রূপসার শাঁখাশিল্পপল্লি বন্ধ হওয়ার পথে by কাজী আবদুল্লাহ

শঙ্খ আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ ও ভারত থেকে অবৈধ পথে তৈরি শাঁখা আসায় খুলনার রূপসা উপজেলার কাজদিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পপল্লি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা এক বছর ধরে শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
কাজদিয়া গ্রামের শঙ্খশিল্পে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার শাঁখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সামুদ্রিক প্রাণী শঙ্খ (একধরনের শামুক) কেটে ঘষে-মেজে ও নকশা করে হাতে পরার শাঁখা (চুড়ি) তৈরি করা হয়। ছোট-বড় ভেদে একটি শঙ্খের দাম পড়ে ১০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। আর প্রতিটি শঙ্খ দিয়ে দুই থেকে ছয়টি পর্যন্ত শাঁখা তৈরি করা যায়। প্রতি জোড়া শাঁখা এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে একসঙ্গে দু-তিন হাজার জোড়া শাঁখা নিয়ে যান।
ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বছর ধরে অবৈধ পথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরি শাঁখা এনে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করা শঙ্খ থেকে বানানো শাঁখার দাম বেশি হওয়ায় বাজারে এগুলোর চাহিদা কমে গেছে। ফলে শাঁখাশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন।
শাঁখারীপাড়ার ব্যবসায়ী সুভাষ চন্দ্র বর্ধণ (৫০) বলেন, ‘শত বছরের পুরোনো বাপ-দাদার ব্যবসা এখন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কা থেকে ৩৬ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিয়ে আমাদের শঙ্খ আনতি হচ্ছে। অন্যদিকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে শাঁখা আনে কম দামে বিক্রি করায় আমাগে শাঁখা বেশি দামে আর কেউ কিনতি চাচ্ছে না।’ আলোক দাস (৪৩) বলেন, ‘হিন্দুধর্মীয় রীতি রক্ষায় ভারত সরকার তাদের দেশে শঙ্খের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে। এখন আমাদের সরকার আমদানি শুল্কের বিষয়টি বিবেচনা না করলে আমাদের পথে বসতে হবে।’
দিজেন্দ্র নাথ দত্ত (৫০) বলেন, ‘বেচাবিক্রি না থাকায় এক বছর ধরে আমরা শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আমদানি করতি পারিনি।’ শঙ্খশ্রমিক শেফালী নন্দী বলেন, ‘ছোট্টবেলা থেকে আমরা শুধু শাঁখার কাজই জানি। এখন শাঁখার কাজ বন্ধ হয়ে গিলি পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতি হবেনে।’
চট্টগ্রাম থেকে ওই পাড়ায় শাঁখা কিনতে আসা বাবুল দাস জানান, আগে দুই মাস পর পর এখান থেকে দুই-আড়াই হাজার করে শাঁখা নিতেন। এখন ভারতের শাঁখা আসায় বেশি দাম দিয়ে কেউ মাল কিনতে চায় না। তাই ছয় মাস পর তিনি এখানে এসেছেন।
শঙ্খ আমদানি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজীব দাস বলেন, ‘শাঁখাশিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে প্রথমে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে শাঁখা আসা বন্ধ করতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.