সংসদ থেকে রাজপথে

আলী ইদ্‌রিস: প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজপথে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ে ব্যস্ত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবির সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের  মুক্তির দাবিও এখন তাদের বিক্ষোভ ও মিছিল-মিটিংয়ে বক্তব্যের প্রধান বিষয়। বিএনপির দাবি সংসদে বসার ও কথা বলার পরিবেশ নেই বলেই  তারা রাজপথকে আন্দোলনের বিকল্প ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছে এবং রাজপথে বাধাপ্রাপ্ত বা নির্যাতিত হলে হরতালের মতো ক্ষতিকারক কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছে। হরতাল যে অর্থনীতির জন্য কতটা ক্ষতিকর, প্রতিটি হরতালে দেশের ও জনগণের বিশেষ করে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের, রোগী, পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থীদের কতটা সর্বনাশ হয় তা জেনেও প্রধানবিরোধী দল হরতাল ঘোষণা থেকে বিরত হচ্ছে না। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে বাম দলও হরতাল ঘোষণা করে দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ ডেকে আনছে এবং সরকার তাদের কর্মসূচিকে সমর্থন  দিয়েছে। সরকার যেখানে অর্থনীতির ক্ষতিকারক যে কোন হরতালকে নিরুৎসাহিত করা উচিত সেখানে বামদলের হরতালকে সমর্থন করে কিভাবে। মানলাম একটি মহৎ উদ্দেশ্য অর্থাৎ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য  হরতাল ডাকা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কে না চায়। যে কোন অপরাধীর বিচার চাওয়া মহৎ কাজ। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া তো অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু হরতাল ডেকে দেশের সর্বনাশ করা উচিত কি? যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্র বিচারকার্য হাতে নিয়েছে সেখানে দেশের ভেতরে-বাইরে যারাই ষড়যন্ত্র করুক তারা অকৃতকার্য হতে বাধ্য। যদি ষড়যন্ত্রকারী কৃতকার্য হয় তাহলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে। রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় তখনই যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন থাকে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করতে রাষ্ট্র কৃতকার্য হবেই। তবে কেন ক্ষতিকর হরতাল। বামদলের মতো যদি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গদল একদিন একদিন করে হরতাল ডাকে তাহলে দেশে জনগণের কি দুরবস্থা হবে? আশার বাণী শুনা যাচ্ছিল যে, বেরোধী দল সংসদে যোগ দেবে। কিন্তু সে আশা নিরাশায় পর্যবেশিত হয় যখন দেখা যায় ক্ষমতাসীন দল ঘোষণা করে যে যতদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হবে ততদিন তারা রাজপথে থাকবে। এদিকে প্রধান বিরোধী দলও ঘোষণা দিয়েছে যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন উত্তরোত্তর বেগবান করবে। আরও এক ধাপ এগিয়ে বিরোধী দলের চিফ হুইপ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া ক্ষতাসীন দল তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করে দেখুক কি পরিণতি হয়। এতদিন এ দেশের হতভাগ্য জনগণ দুদলের বাকযুদ্ধ, তর্কযুদ্ধ, কটূক্তি-যুদ্ধ দেখেছে, এখন কি তবে মল্লযুদ্ধ দেখবে। অবস্থাদৃষ্টে তাই তো মনে হয়। দু’দল রাজপথ দখল করে ফেল্লে জনগণ চলবে কি করে? তবে কি আরও প্রাণহানি হবে, বিশ্বজিতের মতো আরও দু’চারজনকে চাপাতির আঘাতে প্রাণ দিতে হবে। আরও দু’চার শ’ গাড়ি পুড়ানো হবে? দুর্ভাগ্য এদেশের। দুর্ভাগ্য অভাগা জনগণের। মহতী নেতৃদ্বয়ের ইগোর কাছে তারা জিম্মি হয়ে আছে।  দুই নেত্রী নিজ নিজ স্বার্থ ও ইগোকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে বিন্দুমাত্রও নমনীয় হবেন না। ব্যক্তি স্বার্থে ক্ষমতা দখল বা আঁকড়ে থাকার জন্য দেশকে বলি দেবেন, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করবেন, তবু কেউ কারুর দাবি থেকে চুল পরিমাণ সরে দাঁড়াবেন না। তাহলে কি হবে এদেশের। আমি আশাবাদী,  আমার মতো অনেকেই আশাবাদী, এদেশ দু’দলের স্বেচ্ছাচারিতার নিকট বন্ধী হয়ে থাকতে পারে না। ভোটের মাধ্যমে জনগণ এর জবাব দেবে। তাই আমি নতজানু হয়ে দু’দলকে অনুরোধ করব রাজপথে নয়, সব সমস্যার সমাধান করুন সংসদে। ক্ষমতাসীন দলের নিকট আমার ফরিয়াদ প্রথমেই সংসদ কার্যবিধিতে পরিবর্তন আনুন, যারাই এক নাগারে এক মাস  সংসদে অনুপস্থিত থাকবে তাদের সদস্যপদ বাতিল হবে। হরতাল নিষিদ্ধ করুন। বিরোধী দলের নিকটও আমার নতজানু আবেদন, রাজপথ ছেড়ে সংসদে যোগ দিন, বসার বা কথা বলার পরিবেশ না থাকলেও নিজেদের দাবি পেশ করুন, সোচ্চার হোন, কণ্ঠ উঁচু করুন, তর্ক- বিতর্ক-বিতণ্ডা করুন, ওয়াকআউট করুন, আবার ফিরে আসুন, আবার কথা বলার চেষ্টা করুন। পৃথিবীর বহু দেশে সংসদে তর্ক-বিতর্ক, ফাইল ছোড়াছুড়ি, এমনকি মারামারিও হয়। আমরা মারামারি চাই না, কিন্তু সংসদে বিরোধী দল হিসাবে আপনারা প্রতিদিন উপস্থিত থাকুন এবং কথা বলুন। জনগণ আপনাদের ধৈর্য ও মহত্ত্বের মূল্যায়ন করবে। রাজপথে সংঘাত মানেই প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের আশঙ্কা, হরতালে মানুষের দুর্ভোগ। এ থেকে দেশকে বাঁচান।
aliidris446@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.