অসহ্য এক যন্ত্রণা

শামীমুল হক: অচল গোটা রাজধানী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির চাকা বন্ধ। যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর। প্রতিদিনই হচ্ছে অবনতি। শুক্র শনি নেই। নগরবাসীর জন্য অসহ্য এক যন্ত্রণা এই যানজট। ট্রাফিক বিভাগ আছে, ট্রাফিক পুলিশ আছে। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
ট্রাফিকের শক্তিশালী হাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। মানুষ ক্ষুব্ধ। যেন আর পারছে না অসহায় যানজটের কাছে। বাসের সব মানুষের রাগ যেন ট্রাফিক পুলিশের ওপর। কেন গাড়ি ছাড়ছে না। শনির আখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী বড় জোর তিন কিলোমিটার রাস্তা। এ তিন কিলোমিটার রাস্তা পেরুতে সময় লাগে দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা। এরপর যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ। এ রাস্তাটুকু পেরোতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। প্রতিদিনের চিত্র এটি। ওই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন নিত্য দুর্ভোগে পড়ছেন মহাসড়কে। গতকালও ছিল এমন ভয়াবহ অবস্থা। বাসে বসা। যাত্রীদের নানা কথা। একজন এ যানজটকে আখ্যা দিয়েছেন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস হিসাবে। কেউ গালি দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশকে। কেউ গাড়ির চালককে। আবার কেউ সরকারকে। একজন বলেন, ফ্লাইওভারের কোন দরকারই ছিল না। এখন রাস্তা যে প্রশস্ত হয়েছে আগে সেটা করলে ফ্লাইওভারের প্রয়োজন হতো না। নানা মত। তবে, সবাই একমত যানজট দূর করতে ব্যর্থ ট্রাফিক। কোন নিয়ম মানা নেই। কোন চিন্তাও যেন তাদের নেই। গাড়ি আটকে আছে মাইলের পর মাইল। তারা দাঁড়িয়ে হাসছে। গল্প করছে। অবস্থা এমন জনগণের মতো তাদেরও ব্যাপারটি গা-সওয়া হয়ে গেছে। ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটছে পিঁপড়ার মতোন। এভাবে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর কাওরানবাজারে নেমে দেখি আন্ডার পাসের সামনে শ’ শ’ মানুষের জটলা। আন্ডার পাসের মুখে ২ জন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে। কাউকে আন্ডার পাস দিয়ে পারাপার হতে দিচ্ছেন না। কারণ কি? জানা গেলো প্রেসিডেন্ট যাবেন এ পথে। তাই ১৫ মিনিট ধরে পারাপার বন্ধ। একজন বললেন, প্রেসিডেন্ট যাবেন উপর দিয়ে। আমরা নিচ দিয়ে গেলে অসুবিধা কোথায়? এ প্রশ্ন করতেই তেড়ে আসেন ট্রাফিক পুলিশ। বেচারা একেবারে চুপসে যান। আরেকজন বলে ওঠেন, এটি কোন রাজধানী? এমন রাজধানী পৃথিবীর কোন দেশে আছে কি? মানুষের বলার জায়গা নেই। পত্রিকায় লিখেও কোন কাজ হয় না। যেন কামারের দোকানে কোরআন পড়া। বাসের এক যাত্রী গল্পটা বলছিলেন। এক লোক ওয়াজ মাহফিলে গেছেন। হুজুর নানাভাবে ওয়াজ করছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে কোরআনের আয়াত পড়ছিলেন। একটি আয়াত পড়ে এর তরজমা করে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ আয়াত নিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেবেন। মাহফিলে উপস্থিত এক লোক পরদিন তার বঁটি শান দিতে যান কামারের দোকানে। কামার তার বঁটি শান দিয়ে তার কাছে চার আনা পয়সা চান। কিন্তু ওই লোক কোরআনের আয়াত শুনিয়ে দেন। কামার বলেন, এতে কাজ হবে না। আমার পয়সা চাই। ওই লোক বঁটি কামারের দোকানে রেখে গেছেন হুজুরের কাছে। সব খুলে বলেন, হুজুর তাকে একটি পিতলের টুকরা দিয়ে বলেন, যাও এটি নিয়ে কামারকে দাও। লোকটি দৌড়ে কামারের কাছে গিয়ে পিতলের টুকরো হাতে দিতেই কামার ক্ষেপে গিয়ে পিতলের টুকরো ছুড়ে ফেলে দেন। ওই লোক ফের যান হুজুরের কাছে। এবার হুজুর স্বর্ণের এক টুকরোর ওপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে তা নিয়ে যেতে বলেন। এবারও কামার আগের মতো ছুড়ে ফেলে দেন। লোকটি তা নিয়ে ফের যান হুজুরের কাছে। হুজুর আবার তাকে পাঠান স্বর্ণকারের কাছে। স্বর্ণকার তা দেখে বলেন, এটির দাম কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা। লোকটি বলেন, আমার চার আনা দরকার- ২৫ হাজার নয়। হুজুরের কাছে লোকটি ফের দৌড়ে যান। ঘটনা খুলে বলেন। হুজুর তাকে বলেন, যেখানে যা করা দরকার তা করতে হয়। কামারের দোকানে কোরআন পড়লে লাভ হবে না। বাসযাত্রী বললেন, আমরাও যেন কামারের দোকানে কোরআন পড়ছি। তাই সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.