মিছিলে হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীতে বিএনপির বিক্ষোভ

মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে আগামী সোমবার রাজধানীতে বিৰোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপির শানত্মিপূর্ণ কর্মসূচীর ওপর হামলা করা হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
অন্যদিকে বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশ এবং রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জামালপুর বিএনপির একটি সংগঠনের তরফ থেকে নজরম্নল ইসলাম খানকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পুলিশী হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি।
মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা এখনও শানত্মিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচীতে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের কঠিন ও কঠোর কর্মসূচী দিতে উস্কানি দিচ্ছে । সরকার বাধ্য করলে আমরা হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচী দিতে দ্বিধাবোধ করব না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদল, বিএনপির ওপর হামলা-মামলা ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দাবিতে বিােভ কর্মসূচী পালনকালে পুলিশ বিভিন্ন পর্যায়ের বিএনপির ১৩ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিৰোভ চলাকালে দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি নেতাকমর্ীদের ওপর পুলিশ পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরম্নল ইসলাম বলেন, বিএনপি শানত্মিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের 'অন্যায়' কর্মকা-ের প্রতিবাদ করতে চায়। কিন্তু সরকার বিএনপিকে উস্কে দিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করছে। এর মাধ্যমে জিয়া আনত্মর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করায় সধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বৃহস্পতিবারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বিনা উস্কানিতে আমাদের শানত্মিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ অতর্কিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিপে করে। এতে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় এবং ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পল্টন থানায় আটকে রাখা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত শ্রমিক দলের রাশেদ ইমাম স্বাধীন, স্বপন, নাসির এবং ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মোঃ ইব্রাহিম, মোঃ দুলাল, মোঃ সবুজ, মজনু, মোঃ সেলিম, আব্দুল হামিদ, আসিক, ফিরোজ, মোঃ কাশেম, মীর মকর আলীর মুক্তির দাবি জানান। গাড়ি চাপায় নিহত এ্যাডভোকে নেসারউদ্দিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মির্জা ফখরম্নল দাবি করেন, পুলিশের কা-জ্ঞানহীন আচরণের কারণে একজন সাধারণ পথচারী নিহত হয়েছেন। নেসারউদ্দিনের পরিবারের জন্য সরকারের কাছে তিপূরণও দাবি করেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বিএনপিকে রাজপথে নামতে বাধ্য করছে। সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তৃতা করেন।
অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে নজরম্নল ইসলাম খানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বিএনপির ওপর সরকারের দমন- নিপীড়নের প্রতিবাদ করে বলেন, আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। তিনি সরকারের বিরম্নদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিএনপি নেতাকমর্ীদের আহ্বান জানান।
এদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহৎ আন্দোলনের জন্য বিএনপি ৪ দলীয় জোটকে আবারও সক্রিয় করে তুলতে চাইছে। এতদিন জোটগতভাবে আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ার বিষয়ে জামায়াতের তীব্র আগ্রহ থাকলেও যুদ্ধাপরাধী ইসু্যর কারণে বিএনপি আগ্রহ দেখায়নি। তবে শেষ পর্যনত্ম জামায়াতের পীড়াপীড়িতে বিএনপি চেয়ারপার্সন অনেকটা এ বিষয়ে নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপি সূত্রগুলো জানিয়েছে, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতের বিরম্নদ্ধে চিরম্ননি অভিযান নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে বেগম জিয়া সরাসরি কথা বলতে চান। পরে নিজামী বেগম জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে যান। বেগম জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় নিজামী জামায়াতের কোণঠাসা অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আহ্বান জানান। জামায়াতের পৰ থেকে দাবি করা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমিরের ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। শীঘ্র ৪ দলের সঙ্গে বৈঠকে যৌথ আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে বিএনপির বিৰোভ সমাবেশে যোগ দেয়া কর্মীরা হঠাৎ করেই গাড়ি ভাংচুর করতে শুরম্ন করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিচার্জ করে। এ সময় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় এক সাধারণ পথচারী নিহত হন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচীতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি আগামী ২৩ তারিখ সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করে। ২৪ তারিখ থেকে মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। বিএনপি জানিয়েছে এসব কর্মসূচীও তারা পালন করবে।

No comments

Powered by Blogger.