ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে, নীল আকাশ আর সবুজের হাতছানি- নবরূপে হাতিরঝিল বেগুনবাড়ী by মোরসালিন মিজান

 একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেছে আসলেই। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাছে গাছে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী এলাকা। খুব শান্ত জলও আছে। গাঁয়ের ছোট্ট নদীটির মতো বইছে।
এ নদীর গতি রোধ করার কেউ নেই। বরং উপভোগ করার অগণিত মানুষ। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন তারা। আর শিশু- কিশোরা যেন মেপে নিচ্ছে পৃথিবীর কতো দৈর্ঘ্য! এদিকে ছুটছে। ওদিকে ছুটছে। তবু ক্লান্তি নেই। সব মিলিয়ে অসাধারণ ব্যাপার। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চমৎকার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ করছে সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স। বর্তমানে তা শেষ পর্যায়ে। আগামী ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলা বাহুল্য, কিছু দিন আগেও পুরো এলাকাটি এক রকম পরিত্যক্ত ছিল। স্থলভূমি জলভূমি সবই ছিল দখলে। দিন রাত চলত অপকর্ম। সন্ত্রাস। আর তারপর আজকের চেহারা। কী সেই চেহারা তা দেখতে বুধবার সেখানে গিয়ে কেবল অবাকই হতে হয়। এ যেন অন্য কোন ঢাকা। এ ঢাকায় পুরোটা আকাশ দেখা যায়! হাতছানি দিয়ে ডাকে সবুজ। চমৎকার সড়কপথ। লেক। স্বচ্ছ জল। দারুণ নজরকাড়া সেতু। একেকটির একেক চেহারা। দুই পাশে হরেক রঙের বাতি। পুরো এলাকায় মোট বাতির সংখ্যা প্রায় এক হাজার। সবগুলোই এলইডি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মোট পরিমাণ ৩০১ একর। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পরিমাণ ছিল ১৪২ দশমিক ৯৯৮৩ একর। খাস জমি ছিল ৬৯ দশমিক ১৬৩১ একর। আর আগের অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ ৭৯ দশমিক ৮৯৪৩ একর। প্রকল্প এলাকার মধ্যে সার্ভিসওয়ে রয়েছে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে আছে ৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের বেগুনবাড়ী খাল সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ সড়ক ছাড়াও খালের উত্তর দিকে করা হয়েছে চমৎকার ওয়াকওয়ে। দক্ষিণে রয়েছে দুই লেনবিশিষ্ট সড়ক। বেগুনবাড়ী খালের ওপর চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরে সুদৃশ্য ২ টি ভায়াডাক্ট ও ৪টি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাইদ মোহাম্মদ মাসুদ জনকণ্ঠকে বলেন, স্পেশাল ওয়ার্ক অপারেশনের অধীনে ১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটিলিয়ান (ইসিবি) এই কাজ করছে। তবে নানা কারণে কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কাজ করতে গিয়ে বহু মামলারও মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। এর পরও আন্তরিকতা নিয়ে আমরা কাজটি করার চেষ্টা করেছি। আর তাই প্রকল্পটি আজকের রূপ পেয়েছে। তিনি বলেন, রাজধানীর মানুষের বিনোদনের বড় একটি জায়গা হবে হাতিরঝিল। সেভাবেই সব কাজ করা হয়েছে। প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তরুণ ক্যাপ্টেন মোঃ আনিসুর রহমান। তারও মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। বললেন, প্রায় শেষ করে এনেছি আমরা। তাই খুব ভাল লাগছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগবে সাধারণ মানুষের। এটাই বড় কথা।

No comments

Powered by Blogger.