চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন- রুটিন কাজেই ব্যয় ৫০ কোটি টাকা! by হামিদ উল্লাহ

চলতি শুকনো মৌসুমে সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো মেরামত ও উন্নয়নের জন্য ৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে এসবের বেশির ভাগই নিয়মিত কাজ (রুটিন ওয়ার্ক) বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রয়েছে খাল-নালা খনন ও সংস্কারকাজে।
এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র দুই কোটি টাকা।
করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ৪০০ দলে ভাগ করে বিভিন্ন কাজের দরপত্র খোলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে কাজ শুরু করতে অন্তত এক মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে প্রকৌশলীরা ধারণা করেছেন। উন্নয়ন কাজের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সরকার সিটি করপোরেশনকে ৪০ কোটি টাকা দেবে বলে নগর কর্তৃপক্ষ আশা করছে। অবশিষ্ট টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খাল খননে গত বছর বরাদ্দ ছিল সাত কোটি টাকা। এর মধ্যে খননযন্ত্র দিয়ে খাল সংস্কারে পাঁচ কোটি টাকা এবং অলিগলির খাল-নালা খননের জন্য দুই কোটি টাকা খরচ হয়। অপেক্ষাকৃত সরু খাল ও নালা খননের ক্ষেত্রে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। এবার তাঁরা সে দায়িত্বে থাকছেন না। তা ছাড়া, গত বছর খাল খনন ও সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল নভেম্বর মাসে। এবার শুরু করতে জানুয়ারি নাগাদ লেগে যাবে।
করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততায় উন্নয়নকাজ হলে তাতে সবকিছুর সমন্বয় থাকে। দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করা শ্রমিকদের সার্বক্ষণিক কাজে নিয়োজিত রাখা খুবই কঠিন। এ কাজটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের করতে হয়।
সূত্রে জানা যায়, এ বছর খাল খননের ক্ষেত্রে কেবল খননযন্ত্র (এক্সকেভেটর) ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে নগরের বড় বড় খালগুলো থেকে মাটি ও আবর্জনা তোলা হবে। এ জন্য করপোরেশনের খননযন্ত্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে বাইরে থেকে এ যন্ত্র ভাড়া করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, খাল খনন খাতে গত বছর সাত কোটি এবং তার আগের বছর ১০ কোটি টাকা খরচ করে নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনোবারই প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা আসেনি। এতে মেয়র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, কর্মকর্তা এমনকি অনেক কাউন্সিলরের ওপর আস্থা হারিয়েছেন। এ জন্য খননযন্ত্র দিয়ে খাল-নালা পরিষ্কারের কাজটি মেয়র নিজেই তদারক করতে চান। তবে এতেও সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই।
জানা যায়, নিয়মিত উন্নয়নকাজের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হলেও অনেক অগ্রাধিকারমূলক কাজে হাত দিচ্ছে না নগর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ডিসি সড়ক ও কেবি আমান আলী সড়ক প্রশস্তকরণ, বহদ্দারহাট থেকে বলিরহাট হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন ইত্যাদি। নিয়মিত উন্নয়নকাজের বেশির ভাগই হচ্ছে বিভিন্ন সড়কের কার্পেটিং ও নালা নির্মাণ।
সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিসি সড়ক ও কেবি আমান আলী সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প এবং নতুন খাল খনন প্রকল্পের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের অর্থ শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
জানা গেছে, দুই বছর আগে ওই খালের প্রকল্প সরকারের কাছে পাঠানো হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা।
মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালখনন খুবই জরুরি। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

No comments

Powered by Blogger.