পাকিস্তানের আদালতের রায় বাংলাদেশের আদালতের জন্য চ্যালেঞ্জ’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, জনগণের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা থেকেই সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর মরিচের গুঁড়া স্প্রে করছে।
নতুন ধাচের এ নির্যাতন থেকে শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী কেউ বাদ যাচ্ছেন না। জনবিরোধী অবস্থান নেয়ার পর এখন টিকে থাকার জন্যই সরকার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারে দেশের আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এই রায় বাংলাদেশের আদালতের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ।
মানবজমিন অনলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সরকার অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন নির্যাতনের বিকল্প পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে জনগনের উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ বিপুল পরিমাণ টাকা লুণ্ঠন হয়েছে সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যখনই আন্দোলন করা হয়েছে তখনই নতুন নতুন নির্যাতনের উপায় বেছে নিয়েছে। এই মরিচের গুঁড়াসহ এই নতুন নতুন নির্যাতনের উপকরণগুলো তো জনগণের টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে। নিরীহ শিক্ষকদের থেকে শুরু করে সব আন্দোলন দমাতে এই সব উপকরণ ব্যাবহার করা হচ্ছে। জনগণের টাকা দিয়ে জনগণকে নির্যাতন। এ ধরণের উপকরণের ব্যাবহার প্রমাণ করে মানুষের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছে সরকার। গণতান্ত্রিক স্বীকৃতিবোধ না থাকলেই কেবল এসব করা যায়। এটা কাউকে নতুন ব্যাবসার সুযোগ দেয়ার চেষ্টা। নির্যাতনের জন্য এইসব নতুন নতুন আইটেম সরবরাহ করে হয়তো কেউ অনেক বড় ব্যাবসা করে নিচ্ছেন, সে সুযোগ দিচ্ছে সরকার। সরকারের তো নৈতিক দিক থেকেও শক্ত ভিত্তি নাই। সরকার তো মানুষকে ভয় পায়। কিন্তু এই মরিচের গুঁড়া দেখিয়ে লাভ হবে না।
রাশিয়ার সঙ্গে করা সমরাস্ত্র ক্রয় ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে  চুক্তির ব্যাপারে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে কেন, সব দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক দরকার। বিশেষ করে ইউনাইটেড স্টেট বলয়ের বাইরে সম্পর্কটা আরও বেশি দরকার। কিন্তু সরকার যেভাবে সম্পর্ক করছে তা হচ্ছে আরেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ঢুকে পড়া। এই অস্ত্র আর পারমাণবিক চুল্লির উপকরণ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিগুলো হচ্ছে রাশিয়ার একটা পরিকল্পনা। ওদের পরিত্যাক্ত এবং পুরনো সব প্লান্ট গুলো কেনা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের বিস্তারের জন্য চুক্তি করতে পারতো। যেমন, গার্মেন্টসের বাজার বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া যেতো। কিন্তু এখন রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তিগুলো হয়ে গেছে মার্কিন মডেলে। অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তির মাধ্যমে। এখানে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। পারমাণবিক বিদুৎ উৎপাদনের জন্য যে চুক্তি হচ্ছে তার আগে আমরা বলেছিলাম, প্রথমত, নিজেরদের পরিবেশে এর প্রভাব পর্যালোচনার জন্য অভ্যন্তরীন সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে, দ্বিতীয়ত, জাতীয় সক্ষমতা তৈরির জন্য কোন দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, তৃতীয়ত, পারমাণবিক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার প্রস্তুতি এবং চতুর্থত, দূর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য জনগণকে জানানোর উদ্যোগ নেয়ার দরকার। কিন্তু সেটা না করে এ ধরণের চুক্তি করাটা জাতীয় স্বার্থবিরোধী এবং বিপজ্জনক। দক্ষ ব্যাবস্থাপনা নিয়েও জাপান এর মোকাবিলা করতে পারে নি। এখনও তারা ক্ষতি পোষাণোর চেষ্টা করছে। আর এখানে রাশিয়ার বাতিল সব প্ল্যান্টগুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। এটার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের কথা বলে নতুন সংকট হাজির করা হয়েছে এবং এটা করা হচ্ছে অসচ্ছভাবে।
তিনি বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, চুক্তি করার ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ বেশি। চুক্তির ফলাফল নিয়ে কোন দায়িত্ববোধ নেই। জনগণের উপর কি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই।
পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট কতৃক সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো যে অনির্ভরযোগ্য তা পাকিস্তনের সর্বোচ্চ আদালত বুঝলো আর আমাদের আদালত এবং সরকার এটা বুঝলো না। জ্বালানি খাতে সরকার যে দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তা আমরা বুঝতে পেরেছি তখন যখন দেখেছি সরকার ২০১০ সালে ‘দায়মুক্তি’ আইন করছে। দায়মুক্তি আইনটা হলো- ‘জ্বালানি মন্ত্রণালয় জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে যা করুক তা নিয়ে আদালতে অভিযোগ করা যাবে না।’। আমরা তখনই এই আইনের প্রতিবাদ করেছিলাম। তখনই আমরা বুঝেছিলাম সরকার আরও বড় অপরাধ করতে যাচ্ছে। জনগণইতো সবচেয়ে বড় আইন। এই জনপ্রতিরোধে  কোন লাভ না হলে আমাদেরকে গণআদালতের কর্মসূচির দিকে যেতে হবে। পাকিস্তানের মতো একটা দেশের সুপ্রীম আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তার পর বাংলাদেশের আদালতের জন্য এটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের আদালত জ্বালানি খাতে যেসব দূর্ণীতি হয়েছে তা পর্যালোচনা করবে বলে আমরা আশাকরি।

No comments

Powered by Blogger.