বিলোনিয়া স্থলবন্দরে রেল ট্রানজিট চায় ভারত by আবুল হাসান

বাংলাদেশের কাছ থেকে ফেনী নদীতে পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট ও সেতু নির্মাণ, বিলোনিয়া স্থলবন্দর, চুক্তি ছাড়াই ফেনী নদীর পানি তুলে নেয়া, রামগড়ে স্থলবন্দর নির্মাণে সম্মতি আদায়ের পর এবার ফেনীর পরশুরাম বিলোনিয়া স্থলবন্দরের পাশাপাশি রেল ট্রানজিট পাওয়ার জোর চেষ্টা করছে ভারত।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সীমান্তের নিজেদের অংশে রেললাইন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে এনেছে বলে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশী ও ভারতীয়দের সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে বিলোনিয়া দিয়ে রেল ট্রানজিট চায় ভারত। পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরের পাশেই ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের অবস্থান। এ রেল ট্রানজিট পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। গত ১৪ ডিসেম্বর ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সমুনাথ ঘোষ বিলোনিয়া স্থলবন্দর এলাকা ও মুহুরীচর এলাকা ঘুরে গেছেন। এ সময় পরশুরাম পৌরমেয়র নিজাম উদ্দিন সাজেল ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন।

গত বছরের ১০ জুন বিলোনিয়া স্থলবন্দরে রেল ট্রানজিটের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে উভয় দেশের মধ্যে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: মোকাব্বির হোসেন। অন্য দিকে ভারতের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থলবন্দর বিভাগের পরিচালক শ্রীমতি ইন্দ্রামতি। এ সময় ফেনী বিজিবির ১৯ রাইফেল ব্যাটালিয়নের টু আইসি মেজর জিয়া উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম- ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথে ত্রিপুরায় সরাসরি ট্রেনে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সীমান্তের আরো পাঁচটি স্থলবন্দরকে কার্যকর করার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বা ভারতের পক্ষ থেকে রেল ট্রানজিট নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে খোলাখুলি কোনো পক্ষই কথা বলেনি।

রেল ট্রানজিটের জন্য ভারত তার অভ্যন্তরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, ভারত সরকার আগরতলা থেকে উদয়পুর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করেছে। উদয়পুর থেকে একটি রেললাইন বিলোনিয়া মহকুমা ও একটি রেললাইন রামগড়সংলগ্ন সাবরুম মহকুমায় স্থাপনের কাজ করছে ভারত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পিলার ২১৬০ এলাকায় বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবস্থান। অন্য দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে এর দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার।

দীর্ঘ দিন ধরে ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ১৯৯৬ সালে লোকসানের অজুহাতে আওয়ামী লীগ সরকার ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রেলপথ বন্ধ ঘোষণা করেছিল। সম্প্রতি ফেনী সফরকালে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই রেলপথ চালুর ব্যাপারের ফেনীবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এ রেললাইন চালুর উদ্দেশ্য নিয়ে গুঞ্জন চলছে সচেতন মহলে।

এ দিকে ফেনী নদীর ওপর খাগড়াছড়ির রামগড়ে প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণে কারিগরি পরীা-নিরীার জন্য ভারতকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণে গত ৪ মে দুই দেশ অনুমোদন দেয়ায় নির্মাণকাজ চূড়ান্ত করে ভারত। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, এই সেতু তৈরি হলে ত্রিপুরাসহ ভারতের পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে। বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ত্রিপুরার সাবরুম সীমান্তে ভারত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করেছে। স্থলবন্দর চালুর জন্য সীমান্তের ওপারে বিএসএফ একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট, শুল্ক অফিসসহ বন্দরের কয়েকটি প্রয়োজনীয় পাকা ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেছে। সাবরুম-আগরতলা-উদয়পুর সড়কসহ এ মহকুমার সাথে অন্য মহকুমা ও জেলার সড়কের উন্নয়নকাজ দ্রুত গতিতে করা হচ্ছে বলে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশীরা জানান।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত একের পর এক একতরফা সুবিধা আদায় করে নিলেও বাংলাদেশ কী সুবিধা পাচ্ছে তা নিয়ে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের এই ভারতপ্রীতিতে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
       

No comments

Powered by Blogger.