‘ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করেছেন’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আবারো অভিযোগ করেছেন, ড. ইউনূস নিজেই গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করছেন। অন্য দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের সরকার নিযুক্ত চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেছেন, ব্যাংকটির ৩০ হাজার কোটি টাকা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিয়মানুযায়ী গ্রামীণফোনের ৩০ হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ টেলিকমে গেলেও তা গ্রামীণ ব্যাংকে যায়নি। মোজাম্মেল হক জানান, তারা শুনতে পাচ্ছেন পুরো টাকাই গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে গেছে। গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টÑ এ দু’টিরই চেয়ারম্যান হলেন ড. ইউনূস।

গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কিত ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার সব ব্যবস্থা ড. ইউনূস করে গেছেন। ড. ইউনূস বলেন, সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধিগ্রহণ করেছে। আসলে সরকার নয়, তিনিই এটি দখল করে বসে আছেন নিজের ব্যবসায়ের প্রয়োজনে। গ্রামীণ ব্যাংককে তিনি কোনো কাজ করতে দেবেন না।

মুহিত বলেন, ইউনূস সাহেব ব্যাংকটাকে ধ্বংস করার সব ব্যবস্থা করে গেছেন। এর চেয়ে আরো বড় ধ্বংসাত্মক কোনো পদক্ষেপ কোনো ব্যক্তি নিতে পারবে না। তিনি এটি দখল করে রেখেছেন, যাতে এটি চলতে না পারে। তার (ইউনূস) ভাবনা, তাকে ছাড়া এটি চলবে না।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলা করে সার্চ কমিটির কার্যক্রম ইউনূস সাহেব আটকে রেখেছেন, তিনি কাউকে এমডি হতে দেবেন না, তিনিই এমডি নিয়োগ দেবেন যাকে তিনি পছন্দ করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের ১৩ হাজার কোটি টাকার যে সেভিংস আছে, তা এখন গ্রামে নেই, সেটি বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে উচ্চহারে সুদ নেয়া হচ্ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক এখন ভালো আছে। এখন টালমাটাল কোনো অবস্থা নেই। ব্যাংকের দুই হাজার ৫৬৭টি শাখা আছে। আমাদের কর্মকাণ্ড খুব ভালোভাবেই চলছে। আমাদের কাজ হচ্ছে মূলধন দেয়া, পুঁজি দেয়া। আমরা এ পর্যন্ত ৮৬ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছি। মাসে এক হাজার কোটি টাকা বিতরণ করছি।

গ্রামীণ ব্যাংকের পারফরম্যান্স এখন অনেক ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১০-এর চেয়ে ২০১১-এর পারফরম্যান্স ভালো। আবার ২০১১-এর চেয়ে ২০১২-এর পারফরম্যান্স ভালো। ২০১১-তে প্রফিট হয়েছিল ৮৬ কোটি টাকা। এবার ১৪০ কোটি টাকা প্রফিট হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন ছাড়াই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ করা হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে নির্বাচনের কোনো ব্যাপার নেই। বোর্ড একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করে। সিলেকশন কমিটি তিনজনের নাম নিয়ে আসে। সেখান থেকে একজনের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি অনুমোদন করলে বোর্ড ওই ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবে।

সিলেকশন কমিটি থেকে একজন নারী সদস্য পদত্যাগ করেছেনÑ সে ব্যাপারে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আগে দেখতে হবে কমিটির দায়িত্বটা কী? গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ দেখা নাকি একজন ব্যক্তির স্বার্থ দেখা।

গ্রামীণ ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ ব্যাংকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসার কথা। এ টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের পাওয়ার কথা। তাদের এ টাকার সুবিধা ভোগ করার কথা। কিন্তু তারা এ টাকা পায়নি। এখন প্রশ্ন হলো, এ টাকা গেল কোথায়? সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। ওরা বিষয়টি দেখছে। কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে।

এ টাকা এখন কোথায় আছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূসের প্রতি ঈঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখন শুনলাম, গ্রামীণ টেলিকম আরেকটি অর্গানাইজেশন করেছে; যার নাম গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট। আমরা শুনেছি, গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টে টাকাটা রয়েছে। তবে এটি শোনা কথা। কারণ আমরা কোনো রিপোর্ট-টিপোর্ট পাই না। এটির কোনো রিপোর্ট গ্রামীণ ব্যাংক পায় না। এ দুটো প্রতিষ্ঠানেরই (গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট) চেয়ারম্যান ড. ইউনুস।

ব্যাপারটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যে কমিশন করেছে, তারাই এটি অনুসন্ধান করছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগে মামলা চলছে, এ মামলা সুরাহায় গ্রামীণ ব্যাংক কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির সাথে কথা বলেছি। কিন্তু বোর্ডে যে নয়জন সদস্য রয়েছেন, তারা এটিতে রাজি নন। উনারা এর পক্ষে নন। উনারাই একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছেন।

No comments

Powered by Blogger.