টি-টোয়েন্টি- ভারতে জয়ে শুরু পাকিস্তানের

ম্যাচ শুরুর আগে টসের পর কথা বলার সময় নিজের একাদশই ভুলে গেলেন। ম্যাচ শেষেও কথা বলতে গিয়ে ‘তো তো তো তো’ করে কথা জড়িয়ে গেল, ফের শুরু করলেন ক্ষমা চেয়ে নিয়ে। উত্তেজনা, সবই উত্তেজনা।
অন্তহীন চাপ। মোহাম্মদ হাফিজের কোনো দোষ নেই!
উত্তেজনা আর চাপের মাঝখানে পড়েই বিনা উইকেটে ৭৭ তোলা ভারত পরের ৫৬ তুলতেই হারিয়ে ফেলল ৯ উইকেট। চাপের মুখে পড়েই শেষ তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান দরকার, হাতে ৭ উইকেট—এমন সহজ সমীকরণটাকেও পাকিস্তান কঠিন বানিয়ে ফেলল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিতল প্রতিটা বলে দর্শকদের উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিয়ে, ৫ উইকেটে।
বড়দিন ছিল, পাকিস্তানের জন্য অবশ্য পরশু দিনটা ছিল আরও বড় এক দিন। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মবার্ষিকী। জয়টা তাই দেশবাসীকে উৎসর্গ করলেন হাফিজ, ‘এটা দুর্দান্ত প্রচেষ্টার ফসল। আমরা সিরিজের শুরুটা খুব ভালো করতে চেয়েছিলাম। আমাদের জন্য ইরফান ছিল একটা সারপ্রাইজ প্যাকেজ। আমরা জানতাম, আমাদের বোলিং আক্রমণ অনেক ভালো। যত রানের মধ্যে ভারতকে বেঁধে ফেলতে চেয়েছি, বোলাররা ওই রানের মধ্যেই আটকে ফেলেছে। নতুন বলের পর স্পিনাররা আক্রমণে আসার পর আমরা জানতাম, আমাদের সুযোগ আছে। ঠিক সময়ে আমরা ঝুঁকিটা নিতে পেরেছি। এই জয় পুরো দেশের জন্য একটা উপহার। দেশে কায়েদে আজম দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে।’
নিজে ম্যাচসেরা হয়েছেন। তার পরও হাফিজ সব কৃতিত্ব দিচ্ছেন সতীর্থদের। আলাদা করে ইরফানের কথা বলেছেন। সাত ফুট উচ্চতার এই ফাস্ট বোলার এর আগে দুটো ওয়ানডে খেললেও কালই প্রথম নামেন টি-টোয়েন্টিতে। কালই আসলে প্রথম সবাই চিনল তাঁকে। উচ্চতার কারণেই মূলত ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু পরশু বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুধু উচ্চতাই তাঁর সম্বল নয়; গতি আর বাউন্স কাজে লাগিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংও করতে পারেন।
ম্যাচসেরা না হলেও ম্যাচের নায়ক আসলে ছিলেন শোয়েব মালিক। সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করার পর এই প্রথম ভারতে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন। অপরাজিত ৫৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। ছক্কা মেরে জিতিয়ে দিয়েছেন দলকে। জয়ী দলের মধ্যে ছিলেন না। তবে পরশুর রাতটি ছিল কিন্তু ইরফানেরই মতো আরেক অভিষিক্ত পেসারের। মালিক স্বীকারও করেছেন, ‘ওদের অভিষিক্ত বোলারটি যখন বল করছিল, আমরা খুব ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি অবশ্য ওর নাম মনে করতে পারছি না, তবে ও শুরুতেই বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে আমাদের চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।’
মালিক নাম মনে করতে পারেননি! নামটা অবশ্য একটু কঠিন—ভুবনেশ্বর কুমার। দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাঁর সেই শুরুর ধাক্কাতেই ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। পুরো ম্যাচে এই ভুবনেশ্বরকেই প্রাপ্তি মনে করছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, ‘আমাদের বেশ কিছু দুর্দান্ত উঠতি ফাস্ট বোলার আছে। ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারলে এরা আমাদের জন্য বড় সম্পদ হবে। ভুবনেশ্বর দুই দিকেই সুইং করাতে পারে। ও খুবই কার্যকর ছিল। উইকেটের সাহায্য পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু ও সঠিক লাইন-লেংথেও বল করেছে।’ ভুবনেশ্বরের প্রশংসা করেছেন কপিল দেবও। অনেক দিন তিনি নাকি এমন সুইং বোলার দেখেননি!
এই ম্যাচের পরাজয়ের দায়ভার ধোনি চাপিয়েছেন মিডল অর্ডারের ওপর, ‘আমাদের আরও বেশি রান করা উচিত ছিল। ওপেনাররা দারুণ শুরু এনে দিলেও সেটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোটা আমাদের খুবই ক্ষতি করেছে। আর ১০-১৫ রান বেশি করলেই আমরা জিততাম।’
ধোনি অবশ্য আক্ষেপ মুছে ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন দ্রুতই। আগামীকালই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.