অভিযান সারাদেশে শিবির উৎখাতে 0 দেশের সকল শিৰা প্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার কাজে নেমেছে শিবির 0 ইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় by মামুন-অর-রশিদ

 মহাজোট সরকারকে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের রগকাটা বাহিনী শিবির রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র এবং সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নককে নির্মমভাবে হত্যা, হত্যার পর মরদেহ ম্যানহোলে ফেলা দিয়ে শিবির চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে।
এদিকে ফারম্নক হত্যার ৪৮ ঘণ্টা পেরম্ননোর আগেই এ হত্যা ও চার ছাত্রের রগকাটা মামলার অন্যতম আসামি হাফিজুর রহমান শাহীন তথ্য ফাঁসের শঙ্কায় সঙ্গী ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনায় জামায়াত দু'দিনের বিৰোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। সারাদেশে সকল শিৰা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা সৃষ্টির বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবির মাঠে নেমেছে বলে সংশিস্নষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে। শিবিরের সাবেক সভাপতি যার বাড়ি দেশের দৰিণাঞ্চলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন ও সূর্যসেন হলে তাদের যে পরিমাণ কর্মী রয়েছে তাতে যে কোন সময় বিশ্ববিদ্যালয় তারা অচল করে দিতে পারে। শিবির চাইলে সারাদেশের শিৰা প্রতিষ্ঠান অচল করে দেয়া তাদের পৰে কোন ব্যাপার নয়। এদিকে জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্রের বিরম্নদ্ধে সরকারও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, 'কোনক্রমেই দেশে রগকাটা সংস্কৃতি চলতে দেয়া হবে না।' স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেছেন, যেখানে শিবিরের ঘাঁটি আছে সেখানেই অভিযান চলবে এবং উৎখাত করা হবে শিবিরকে।
সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। শিৰা প্রতিষ্ঠানসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুরম্ন হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। কঠোরহসত্মে অপরাধী দমন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
ছাত্র রাজনীতির নামে হলে খুন, রগকাটা, হল দখল, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের বিরম্নদ্ধে শিৰা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অস্ত্র উদ্ধার ও কুখ্যাত অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা শুরম্ন করা হয়েছে। বিশেষ মহল পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্তের মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে পুুলিশের নাকের ডগায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রম্নপে প্রকাশ্যে সহিংস সংঘর্ষ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, ছাত্রদল সভাপতির আহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো শুরম্ন করা হয়। তারপর রাতের অন্ধকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, টেন্ডারবাজির ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ ও এক মেধাবী ছাত্রের নিহত হওয়ার ঘটনাকে আগের ঘটনার ধারাবাহিকতা মনে করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হল শাখার সভাপতিসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্রলীগের কর্মী খুন, খুনের পর লাশ ম্যানহোলে ফেলে গুম করা, হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া, নৃশংসতা ও তা-বলীলার ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শিৰাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র ক্যাডাররা তা-বলীলা চালানোর চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রসত্ম করতে মানুষজনের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র শিবিরের ক্যাডারদের দিয়ে শিৰাপ্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও শিৰাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নজরদারি করা শুরম্ন করেছে।
সাংগঠনিক আত্মপ্রকাশের পর শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় এ পর্যনত্ম ৬২টি হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এসব কোন হত্যাকা-েরই বিচার হয়নি। এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডারা রক্তের হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। লাশের রাজনীতিই এখন শিবিরের অবলম্বন হয়ে উঠেছে। আত্মরৰা ও রাজনৈতিক প্রতিপৰকে নির্মূলে তারা গুপ্তঘাতকের পথ বেছে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থান আর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলে কোর্টের রায়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার খবরেই জামায়াত_শিবিরের মধ্যে এ সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রতিরোধ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের প্রক্রিয়া প্রতিহত করতেই জামায়াত এখন শিবিরের 'রগকাটা' বাহিনী মাঠে নামিয়েছে। তাদের লৰ্য, সারাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে সরকারকে সেদিকে ব্যসত্ম রাখা। এ লৰ্যে জামায়াত-শিবিরচক্র নানান ছক তৈরি করছে।
উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যনত্মরীণ নিরাপত্তা কর্তৃপৰ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অধিভুক্ত ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেররিজম এ্যান্ড রেসপন্স টু টেররিজমের তৈরি ফাইলে ছাত্রশিবিরের কর্মকা-ে সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়াও শিবির আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে উলেস্নখ করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ঔদ্ধত্য সরকারের সামনে এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যত যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করে দিতেই শিবিরকে ব্যাপক বিধ্বংসী পরিকল্পনা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। এ পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায়ে সারাদেশে সকল শিৰাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়াই তাদের মূল লৰ্য। এ কারণে শিবির ক্যাডাররা রাতভর সশস্ত্র সংঘর্ষ, রাজনৈতিক প্রতিপৰকে হত্যা, রগকাটা আর টর্চার সেলে নাৎসি বর্বরতার আদলে নির্যাতনে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার মাধ্যমে বিশেষ পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হত্যা, লাশ গুম আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দুরভিসন্ধি করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সংঘর্ষে এযাবত অসংখ্য মেধাবী ছাত্রের প্রাণ ঝরে গেছে। গত ৩৯ বছরে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই শিবির হত্যা করেছে ৬২ ছাত্রকে। জোট আমলের পাঁচ বছরে সারাদেশে শিবির হত্যা করেছে ৫০ জনকে। সংশিস্নষ্ট বিষয়ে একটি গবেষণা সেল সূত্রে খুনের বীভৎস উন্মাদনায় শিবিরের নরহত্যার এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায় সুপ্রীমকোর্টে বহাল থাকার পরই জামায়াত ৰ্যাপা পাগলা হয়ে উঠেছে। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে জামায়াতের ধর্মের নামে রাজনীতিতে ব্যবসার আর কোন সুযোগ থাকবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরম্ন হতে যাচ্ছে। এতে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী জামায়াতের শীর্ষ নেতা থেকে অনেককেই আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড়াতে হবে। সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দু'চারজনকে ফাঁসির মালাও পরতে হতে পারে। যে কারণে জামায়াত নেতা এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা হত্যা-খুনের মিশনে নেমেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের শক্তিশালী অবস্থান থাকার কারণে তারা এখান থেকেই হত্যা প্রক্রিয়া শুরম্ন করেছে। তাদের দুঃসাহস ও স্পর্ধা এমন পর্যায় ছড়িয়ে গেছে, ৰমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেনকে (গণিতে ফার্স্ট কাস ফার্স্ট) নির্মমভাবে হত্যা করে। এর আগে শিবির ক্যাডাররাই বিগত জোট সরকারের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিৰক এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ইউনুস ও অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করে। প্রত্যৰদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সভাপতি সালেহীন অধ্যাপক তাহেরের বাসায় ঢুকে নির্মমভাবে তাঁকে হত্যার পর আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এখন নীরব কান্না আর নিঃশব্দ অশ্রম্ন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে অধ্যাপক তাহেরের পরিবারের সদস্যদের। অধ্যাপক তাহেরের অপরাধ ছিল তিনি শিবিরের চাপ মেনে শিবিরপ্রার্থীদের নিয়োগ দেননি।
১৯৪৭ সালে মওদুদী প্রথম এ সংগঠনের জন্ম দেন। ১৯৫৫ সালে এটি ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম ধারণ করে। '৭৫-এর আগস্ট ট্রাজেডির পর ১৯৭৭ জেনারেল জিয়ার আশীর্বাদে শিবিরের জন্ম হয়। এরপর বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য কায়েম করতে গিয়ে তারা 'রগকাটা' বাহিনীর 'খ্যাতি' (!) পায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে শিবির ক্যাডাররা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দখলের জন্য ছায়াঘেরা এ ক্যাম্পাসকে রণাঙ্গনে রূপ দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য কায়েমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন্ন কয়েকটি গ্রামে বেশ কয়েক শিবির ক্যাডার বিয়ে করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে শিবির পিছু হটে। ২০০০ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শিবির ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের আট নেতাকর্মীকে হত্যা করে। হত্যার রাজনীতিতে শিবিরের পারঙ্গমতা আজ নতুন নয়, শিবির ক্যাডাররা দুর্গম চর ও পাহাড়ী এলাকায় সশস্ত্র ট্রেনিং নেয়_ যা অনেকবার আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর নজরে ধরা পড়েছে। স্বাধীনতাউত্তর গত চার দশকে শিবির বিভিন্ন সময় লাশের রাজনীতিতে সহস্রাধিক ছাত্র-যুবককে হত্যা করেছে।
