যানজটে স্থবির রাজধানী

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার গণসংযোগ ও ৬টি পথসভার কারণে বুধবার দুপুরের আগে থেকেই যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী। রাস্তায় আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আতঙ্কে দুপুরের আগেই নগরীতে গণপরিবহন চলাচল কমতে থাকে।
এ কারণে জনদুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে। অতিরিক্ত ভাড়া আর পথে পথে দুর্ভোগ সহ্য করে ঘরে ফিরেছেন নগরবাসী। রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের দাবি, জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণের।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় গাবতলীতে পথসভা দিয়ে রাজধানীতে দিনব্যাপী গণসংযোগ শুরু করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বিরোধী দলের কর্মসূচী বলা হলেও শেষ পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে প্রতিটি পথসভায়। সভার নামে জামায়াত-শিবির অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মিছিল সহ তাদের মুক্তির দাবিতে সেøাগান দেয়। নিজামী, সাঈদী, কাদের মোল্লা, গোলাম আজমসহ অন্যান্য নেতাদের নির্দোষ দাবি করে প্লেকার্ড, লিফলেট প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে পথসভাগুলো পরিণত হয় জনসভায়। সকাল থেকেই আশপাশের এলাকার বিএনপিকর্মী ও সমর্থকরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসতে শুরু করলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় আমিনবাজার সেতু থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দিকেও যানজট সৃষ্টি হয়। দিনাজপুরগামী শ্যামলী পরিবহনের চালক মানিক জানালেন, দেড় ঘণ্টার বেশি সময় মিছিলের কারণে আটকে থাকতে হচ্ছে। কখন এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে কেউ যানে না। ট্রাফিক পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বেলা সাড়ে ১২টায় কাওরানবাজারে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এর আগে থেকেই ফার্মগেট-কাওরানবাজারে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে মতিঝিল থেকে কাওরানবাজার-মহাখালী ছাড়িয়ে যানজটের পরিধি বাড়তে থাকে। দুপুর দেড়টায় খালেদা জিয়া পথসভা শেষ করে চলে যাওয়ার পর ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় যানজটে রাস্তায় আটকে থাকতে হয় পরিবহন সহ যাত্রীদের। এ বিষয়ে কারওয়ানবাজারে ট্রাফিকের দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রহিদুল ইসলাম বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার পথসভায় যেন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আমরা তার গাড়িবহর যাওয়ার পথ খোলা রেখেছি। এছাড়া তার অবস্থানকালে সভাস্থলের আশপাশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে।
জনসংযোগের সময় রাজধানীর যান ব্যবস্থাপনা নিয়ে পুলিশের এডিসি (উত্তর) বিধান ত্রিপুরা বলেন, আজকে রাস্তায় গাড়ি কম। যানজটের সময় অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাওরানবাজারে পথসভা শেষে এফডিসি সড়ক, মগবাজার মোড়, রমনা থানা সড়ক, বেইলি রোড সড়ক, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট হয়ে কার্জন হল সড়ক, নগরভবন, গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার সড়ক, নর্থ সাউথ সড়ক, রায়সাহেব বাজার সড়ক হয়ে ধোলাইখালে পথসভায় যান খালেদা জিয়া। ধোলাইখালের পথ-সভাকে কেন্দ্র করে অচল হয়ে পড়ে পুরনো ঢাকা। দুপুরে আগে থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে সভাস্থলের দিকে। রাস্তা আটকে চলে মিছিল।
সেখান থেকে দয়াগঞ্জ সড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে পথসভা করেন বিরোধীদলীয় নেতা। সেখান থেকে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, বৌদ্ধ মন্দির হয়ে সবুজবাগের বালুর মাঠ শেষে বাড্ডার ভাটারা মাঠে সর্বশেষ পথ সভায় বক্তব্য দেন। এর মধ্য দিয়ে তার দিনব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
রাজধানীতে দিনব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে ছোট বড় সবকটি রাস্তায় সকাল থেকে ছিল তীব্র যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। তেমনি দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। অফিস ছুটির পর যানবাহন পাওয়ার বিড়ম্বনার পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তায় যানজট লেগেই ছিল। তবে রিকশা চালকদের জন্য ছিল সুদিন। বলা হয় কারও পোষ মাস কারও ভাদ্র মাস। দুই থেকে তিনগুণ ভাড়ায় বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হয়েছে রিকশা যোগে। রাত ১০ টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় যানজট লেগেই ছিল।

No comments

Powered by Blogger.