এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করার হুমকি

চাকরি জাতীয়করণ করা না হলে আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন না করার হুমকি দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও  অবস্থান কর্মসূচি শেষে এক সমাবেশে এ হুমকি দেন শিক্ষকরা। বলেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এ আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ১৭ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে  শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ মানববন্ধন করে। দেশের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত ১০ই জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষকরা। ২২শে জানুয়ারির মধ্যে চাকরি জাতীয়করণের কোন ঘোষণা না এলে ২৩শে জানুয়ারি ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ছিল শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের। কিন্তু সরকার থেকে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি মিলেনি। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তার পালিত কয়েকজন শিক্ষক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মঙ্গলবার এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে শিক্ষকদের অপমান করা হয়েছে। জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শিক্ষকরা বাড়ি ফিরে যাবেন না। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সবাই বাড়ি ফিরে যাবেন। শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে দাবি করেন অধ্যক্ষ সেলিম। তিনি বলেন, আমরা এই শিক্ষানীতি চাই না। বেসকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য গঠিত অবসর সুবিধা বোর্ডে অনিয়ম হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের আন্দোলন: চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে অবাস্তব ও অযৌক্তিক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। হঠাৎ করে এসে জমায়েত হয়ে এই দাবি করা অবাস্তব। এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কে- এই প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, তার সরকার তো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। তার দল কেন এটা করলো না? বিষয়টি যদি এতই জরুরি ছিল তাহলে তার দল কেন জাতীয়করণ করলো না? বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করা হচ্ছে। শিক্ষকদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। কথা থাকলে আলোচনা করুন। প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও তাদের চাকরি জাতীয়কণের দাবিতে আন্দোলন করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রাইমারি আর মাধ্যমিক এক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। টানা ১৩ দিন ধর্মঘট পালনের পর গতকাল সকাল থেকে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে একই দাবিতে গত ১০ থেকে ২২শে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার ধর্মঘট পালন করেন।
শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের : শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। গতকাল তাদের এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ৩০শে জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না দিলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে। জোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মুহম্মদ জাহাঙ্গীর খান, জোট নেতা অধ্যক্ষ মো. ইউনুস মোল্লা, আলহাজ নজরুল ইসলাম, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. আবদুর রহিম সরকার, মাওলানা সোহরাব হোসেন, অধ্যক্ষ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ, মো. আলমগীর হোসেন, অধ্যাপক গোলাম রসুল সানী, অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম সুমন, অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন আখন্দ, মো. বাছির উদ্দিন, ড. এনায়েন হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম সিয়াম, সাবেক এম.পি অধ্যক্ষ রহিমা খন্দকার, কর্মচারী নেতা শেখ মো. সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ। বক্তাগণ বলেন, ভিক্ষার মতো কিছু ভাতা বাড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী প্রতারণা করেছেন শিক্ষকদের সঙ্গে। শিক্ষক সমাজ মন্ত্রীর এ ঘোষণায় আন্দোলন থেকে বিরত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.