সশস্ত্র শিবির ক্যাডার ও তাদের 'রগকাটা' বাহিনীকে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে ষড়যন্ত্রে নামিয়েছে জামায়াত। এভাবে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে জামায়াতচক্র যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে আত্মরৰা এবং পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় কার্যকরকরণ প্রতিরোধ করতে চায়। প্রসঙ্গত পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধর্মীয় রাজনীতি রহিত হওয়ার শঙ্কা আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে মহাজোট সরকারের কঠোর অবস্থান জামায়াতকে এখন দিশেহারা করে তুলেছে। ধর্মীয় রাজনীতির অসত্মিত্ব রৰা এবং যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে জামায়াত '৭১-এর মতো হত্যা-ষড়যন্ত্রের পথ ধরেছে। জামায়াত এ যাত্রা নরহত্যার ভার দিয়েছে মৌলবাদী জঙ্গী ঘাতক বাংলা ভাইয়ের আদি সংগঠন শিবিরকে। বিপুল অস্ত্র সরবরাহ করে সশস্ত্র তৎপরতায় মাঠে নামানো হয়েছে শিবিরের দুর্ধর্ষ নরঘাতক বাহিনীকে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশেই শিবিরের 'রগকাটা' বাহিনী এবার মরণ কামড় দিয়ে মাঠে নেমেছে। শিবিরের রগকাটা বাহিনীর সর্বশেষ কতলের শিকার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেনকে।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জামায়াত-শিবিরের যুদ্ধাপরাধীচক্র। সর্বশেষ আগামী মার্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করার সরকারী ঘোষণায় যুদ্ধাপরাধীদের হৃদকম্পন শুরম্ন হয়। যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে দেশে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতকে সবচেয়ে বেশি খেসারত দিতে হবে। তাই জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে।
জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অদৃশ্য ইশারায় শিবির যে এ কাজে নেমেছে তার সাৰর বহন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। রাজশাহী থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ঘুরে আসার পরদিনই শিবিরের খুনী বাহিনী শাহ মখদুম (এসএম) হলের ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নককে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা চার ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দেয় এবং অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে আহত করে। সরকারী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এভাবে হত্যা, রগকাটা আর নির্যাতন করে আসলে তারা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এহেন ঔদ্ধত্য আর স্পর্ধায় সারাদেশের মানুষ হতবাক। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শিবিরের বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
এদিকে শিবিরের বর্বরতার বিরম্নদ্ধে প্রশাসনের অভিযানকে নির্যাতন হিসেবে অভিহিত করে রাজপথে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ঘোষণা, তাদের ওপর নির্যাতন কন্ধ এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে আজ শুক্রবার সকল মহানগরীতে বিােভ মিছিল করবে জামায়াত। এছাড়া আগামীকাল শনিবার জেলায় জেলায় বিােভ মিছিল কর্মসূচী পালন করা হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক জরম্নরী সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিলেও তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হসত্মৰেপ কামনা করেছেন মুজাহিদ। এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত এ কথা জানিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্রের ওপর পৈশাচিক তা-ব চালিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে লাশ ম্যানহোলে ফেলে বর্বরতা চালিয়েও মুজাহিদ বলেছিলেন, 'আমরা রগ কাটার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, শিবির রগকাটার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না।' কেবল তাই নয়, যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের পৈশাচিক তা-বের ধিক্কার জানাচ্ছে সমগ্র জাতি, যখন শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে তখন জামায়াত নেতাদের দাবি, 'ঐ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে আমরা এখনও জানি না। আর প্রমাণ ছাড়াই মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। একটি বিশেষ মহল ও তাদের সমর্থক কিছু মিডিয়া জামায়াত ও জামায়াতের নেতাদের বিরম্নদ্ধে ভয়ঙ্কর তথ্য-সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির রাজনৈতিক প্রতিপৰকে নির্মূলে বেছে নিয়েছে হত্যার পথ। সর্বশেষ সোমবার শেষ রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্র ফারম্নককে 'কতল' করে শিবির ক্যাডাররা। ফারম্নককে হত্যার পর তার মরদেহ ম্যানহোলে ফেলে দিয়ে নারকীয় উলস্নাসে মেতে ওঠে নরঘাতকের দল। বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতার পিছনে কাজ করছে ছাত্রলীগে ঢুকে পড়া ছদ্মবেশী শিবিরকর্মীরা। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে- দিনে ছাত্রলীগ এবং রাতে শিবিরকর্মী হয়ে যাওয়া ছদ্মবেশী শিবির ক্যাডাররা।

No comments

Powered by Blogger.