পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ মানুষকে সুপথে বা বিপথে যাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য

১১. ওয়ালাও ইউআ'জ্জিলু ল্লা-হু লিন্না-ছিশ্ শার্রা ছ্তি'জা-লাহুম বিলখাইরি লাক্বুদ্বিইয়া ইলাইহিম আজালুহুম; ফানাযারুল্লাযীনা লা-ইয়ারজূনা লিক্বা-আনা ফী ত্বুগইয়া-নিহিম ইয়া'মাহূন।
১২. ওয়া ইযা মাচ্ছাল ইনছা-নাদ্ দ্বুর্রু দাআ'-না লিজাম্বিহি আও ক্বা-য়ি'দান আও ক্বা-য়িমান; ফালাম্মা কাশাফ্না আ'নহু দ্বুর্রাহূ মার্রা কাআন লাম ইয়াদউ'না ইলা দ্বুর্রিম্ মাচ্ছাহূ; কাযা-লিকা যুয়্যিনা লিলমুছ্রিফীনা মা কা-নূ ইয়া'মালূন।
১৩. ওয়ালাক্বাদ আহ্লাকনাল ক্বুরূনা মিন ক্বাবলিকুম লাম্মা যালামূ; ওয়াজা-আতহুম রুছুলুহুম বিলবায়্যিনা-তি ওয়া মা কা-নূ লিইউ'মিনূ; কাযা-লিকা নাজযিল ক্বাওমাল মুজরিমীন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১১-১৩]
অনুবাদ : ১১. আল্লাহ যদি মানুষের জন্য তাদের (পাপের শাস্তি দিতে গিয়ে) অকল্যাণকে সেইভাবে ত্বরান্বিত করতেন, যেভাবে মানুষ নিজেদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চায়, তাহলে তো মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়ার সুযোগ ব্যাহত হয়ে যেত। (কিন্তু আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য স্বাধীনতা প্রসারিত করতে চান) সুতরাং যারা আমার সানি্নধ্য চায় না, তাদের আমি স্বাধীনতা দিয়ে দেই তাদের বিভ্রান্তির ভেতর ঘুরপাক খেতে।
১২. মানুষ যখন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়ে তখন সে শয়নে, বসায় বা দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আমাকে ডাকে। এরপর আমি যখন তার কষ্ট দূর করে দিই তখন সে এমনভাবে চলে যেন কখনো বিপদে পড়ে উদ্ধারের জন্য আমাকে ডাকেনি। সীমালঙ্ঘনকারীরা এভাবে নিজেদের (অন্যায়) আচরণের পক্ষে অবস্থান নেয়।
১৩. তোমাদের আগে আমি বহু জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা জুলুমে লিপ্ত হয়েছে। তাদের কাছে তাদের সম্প্রদায়ের ভেতর থেকেই সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে রাসুল এসেছিল, কিন্তু তারা ইমান আনেনি। পাপিষ্ঠ সম্প্রদায়কে আমি এভাবেই বদলা দিয়ে থাকি।
ব্যাখ্যা : ১১ নম্বর আয়াতটির শানে নুজুল এরকম- আরবের কাফেরদের যখন কুফর ও অবাধ্যতার পরিণামে আল্লাহর ভয় দেখানো হতো তখন তারা বলত, এটা সত্য হলে এখনই কেন সে শাস্তি আসছে না? আসলে তারা ইমানদার ছিল না বলে এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে ফারাক করতে জানত না বলে বিদ্রূপাত্মকভাবে এ কথা বলত। এর জবাবেই এ আয়াতটি নাজিল হয়। এখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তারা শাস্তি পাওয়ার জন্য এমন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যেন খুব ভালো জিনিস। কল্যাণ লাভের জন্য মানুষ যেমন ব্যাকুল হয় তেমনভাবে তারা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে অকল্যাণ লাভের জন্য। (এটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা সূক্ষ্ম বিদ্রূপ)। এরপর আল্লাহর কৌশলের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মানুষকে যদি আল্লাহ তায়ালা পাপের জন্য যখন তখন শাস্তি দিয়ে দেন তবে মানুষের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়ে যায়। আল্লাহ তো মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন যে সুপথ বা কুপথ যেকোনোটাই বেছে নিতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদি নীতির ফলে মানুষের চূড়ান্ত অবাধ্যতার সুস্পষ্ট প্রমাণ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসার সুযোগও সে পায়। অবাধ্যরা বিদ্রূপ যতই করুক, আল্লাহর কৌশল যে অত্যন্ত জোরাল ও স্থিতিশীল এ কথাটা এ আয়াতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১২ নম্বর আয়াতে অত্যাচারী ও সীমালংঘনকারী পাপিষ্ঠদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। এরা যখন কোনো বিপদ-আপদ বা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়ে তখন ঠিকই একান্ত অনুগতের মতো আল্লাহকে ডাকে। এরপর যখন আল্লাহ তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে দেন, তখন তারা এমনভাবে চলে যেন তারা কখনোই বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকেনি। অন্যায়-অবিচারের ক্ষেত্রে যারা একেবারে সীমালংঘন করে ফেলেছে, তারা নিজেদের অপরাধ বুঝতে পারে না। তারা নিজেদের অবস্থান ও নিজেদের অন্যায় কাজকর্মকে সব সময়ই সঠিক মনে করে। ১৩ নম্বর আয়াতে ইতিহাসের সেই সব ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে অত্যাচারী জাতিগুলোকে আল্লাহ তায়ালা তাদের পাপের দায়ে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.