জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম ভেঙে সুপারিশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগে নিয়মবহির্ভূতভাবে সুপারিশের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য একজন সরকারি আমলাকে নিয়ম ভেঙে দলীয় বিবেচনায় সুপারিশ করায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষকেরা একে আন্তর্জাতিক মান ও অধ্যাদেশ পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই সুপারিশ আগামী সিন্ডিকেটে পাস করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত সিলেকশন বোর্ড তথ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান তথ্য অফিসার এবং জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭-৭৮ শিক্ষাবর্ষে (সপ্তম ব্যাচ) গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকে দ্বিতীয় বিভাগ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে স্নাতকোত্তরে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগ পান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পিএইচডি অর্জন করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৭৩ অ্যাক্টের ১৯(১) (আই) ধারা অনুযায়ী সিনেট ও ২২(১) (এফ) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। জগন্নাথ, চট্টগাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন একাধিক প্রার্থীকে সিলেকশন বোর্ড তাদের মনোনয়নের সুপারিশ থেকে বাদ দেয়ায় বিষয়টিতে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
৭৩ অধ্যাদেশে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর ডিগ্রি এবং বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে সব নিয়ম শিথিল যোগ্য বলে উল্লেখ করা হলেও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে সরকারি আমলার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিক্ষকতায় আগের অভিজ্ঞতা ও কোনো ধরনের প্রকাশনা ছাড়াই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষক। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার টিটো বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতার বিচার প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এতে যদি প্রার্থীর দলীয় পরিচয় বা ক্ষমতা বিবেচনায় আসে, তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ সহযোগী অধ্যাপক নয় বরং লেকচারার হিসেবে হওয়া উচিত। আর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যাকে সুপারিশ করা হয়েছে, তার সাত-আট বছরের শিক্ষকতা ও তিনটি প্রকাশনা নেই। ফলে এই সুপারিশ গৃহীত হলে তা সব মহলে বিতর্কিত হবে।’
এ ধরনের শিক্ষক মনোনয়নের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গতকাল ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন। এতে ভিসি তাদের গোপনীয় বিষয় কিভাবে জানলেন, সে প্রশ্ন করেন। অনিয়ম করে শিক্ষক মনোনয়নের সুপারিশের যে পাঁয়তারা চলছে, তা যদি সিন্ডিকেট সভায় পাস করা হয় তবে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে বলে জানান অধ্যাপক শরিফ।

No comments

Powered by Blogger.