ পরে ক্যাম্পাসে বিােভ মিছিল করে।
অন্যদিকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গেলেও শিবির কর্মীরা এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। জানা গেছে, আধিপত্য ধরে রাখতে চবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের জড়ো করছে তারা।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ ॥ ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেন ও চবির মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুমের হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সামপ্রদায়িক উগ্র মৌলবাদী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শনিবার শোক মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এমআর আজিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগ নেতা রাজিবুল আহসান সুমন, মোঃ সালাহউদ্দিন, ছাত্র মৈত্রী নেতা কায়সার আলম, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা প্রীতম দাশ, ছাত্র সমিতি নেতা শিবু দাশ, জাতীয় ছাত্র ফোরাম নেতা মাসুদ রানা, জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মোঃ জসিম উদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করতে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র নীলনকশা বাসত্মবায়নে একের পর এক প্রগতিশীল নেতাকমর্ীদের হত্যা করে যাচ্ছে। এরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার ল্যে এবং বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের রার নিমিত্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান এবং সঙ্গে সঙ্গে শিবিরের বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা এবং তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

মোহামেনকে খুঁজছে পুলিশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ সমর্থক মহিউদ্দিন মাসুমের খুনের ঘটনায় শিবির কমর্ী মোহাইমেনুল ও অজ্ঞাতনামা ছাত্রীকে খুঁজছে পুলিশ। তাদের খোঁজে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ দু'জনের খোঁজ পাওয়া গেলে চাঞ্চল্যকর এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ কু উদ্ধার করা যাবে। পুলিশের ধারণা, মহিউদ্দিনকে খুন করার সময় মোহাইমেনুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। ঘটনার সময় মোহাইমেনুলকে ফোন করে তার এক সহপাঠীনি। তখন তার সহপাঠী অজ্ঞাতনামা ছাত্রী মোহাইমেনুলকে আমি না আমি না ও বলতে শুনতে পায়। এরপর থেকে মোহাইমেনুলের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, এ দু'জনের খোঁজে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশের ধারণা, মোহাইমেনুলকে গ্রেফতার করা গেলে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন প্রথমে মোহাইমেনুল মারা যায় বলে গুজব উঠে। শিবির তাকে নিজেদের কমর্ী বলে দাবি করে ব্যাপক প্রচারণা চালায়।

No comments

Powered by Blogger.