জেরিনের মৃত্যু কানাডার মিডিয়ায় প্রধান সংবাদ by মঈনুল আলম

কানাডার স্কারবরোতে জন্মগ্রহণ করা এবং বেড়ে ওঠা কানাডীয় বাংলাদেশী তরুণী মুনজেরিন আবারিন মীরের ১২ জানুয়ারি ঢাকায় রহস্যময় মৃত্যু অনেকের আড়ালে থেকে গেছে।
তবে এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে কানাডার বৃহত্তম দৈনিক সংবাদপত্র টরন্টো স্টার-এর ১৬ জানুয়ারি সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় সচিত্র ও সর্বপ্রধান সংবাদে স্থান করে দিলো!

বছর দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টরন্টোতে বেসরকারি সফরে এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে অন্যতম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং কানাডায় আশ্রয়প্রাপ্ত নূর চৌধুরীর বাসস্থানের কাছাকাছি একই মহল্লায় কন্যা পুতুলের বাসায় অবস্থান করেন। তখন টরন্টো স্টার প্রথম পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনা ও নূর চৌধুরীর পাশাপাশি ছবি দিয়ে অন্যতম শীর্ষ সংবাদে বাংলাদেশকে স্থান দিয়েছিল।

কানাডার সংবাদপত্রে কদাচিৎ বাংলাদেশের সংবাদ ছাপা হয়। বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ কোনো কোনো সময় প্রকাশিত হয় বটে, তবে ভেতরের কোনো পৃষ্ঠায়, ুদ্রাকারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ভয়াবহতম দুর্ঘটনা তাজরীন গার্মেন্টের অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ কানাডার বৃহত্তম এই দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পায়নি।

টরন্টো স্টার-এর প্রতিবেদনে প্রথম পৃষ্ঠায় নিহত জেরিন মীরের তিন কলাম বিস্তৃত মুখচ্ছবি ছাপা হয়েছে। ছাপা হয়েছে তার পুরুষ বন্ধুর ছবিও। জেরিন মীর মেডিক্যালের ছাত্রী হওয়ায় সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে মেডিক্যাল ইন্টার্নি ছাত্রী ‘নির্ভয়া’র পাশবিক ধর্ষণ ও অবর্ণনীয় নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর ঘটনাও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের এ ঘটনাটি কানাডীয়দের চোখে ভারতের ‘নির্ভয়া’র হত্যার মতো গুরুত্ব অর্জন করেছে।

প্রতিবেদনে জেরিনের কথিত বয়ফ্রেন্ডের নাম কাজী মহিউদ্দিন শারন বলে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব সূত্রে প্রকাশ, ঢাকার উত্তরা মেডিক্যাল কলেজ ফর উইম্যান-এ ডাক্তারি পড়ার সময় এক বান্ধবীর মাধ্যমে জেরিন মীরের সাথে শারনের পরিচয় ঘটে। গত সেপ্টেম্বরে ফেসবুকে জেরিন ও শারন ‘ইন অ্যা রিলেশনশিপ’ বলে প্রকাশ করে।

আরো প্রকাশ, একটি ই-মেইলে জেরিন মীর তার বয়ফ্রেন্ডকে ‘চমৎকার, মধুভাষী, রোমান্টিক ও কৌতুকপ্রিয়’ বলে বর্ণনা করে। জেরিন আরো বলে যে, তার বয়ফ্রেন্ড সময়ে সময়ে নিজেকে ‘কিছুটা অনিরাপদ, কিছুটা তার (জেরিনের) ওপর দখলদারিত্বের মনোভাবের এবং কিছুটা আক্রমণাত্মক’। তার বয়ফ্রেন্ডের অত্যধিক ধূমপান জেরিনকে অস্বস্তিতে ফেললেও জেরিন তা নিয়ে বেশি চাপাচাপি করেনি। জেরিন আরো জানায়, মহিউদ্দিন যুক্তরাজ্য থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে ঢাকায় বাবা-মায়ের সাথে বাস করছে।

গত ১২ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় জেরিন এক আত্মীয়ার বাসায় যায়। এর কিছু পরেই জেরিন ও মহিউদ্দিন রেডিসন হোটেলের পেছনে রেললাইনের ধারে হাঁটতে যায়। রাত ৮টার দিকে মহিউদ্দিন জেরিনকে বাহুতে বহন করে স্থানীয় একটি চিকিৎসালয়ে আসে। জেরিনের মাথা থেকে রক্তরণ হচ্ছিল। কিছুণ পর জেরিন মারা যায়। মহিউদ্দিন পরে সাংবাদিকদের বলে যে, জেরিন ট্রেনের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল। বাংলাদেশ কর্র্তৃপ এটা নিশ্চিত করতে পারেনি।

স্কারবরোতে জন্মগ্রহণকারী জেরিন টরন্টোর লেস্টার বি পিয়ারসন কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকায় মেডিক্যাল পড়তে যায়। সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। কানাডার পত্রিকায় বলা হয়, পারিবারিক সূত্রে প্রকাশ, বছর শেষে টরন্টোতে এসে জেরিন ঢাকায় ফিরে যেতে খুব অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ঢাকা থেকে ফোনে তাকে জোর অনুরোধ করলে জেরিন ঢাকায় ফিরে যায়।

জেরিনের বাবা কায়কোবাদ মীর তার মেয়ের মৃত্যুর তদন্তের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য কানাডা সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে ফোনে তিনি কানাডার মিডিয়াকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব কিছু দিয়েও আমার মেয়েকে ফেরত আনা যাবে না। কিন্তু তার মৃত্যুর ব্যাপারে ন্যায়বিচার চাই।

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী

moyeenlalam@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.