ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অসন্তোষ প্রকাশ-যুদ্ধাপরাধের বিচার হতে হবে অবাধ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন : যুক্তরাষ্ট্র

যুদ্ধাপরাধ বিচারপ্রক্রিয়া অবশ্যই অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ আইনের শাসনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে বলেও যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই আহ্বান জানাল। ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে দেয়া রায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যারা এ ধরনের অপরাধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিচার সমর্থন করে।

তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের বিচার অবশ্যই অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হতে হবে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সম্পন্ন করবে।’

নুল্যান্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, বাংলাদেশ সরকার তার বিভিন্ন চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার আলোকে যথাযথ প্রক্রিয়াগত মানদণ্ড অনুসরণ করবে এবং আইনের শাসনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন : ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মাওলানা আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে ইউনিয়ন মৃত্যুদণ্ডাদেশ হ্রাস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত শাস্তিটি বিলম্বিত করা।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ এবং কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথেরিন অ্যাশটনের মুখপাত্র মঙ্গলবার মাওলানা আযাদ ইস্যুতে বিবৃতি দেন।

এতে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকালে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে যে বিচারিক কার্যক্রম চলছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তার প্রতি গভীর নজর রাখছে।

বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মৃত্যুদণ্ড প্রদানের বিরুদ্ধে তার নীতিগত অবস্থানের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্টের আওতায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের সম্ভাব্য প্রয়োগের ব্যাপারে বারবার তার উদ্বেগের কথা বলে আসছে। হাই রিপ্রেজেনটেটিভ তাই ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুপস্থিত মামলায় আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় অসন্তোষ করছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সব মামলায় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রয়োগের বিরোধী। হাই রিপ্রেজেনটেটিভ এই সাজা হ্রাস করা এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ সুনির্দিষ্টভাবে বাতিলের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শাস্তিটি বিলম্বিত করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়া : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা আযাদকে ফাঁসির আদেশ দেয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য যেকোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।

সোমবার ব্রিটিশ সরকার তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানায়, ১৯৭১ সালের নৃশংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার বাংলাদেশের উদ্যোগকে তারা সমর্থন করে। তবে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রয়োগের বিরোধী।

প্রতিক্রিয়ায় আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশন্স ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রেটারি ডিটেনশন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত র‌্যাপ, মানবাধিকারবিষয়ক ব্রিটিশ লর্ড সভা (বিশেষ করে লর্ড কার্লাইল, লর্ড অ্যাভেবুরি), সিনেটর বুজম্যান, কংগ্রেসম্যান ইলিসন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউকে বার হিউম্যান রাইটস কমিটি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইসিটিজে, নো পিস উইদাউট জাস্টিস ইত্যাদি সংগঠন ও ব্যক্তিদের উদ্বেগের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার অবগত রয়েছে এবং আশা করছে তাদের উদ্বেগ দূর করতে বাংলাদেশ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এতে বলা হয়, ‘আমরা আশা করব, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শিগগিরই এসব উদ্বেগ দূর করবে এবং বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার সততা, নিরপেক্ষতা ও সুনাম অব্যাহত রাখা হবে।’

জার্মানি জানিয়েছে, প্রতিটি দেশেরই বেদনাদায়ক অতীত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ কিভাবে তার অতীতকে মোকাবেলা করবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।

ফ্রান্স তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, কোনো দেশ তার অতীতের কোনো সমস্যা কিভাবে মেটাবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার।

No comments

Powered by Blogger.