বোয়ালখালী বিএনপিতে তিন উপদল- হামলা-মামলার ঘটনায় হতাশ নেতা-কর্মীরা by মুহাম্মদ শামসুল হক

বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে আলাদা এবং দায়সারাভাবে। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী হামলা-মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন নেতা-কর্মীরা। এতে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
দলীয় কোন্দল আগামী যেকোনো নির্বাচনে এলাকায় দলের ভরাডুবির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলার পোপাদিয়া, কধুরখিল, শাকপুরা পশ্চিম গোমদণ্ডী ও সদর এলাকা ঘুরে বিএনপিকর্মী-সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী দিনে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান দুই উপদলের একটির নেপথ্যে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মনজুর মোর্শেদ খান। অন্যটির পেছনে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ। এ ছাড়া মোর্শেদ খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আহমেদ খলিল খানের কিছু সমর্থক একটি স্বতন্ত্র পক্ষ হিসেবে কাজ করছেন।
সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদ উল্লাহ চারদলীয় জোটের প্রার্থী পরিচয়ে বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে মোর্শেদ খান এরশাদ উল্লাহর বিরোধিতা করে মাহবুব আলমকে সমর্থন দেন। তাঁর সঙ্গে হাত মেলান দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা আহমদ খলিল খানও। নির্বাচনে বিজয়ী হন মহাজোটের প্রার্থী মাইনুদ্দিন খান বাদল। এতে মোর্শেদ খান ও এরশাদ উল্লাহ সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
এদিকে চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি সম্মেলন ছাড়াই শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হককে সভাপতি এবং মোস্তাক আহমদ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা বিএনপি এবং নয়টি ইউনিয়ন কমিটি (মোর্শেদ খানের সমর্থক) ঘোষণা করা করা হয়।
পাল্টা হিসেবে এপ্রিলে এরশাদ উল্লাহ-সমর্থিত মো. শওকত আলমকে আহ্বায়ক ও নূরুল করিমকে সদস্য সচিব করে উপজেলা বিএনপির আরেকটি কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দলের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচিকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতা এম কে আনোয়ার ও মোর্শেদ খানের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরশাদ উল্লাহ দল থেকে বহিস্কৃত হন। তিনিসহ তাঁর সমর্থক কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।
জানা যায়, ঢাকা চলো কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় গিয়ে আহমদ খলিল খান এলাকার কিছু কর্মীর হাতে লাঞ্ছিত হন। এরপর আজিজুল হকের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। তিনি আগের মতো এলাকায় আসেন না। তাঁর সমর্থক আবু তালেব ও আনোয়ার হোসেনসহ সমমনা কয়েকজন আলাদা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ভেতরে ভেতরে কাজ করছেন।
মোরশেদ খান-সমর্থক উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যেও রয়েছে অনৈক্য। গত রমজানে সারোয়াতলী ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার পার্টিতে যুবদল কর্মীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে মোস্তাক আহমদ খানকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে আজিজ সমর্থকেরা। ওই সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচ যুবদল কর্মী আহত হন। সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে মোস্তাক অনুসারীরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় তুলাতলী এলাকায় আজিজ অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
একই দিন বিকেলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয় পোপাদিয়া এলাকায়। এসব ঘটনায় মোরশেদ খান অনুসারী ১০ জন এবং এরশাদ উল্লাহ-সমর্থক ১২ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
দলে বিভক্তির কথা স্বীকার করে এরশাদ উল্লাহ-সমর্থক কমিটির আহ্বায়ক মো. শওকত আলম বলেন, ‘এলাকায় মোর্শেদ খান বা খলিল খানের গ্রুপের কোনো ভিত্তি নেই। দলীয় কর্মসূচিগুলো আমরাই নিয়মিত পালন করি। অন্যদিকে মোরশেদ খান গত পাঁচ বছরে এলাকায় এসেছেন মাত্র দুইবার, তাও ব্যক্তিগত দাওয়াতে।’
মোর্শেদ খান-সমর্থিত উপজেলা কমিটির সভাপতি আজিজুল হক বলেন, যেকোনো বড় দলে মতবিরোধ বা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে।
এখানেও সেরকম কিছু থাকলে তা মিটে যাবে। এরশাদ উল্লাহ সমর্থকদের আলাদা কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বহিষ্কৃত কোনো ব্যক্তি বা দু-চারজন মূল স্রোতের বাইরে তৎপরতা চালালেও তা দলে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
যোগাযোগ করা হলে এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও শহীদ জিয়া ও বিএনপির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি।
তাই শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়ে আমি কাজ করছি। এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমার প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রমাণ করেছেন।’

No comments

Powered by Blogger.