স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পর্কে সজাগ থাকুন- সশস্ত্রবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

 মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধীদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের অপকর্মের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।
বুধবার চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে ৬৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্স ও ৩৮তম স্পেশাল কোর্সের ক্যাডেটদের পাসিং আউট কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উপরিউক্ত আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ এবং সেরা ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এরপর তিনি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে নিহতদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন।
সফলতার সঙ্গে বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্স ও স্পেশাল কোর্স সম্পন্ন করে এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হয়েছেন ৭৫ জন ক্যাডেট। এছাড়া ফিলিস্তিন সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেছেন ১০ জন ক্যাডেট।
ক্যাডেটদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তোমাদের দায়িত্ব। তাই তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবসময় ধারণ ও দেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের অপকর্মের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়ে তোমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করছ। চৌকস আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে তোমরা আজ বৃহত্তর কর্মজীবনে পদার্পণ করতে যাচ্ছ। আশা করি তোমরা সকলেই জনগণের সুখদুঃখ ও হাসিকান্নার সমান অংশীদার হবে।’
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতর জানায়, এ বছর সফলতার সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৭৫ জন ও ফিলিস্তিন সেনাবাহিনীর ১০ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের ৬৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ৫৭ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা এবং ৩৮তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সে ১১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা ক্যাডেট রয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন তারেক জুবায়ের। সামরিক বিষয়ে অনন্য কৃতিত্বের জন্য ‘সেনাপ্রধানের স্বর্ণপদক’ লাভ করেন মোঃ হাবিবুল্লাহ খান। বিভিন্ন আন্তঃবাহিনী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মোস্তফা কোম্পানিকে শীতকালীন টার্মের জন্য বিএমএ পতাকা প্রদান করা হয়। পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন এবং পিতামাতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ বাহিনী মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছুলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, আর্মি ট্রেনিংয়ের ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল একেএম মুজাহিদ উদ্দিন, চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার ও ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সামসুজ্জামান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকাস্থ বৈদেশিক মিশনের কূটনৈতিক এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের অভিভাবকগণ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
গার্ডার ধসে নিহত পরিবারকে আর্থিক অনুদান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। নিহতদের ৯টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে আহতদের প্রতি পরিবারকে প্রদান করা হবে ৫০ হাজার টাকা করে।
চউক চেয়ারম্যান আরও জানান, গার্ডার ধসে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অফিসিয়ালি ১২ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। চউকের পক্ষ থেকেও নিহত প্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকা এবং অঙ্গহানি হওয়াদের ১ লাখ টাকা করে ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই তাঁর নিজের (চউক চেয়ারম্যান) পারিবারিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকেও পরিবারপ্রতি ২ লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন চউক চেয়ারম্যান।

No comments

Powered by Blogger.