যাজক জীবনের আদ্যোপান্ত- সশিপন কোড়াইয়া

সাগররোজারিও ওএমআই চিরকালীন যাজকরূপে হাজার হাজার জনতার সামনে অভিষিক্ত হলেন। এতে পূর্ণ হলো তাঁর জীবনের সকল সাধনা ও ল্য। তিনি যীশু খ্রীস্টের অংশীদার হয়ে সকল গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাবেন।
যাজকদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, খ্রীস্টের প্রতিনিধি হয়ে মঙ্গলবাণী প্রচার করা এবং অন্যের হিত সাধন করা। যাজক হচ্ছেন এমন মানুষ যিনি পরিবার-জীবন, সংসার-জীবন ত্যাগ করে অর্থাৎ বিয়ে না করে সারাজীবন মানুষের মঙ্গলে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। সকল শ্রেণী-পেশা, জাতি এবং বর্ণের মানুষের জন্য পিতার ভালবাসা নিয়ে কাজ করেন বলে তাঁদের বলা হয় ফাদার। সমাজ , তাঁদেরকে ফাদার নামেই চেনে। তাঁদের অন্য নাম যাজক বা পুরোহিত। যাজক বরণ করার আগে একজন প্রাথর্ীকে নানাভাবে পরীা করে গঠন প্রশিণ দেয়া হয়। দীর্ঘ সাধনার পর তাঁরা অভিষেকের মধ্য দিয়ে যাজকত্ব লাভ করেন বা ফাদার হন।

গঠন প্রশিণ
ফাদার বা যাজক হতে ইচ্ছুক এমন যুবকদের জন্য রয়েছে গঠনগৃহ। যেখানে তাঁরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যাজকীয় জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং সিদ্ধানত্ম নিয়ে থাকেন, তাঁরা ফাদার হবেন কি-না। একাডেমিক পড়াশোনার পর দর্শন ও ঐশীতত্ত্ব পড়াশোনা এবং পালকিয় কাজের অভিজ্ঞতার জন্য উচ্চ সেমিনারীতে আরও ছয় বছর লেখাপড়া করতে হয়। যার সার্টিফিকেট আসে রোম নগর থেকে। এর মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন গুণ প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়। যার যেসব বিষয়ে বিশেষ গুণ থাকে কতর্ৃপ তার বিশেষ যত্ন নেয়। কিভাবে মঙ্গলবাণী প্রচার করতে হবে, গির্জা বা চার্চে গিয়ে কিভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হবে, সাহায্য করতে হবে তার প্রশিণ গঠনগৃহেই দেয়া হয়। গঠন প্রশিণ ও পড়াশোনা শেষ হলে একজন প্রাথর্ীকে অভিষিক্ত করে যাজকরূপে ম-লীর কাজে অংশগ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এভাবেই একজন যুবক ফাদারে পরিণত হন। গঠনগৃহে যেভাবে গঠন পান পরবতর্ীতে তিনি সেইভাবেই জীবন যাপন করেন। প্রতিদিন সকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিন শুরম্ন করেন। দুপুর, সন্ধ্যা, রাতে, খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করে আধ্যাত্মিক জীবনের চর্চা করে থাকেন।

প্রাত্যাহিক কার্যসূচী
একজন যাজক প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন। তারপর তাঁর পূর্বনির্ধারিত কার্যসূচী অনুযায়ী গভীর রাত পর্যনত্ম কাজ করে যান। তাঁর কার্যসূচীতে থাকে আধ্যাত্মিক কাজ, পৈ্ররিতিক কাজ, বিশ্রামের সময় ও বিনোদনের সময়।
আধ্যাত্মিক কাজ হিসাবে একজন যাজক প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খ্রীস্টযাজ্ঞ উৎসর্গ বা প্রার্থনা করেন। তারপর ব্যক্তিগত প্রার্থনা বা ইয়োগা করেন। দুপুরে খাবার আগে আবার আধা ঘণ্টা প্রার্থনা করেন। সন্ধ্যায় আধা ঘণ্টা এবং রাতে আবার প্রাহরিক প্রার্থনার পর ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও মেডিটেশন করেন।
সকালের নাসত্মা খেয়ে একজন যাজক তাঁর পৈ্ররিতিক কাজে লেগে পড়েন। একেক জন একেক ধরনের কাজ করেন। কেউ শিােেত্র, কেউ অফিসিয়াল কাজে, কেউ সংস্কারীয় কাজে, কেউ মফস্বলে বাড়ি ভিজিটের কাজে, রোগী ভিজিটিং ইত্যাদি কাজে ব্যসত্ম দিন কাটান।
কেউ কোন বিরোধের সমাধান করতে সালিশে বসেন, কেউ কোন হতাশাগ্রসত্ম মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সানত্ম্বনা দেন। গরিব মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্পন্সরের ব্যবস্থা করে সাহায্য করেন।
দুপুরে খাবার পর যদি সময় পান তবে একটু বিশ্রাম করেন, নয়ত পত্রিকা পড়েন, খবর দেখেন। অনেক সময় সামাজিক নাটক ও ধমর্ীয় সিনেমা দেখেন। বিকেলে হাতে সময় থাকলে একটু খেলাধুলা করেন অথবা জমিতে কাজ করেন। বিশেষত সবজি বাগানে বা ফুলের বাগানে কাজ করেন। সারাদিন কর্মব্যসত্ম সময় পার করে সন্ধ্যায় গোসল করে ফ্রেশ হয়ে প্রার্থনা করতে যান। সন্ধ্যা সাতটা তিরিশ মিনিটে রাতের খাবার খেয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করেন, টিভি দেখেন বা পত্রিকা পড়েন। রাতের প্রার্থনা শেষে অফিসে গিয়ে সারাদিনের কাজের প্রতিবেদন তৈরি বা বাকি কাজের সমাপ্তি করে তবেই ঘুমাতে যান। এভাবে সমসত্ম কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত পর্যনত্ম তাঁকে কাজ করতে হয়।

পরিপূর্ণ জীবন
না আছে সংসার, না আছে স্ত্রী-সনত্মান, না আছে পরিবার-পরিজন। তারপরও সবকিছু ত্যাগ করে তাঁরা এ সন্ন্যাস জীবনে খুঁজে পান অনাবিল আনন্দ ও সুখ। অন্যের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার পরম শানত্মি তাঁদের সারাদিনের কর্মব্যসত্মতাকে ভুলিয়ে রাখে। ঈশ্বরের নামে তাঁরা সকল কাজ নিষ্ঠা ও পবিত্রতার সঙ্গে করতে সচেষ্ট হন। তাঁদের মহানব্রতের স্পর্শে মুক্তি পায় হাজার হাজার মানুষ, পায় জীবনের আলো। তাই যাজকগণ মিলেমিশে সকল মোহ ও হিংসা-দ্বেষ ভুলে ভ্রাতৃত্বের প্রেমে আবদ্ধ হয়ে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে থাকেন। পরের হিত উপার্জনে তাঁদের অনত্মরে বিরাজ করে আনন্দ ও শানত্মি প্রতিণ; অবিরত, অবিরাম।

No comments

Powered by Blogger.