ট্রাইব্যুনাল হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেঃ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, এটি সত্য। মুক্তিযুদ্ধসহ সব কিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনাল গঠন হলেও আমরা (বিচারপতিরা) কী করব, সে বিষয় আমরা দেখব। কেউ আদালত সম্পর্কে কিছু বললে সেটি আমরা দেখতে পারি, কিন্তু রাজনৈতিক বিষয় নয়।গত ২১ জানুয়ারি মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর গতকাল ট্রাইব্যুনাল-২ বসে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতেই প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বললে ট্রাইব্যুনাল এ মন্তব্য করেন।

রানা দাসগুপ্ত আবার জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মামলার রায় ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অন্যান্য মামলায় প্রভাব ফেলবে না। বিবাদিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম এ বক্তব্য দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ। আমরাও তাই মনে করি। আবুল কালামের মামলার রায় অন্য মামলায় প্রভাব ফেলবে না।

গতকাল সকালে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ট্রাইব্যুনালে এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এম কে আনোয়ার ২১ জানুয়ারি বলেছেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন করছে। তিনি দৈনিক প্রথম আলো, সমকাল, সংগ্রাম ও বিজি নিউজ ২৪ ডটকমের রিপোর্টের কাটিংসহ এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। রানা দাসগুপ্ত বলেন, এম কে আনোয়ারের বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি ুণœ হয়েছে; বিচারপ্রক্রিয়ায় বিঘœ সৃষ্টি করতেই তিনি এ মন্তব্য করেছেন। ট্রাইব্যুনাল আইনানুযায়ী তিনি অপরাধ করেছেন। প্রসিকিউশন এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছে। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, এখানে দু’টি বিষয়। সব কিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে : রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে; এটি সত্য। মুক্তিযুদ্ধসহ সব কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছে। কিন্তু আমরা কি করব না করব সে বিষয় আমরা দেখব।

পরে রানা দাসগুপ্ত ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতির অভিযোগ করলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন নয়। জবাবে রানা দাসগুপ্ত বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রহসন বললে বিচার কোথায় দাঁড়াবে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ বিষয়ে আমরা যুগান্তর পত্রিকা এনেছি। এখানে বক্তা স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এটি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্য নয়। আর বিষয়টি (আবুল কালাম আযাদের মামলা) বিচারাধীন নয়। এরপর ট্রাইব্যুনাল অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানান।

কামারুজ্জামানের মামলা : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গতকাল জব্দ তালিকার রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানিতে প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় একটি অভিযোগে আমরা গণহত্যার অভিযোগ আশা করছি। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, গণহত্যা বাংলাদেশে হয়েছে। কোন গণহত্যার ঘটনায় সাথে আসামিকে জড়াচ্ছেন সেটি দেন। গণহত্যার মাস্টার প্লানিংয়ে কি তিনি ছিলেন? দিনাজপুরের গণহত্যা যেটি হয়েছে। তখন কি আসামির সে অবস্থা ছিল? আসামির অবস্থান দেখতে হবে। তার বয়স একটি বিষয়। তিনি জড়িত ছিলেন, তা দেখাতে হবে।

এরপর জব্দ তালিকার সাক্ষী বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক মো: এজাবউদ্দিন সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, দৈনিক আজাদ ও দৈনিক সংগ্রামের যে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা মামলার তদন্তকর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান জব্দ করেছেন।

আগামী সোমবার কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

অন্য দিকে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে নবম সাক্ষী জাহেদুল ইসলামকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আলীমের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

সুরঞ্জিতের আদালত অবমাননা শুনানি ২৯ তারিখ : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয়ে মন্তব্য করায় দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশের শুনানি আবার পিছিয়ে আগামী ২৯ জানুয়ারি ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল-২। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে একজন আইনজীবী সময় প্রার্থনা করলে ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন।

 গত ২৪ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-২ সুরঞ্জিতের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন এবং ওই বিচারিক বিষয়ে মন্তব্য করার কারণ ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ১৪ দলের এক গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, এখন ২০১২ সাল। আগামী বছর ২০১৩ সাল। ১৪ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ২০১৩ সালের যেকোনো সময়ে রায়ে এই চিহ্নিত ১৪ যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হবে। তাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.