বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস আজ উদ্বোধন

রাজধানীর যানজট নিরসনে আজ উদ্বোধন হচ্ছে বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস। এটি দেশের দীর্ঘতম ওভারপাস। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে যান চলাচলের জন্য ক্রসিংটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
ছয় লেন বিশিষ্ট এই ওভারপাসে দুটি লেন রাখা হয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) বাস চলাচলের জন্য। এদিকে নতুন বছরের মার্চেই খুলে দেয়া হচ্ছে ছয় কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওভারপাসটি উন্মুক্ত করা হলে মহাখালী থেকে গাজীপুর রোডে যানজটের মাত্রা কমে আসবে। নগরবাসীসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে। মিরপুর থেকে বিমানবন্দর আসতে সময় লাগবে ১০ মিনিটের কম।
উদ্বোধন উপলক্ষে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট হতে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত এয়ারপোর্ট সড়কের রেডিসন হোটেল গেট হতে বনানীস্থ নৌবাহিনী সদর দফতর গেট পর্যন্ত সড়কাংশে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
সড়ক ব্যবহারকারীদের এ সময় বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই ওভারপাসটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নগরীতে প্রতিদিন ৭২টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। প্রতিটি ট্রেন অতিক্রমেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেলগেট বন্ধ রাখতে হয়। এতে সৃষ্টি হয় যানজট। ওভারপাস নির্মাণের ফলে যানজট কমার পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারকারীদের সময়ের অপচয়ও রোধ হবে। তাছাড়া এই রুটে রাত-দিন সব সময় গাড়ির বাড়তি চাপের কারণে যানজটের মাত্রা বেশি থাকে। বনানী রেলক্রসিং থেকে মহাখালী আসতে বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয় দুই থেকে তিন ঘণ্টা। পাশাপাশি প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার আতঙ্ক তো রয়েছেই।
উল্লেখ্য, মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার প্রকল্পের আওতায় ওভারপাসটি নির্মিত হয়। ফ্লাইওভার এবং লিংক ব্রিজের কাজ আগামী মার্চে শেষ হবে। প্রায় ১ শত ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ শত মিটার দীর্ঘ ওভারপাসটি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি। ইতোপূর্বে ২৫ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। নির্মাণের দিক থেকে এটি একটি পিসি গার্ডার ধরনের ওভারপাস। প্রায় ২২.৫২ মিটার প্রশস্ত ওভারপাসটি ৬ লেন বিশিষ্ট। এতে ২ শত ৬৮টি পাইল, ৩৩টি পিয়ার এবং ১শ’ ৭৩টি গার্ডার রয়েছে। ওভারপাসের সঙ্গে লিংক ব্রিজ সংযুক্ত হওয়ায় বনানীবাসী লিংক ব্রিজ ও ফ্লাইওভারের মাধ্যমে মাত্র তিন মিনিটে মিরপুর পৌঁছতে পারবে। পূর্বে ১১ কি.মি. ঘুরে যেতে হতো। এখন মাত্র ৩ কি.মি. দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে মিরপুর যেতে। বিমানবন্দর হতে সদরঘাট পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের জন্য ওভারপাসটিতে দুই-লেন সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা হয় বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস। একটি আন্ডারপাসসহ দুটি ইউলুপ। ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুন মাসে। পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে ডিসেম্বরে নেয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সময়মতো ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে সেনাবাহিনীর ১৬ ইজ্ঞিনিয়ারিং কনস্ট্রকশন ব্যাটেলিয়ান। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সাব কন্ট্রাক হিসেবে মীর আখতার ও আবদুল মোনেম নামে এ দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প এবং মিরপুর জিয়াকলোনি ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল আবু সাঈদ মোঃ মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, ফ্লাইওভারটি এয়ারপোর্ট রোড থেকে বনানী ও মাটিকাটা হয়ে মিরপুর নূর মসজিদে গিয়ে শেষ হবে। বনানী লেবেলক্রসিং থেকে ওভারপাসটি ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হবে। বনানী রেলক্রসিং ওভারপাসটি উদ্বোধন শেষে আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো ফ্লাইওভারটির কাজ শেষ করা। তিনি জানান, আগামী মার্চের মধ্যে সার্বিক কাজ শেষ হয়ে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ে পুরো কাজ শেষ হয়নি।
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল এই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে পাস হয়। একই বছরের ১৯ মে নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয় ২০১০ সালের ১২ জুলাই। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১১ বছরের ২৫ জানুয়ারি। ফ্লাইওভারের স্প্যানস থাকছে ৭১টি, আর সি-বক্স গার্ডার স্পেনস ১৪টি, র‌্যাম্প ৪টি, খুঁটি ৮৪টি, কলাম ১৩টি, পিসি গার্ডার ৪৭৪টি। এছাড়াও ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে এক হাজার ৮৭৪ দশমিক ৩৬ মিটার, ওভার পাশের দৈর্ঘ্য ৮১৪ দশমিক ৪৫ মিটার, লিংক ব্রিজের দৈর্ঘ্য হবে ৭৯৩ দশমিক ৬০ মিটার।
নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। যানজটের কারণে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। পরিকল্পিত উপায়ে উদ্যোগ নিয়ে এই যানজট সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাস্তবতা হলো যানজট থেকে মানুষ মুক্তি চায়। আমি মনে করি-বনানী রেলক্রসিং ওভার পাস ও ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন হলে মানুষ যানজটের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলে মহাখালী থেকে এয়ারপোর্টের দিকে যাতায়াত করা সকল যান্ত্রিক পরিবহন ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে। মহাখালী এলাকা থেকে যারা মিরপুরের উদ্দেশ্যে যাবেন তাঁদের জন্য এই ফ্লাইওভারটি বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করবে। এখন বনানী হয়ে স্টাফ রোডসহ ক্যান্টনমেন্ট দিয়ে মিরপুর যেতে চাইলে প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। তাছাড়া মিরপুর ১০, ১১, ১২সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের নানা দুর্ভোগ সহ্য করে বিমানবন্দর কিংবা মহাখালী আসতে হয়। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলে এই জটিলতার অবসান হবে।

No comments

Powered by Blogger.